হত্যাকারী কীভাবে নিজের বিচার করবে : আনু মুহাম্মদ

হত্যাকারী কীভাবে নিজের বিচার করবে: আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ | ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় সংঘর্ষের শুরু; আন্দোলনকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলা ও গুলি; পুলিশ- র‍্যাব-বিজিবির টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও বুলেটে নিহত দেড় শতাধিক ও আহত কয়েক হাজার।

কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয়েছে গণআন্দোলনে। শিক্ষার্থী ছাড়াও আন্দোলনে এখন যোগ দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

একটি মাত্র দাবি নিয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলন কেন এমন রূপ পেলো; সরকার, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা; ইতিহাসসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সঙ্গে আলাপচারিতায়।

দ্য ডেইলি স্টার: কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের এমন আচরণের কারণ কী হতে পারে?

আনু মুহাম্মদ: কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা থাকলে, ক্ষমতার দম্ভ থাকলে দেখার চোখটা চলে যায়। তখন মনে হয় আমি যা করবো সেটাই ঠিক এবং ধমক দিলেই সব চুপ হয়ে যাবে। এই সংস্কৃতিটা স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতি।

ডেইলি স্টার: স্বৈরতান্ত্রিক সংস্কৃতি আমাদের এখানে নতুন না, বহু বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। একাত্তরের পর এভাবে সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা আপনি কবে দেখেছেন প্রথম?

আনু মুহাম্মদ: গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ বা এমন আওয়াজ আমরা আগেও শুনেছি। কিন্তু, প্রত্যক্ষভাবে এভাবে একের পর এক গুলি করা এবং এত প্রাণহানী; এমন নির্বিচার গুলি করা যে বাসার বারান্দায়, ছাদে, ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মানুষ মারা যাবে; আন্দোলনকারীরা তো বটেই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন শ্রমজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পেশাজীবী মানুষও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এমন নির্বিচারে গুলির ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে কখনোই ঘটেনি।

আমরা তিনটি উন্নয়ন দশকের স্বৈতান্ত্রিক শাসন দেখেছি—আইয়ুব খান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং তাদেরকে অতিক্রম করে চলা উন্নয়নের দেড় দশকে শেখ হাসিনা।

তিন দশকেই অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক অনেক আন্দোলন হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ওপর জুলুম হয়েছে। কিন্তু এবারেরটা সকল ইতিহাস অতিক্রম করেছে, এমনকি এই সরকারের এবং অন্যান্য সরকারের সকল অতীত রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এইমাত্রায় হত্যাকাণ্ড আগে কখনো হয়নি।

এইমাত্রায় মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা আগে কখনো হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকে ঢাল হিসেবে নিয়ে খুন, লুটপাট, বিদেশে সম্পদ পাচার, জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি এবং এইমাত্রায় শিশু-কিশোরদের হত্যা করা, তাদের ওপর বর্বর নিপীড়ন আগে কখনো করা হয়নি।

এ কারণেই বলি, মুক্তিযুদ্ধকে দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং পুনরায় জনগণের হাতে নিয়ে আসতে হবে।

ডেইলি স্টার: সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তৃতীয়পক্ষ—বিএনপি, জামায়াত, শিবির—এসব ধ্বংসযজ্ঞ করছে, সরকার কিছু করছে না।

আনু মুহাম্মদ: সরকারের যুক্তির এই ধরন নতুন কিছু না। যেকোনো আন্দোলনে এটাই বলা হয়। ২০১০ সাল থেকে এটা শুনে আসছি। এটাকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মানুষের অধিকারের আন্দোলন, এমনকি শ্রমিকের মজুরির দাবিতে আন্দোলনেও এই কথা বলা হয়। নারীদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও এটা শুনেছি। সুন্দরবন আন্দোলন, তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন জনস্বার্থবিরোধী চুক্তির সময়ও আমরা এগুলো শুনেছি।

এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তারা বিকৃত করে এবং অপকর্মের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারনাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন সব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নাম ব্যবহার করা হয়, যাতে বিএনপি-জামায়াতের আরও গৌরব বাড়ে। যে কাজ তারা করেনি, সেখানেও তাদের নাম আসে। তাতে মনে হয় যে বিএনপি-জামায়াত গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে, জনগণের সঙ্গে আছে। এভাবে তাদের নামে এক ধরনের প্রশংসাসূচক কথা ছড়ায় সরকার। জামায়াত-বিএনপিকে যতটা কৃতিত্ব সরকার দেয়, ততটা কৃতিত্বের দাবিদার তারা না।

ডেইলি স্টার: আইনজীবী মানজুর আল মতিন শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করায় তাকে জামায়াত-শিবির বলা হচ্ছে। এসব করে সরকার ও দেশের উপকার কী?

আনু মুহাম্মদ: এগুলো আত্মঘাতী কথা। কারণ, মানজুর আল মতিন যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলো সবাই শুনেছেন। সেগুলো খুবই যুক্তিযুক্ত ও তথ্যভিত্তিক কথা। তাকে যখন জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, তখন সরকারের যারা এই ট্যাগ দিচ্ছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তারা নৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে এই ট্যাগগুলো ব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এটা আত্মঘাতী আত্মরক্ষার চেষ্টা। এতে করে তারা আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, গ্রহণযোগ্যতা আরও হারাচ্ছে।

ডেইলি স্টার: জীবনের দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করলেন; আন্দোলন-সংগ্রামেও আছেন। আজ আবু সাঈদকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সমকাল। সেখানে বলা হয়েছে, আবু সাঈদ যখন পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন পুলিশের সঙ্গে ছিল বেরোবি প্রশাসন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী, কয়েকজন শিক্ষক এবং তারাও পুলিশকে গুলি করতে বলেছে। সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১০ কিলোমিটার দূরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে রিকশায় করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার জন্য গাড়িও দেয়নি। ভিসির বাড়িতে হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে, কিন্তু সেখানে হত্যাকাণ্ডের কথা নেই। একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার নানা ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হলো—শিক্ষক হিসেবে এটাকে কীভাবে দেখেন?

আনু মুহাম্মদ: শিক্ষক হিসেবে এটা আমার জন্য খুবই লজ্জার। এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিশেষত গত এক দশকের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাখতে চায় না, ক্ষমতার একটা ভিত্তি হিসেবে তৈরি করতে চায়। এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্তান ও মেরুদণ্ডহীনদের দাপটের মধ্যে রাখার প্রচেষ্টা ছিল সরকারের। সেটারই ফলাফল হলো এমন একটি নির্মম চেহারা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে এমন লোকদের বসানো হচ্ছে, যারা মেরুদণ্ডহীন, আত্মসম্মানবোধহীন এবং পুরোপুরি দাসের ভূমিকা পালন করে দুর্নীতি-নিপীড়নে সহযোগিতা করতে পারে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখছি, এই ধরনের লোকগুলোকে বাছাই করে প্রশাসনে বসানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ উঠুক কিছুই হয় না, বরং অভিযোগকারীর ওপর সরকার ক্ষুব্ধ হয় এবং অভিযুক্তদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। জাহাঙ্গীরনগর, বেগম রোকেয়াসহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এর প্রমাণ দেখেছি।

একই সঙ্গে এই প্রশাসনের নেতৃত্বেই ওই ধরনের শিক্ষক নিয়োগ হয়, যারা তাদেরকে এমন ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। তাদের কর্তৃত্বে, তাদের ভূমিকায় হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্য তৈরি হয়—যাতে কোনো শিক্ষার্থী কোনো কথা বলতে না পারে, কোনো ভিন্নমত তৈরি না হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাস্তান ও মেরুদণ্ডহীনদের দাপটের মধ্যে রাখার প্রচেষ্টা ছিল সরকারের। সেটারই ফলাফল হলো এমন একটি নির্মম চেহারা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে বাইরের মাস্তানরা এসে ভিসির বাসার ভেতরে আক্রমণ করেছে। ভিসি তখনো দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে আছে। এই পরিস্থিতিটা সরকারের তৈরি। সরকার কীভাবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, সকল প্রতিষ্ঠান নষ্ট করেছে তার নজির এটা।

ডেইলি স্টার: এর বাইরেও শিক্ষকদের আরেকটি চিত্র আছে—যদিও সেটা পরিসরে ছোট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ কলার ধরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, মুখ চেপে ধরছে, আটক করছে—সংখ্যায় কম হলেও কিছু শিক্ষক তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এসব ঘটনায় এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা শিক্ষকদের গায়েও হাত দিচ্ছেন। একটি ঘটনায় দেখলাম এক পুলিশ সদস্য একজন শিক্ষককে বলছেন, আপনি রাজাকার, আর নিজেকে দাবি করছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণকে কীভাবে দেখছেন?

আনু মুহাম্মদ: পুলিশ বাহিনীকে পুরোই দলীয় বাহিনী হিসেবে দাড় করানো হয়েছে। পুলিশকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একটি বাহিনী হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা অনেকের নাম জানি, অনেকের বিষয়ে কথা হয়েছে, যারা আগে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী ছিল। রাজনৈতিকভাবেই এটাকে দাড় করানো হয়েছে যে পুলিশে উন্নতি করতে হলে, টিকে থাকতে হলে তাদের কী করতে হবে। বিশেষত, পদোন্নতি পেতে হলে তাকে মাস্তানি করতে হবে এবং দলীয় ক্যাডার হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে। আবার যারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে, তারা শাস্তি পাচ্ছে—এমন উদাহরণ তৈরি হয়েছে।

এভাবে পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যাদেরকে সামনে আনা হয়েছে, তাদের ট্রেনিংটাই এমন যে সরকারের ইঙ্গিত অনুযায়ী তারা কাজ করবে। যারা আন্দোলনে সহযোগিতা করছে—শিক্ষার্থী বা শিক্ষক—তাদেরকে রাজাকার ট্যাগ লাগানো, এটা সরকারের ভাষা। সেটাই পুলিশের মুখে শুনছি। পুলিশের মুখে সরকারের ভাষা আসার কথা না। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি—তারা তো রাষ্ট্রীয় বাহিনী। তাদের কারো মুখেই সরকারের ভাষা আসার কথা না। কিন্তু এরা সরকারের দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সেটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের পতনের বড় ধরনের দৃষ্টান্ত।

ডেইলি স্টার: সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও এখন কেন আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় সরকার। বিষয় দুটিকে কীভাবে দেখছেন?

আনু মুহাম্মদ: প্রথম কথা হলো, কোটা সংস্কারের বিষয়টি সরকার যথাসময়ে সমাধান করেনি। যথাসময়ে সমাধান না করার কারণে এখন বিষয়টি আর কেবলমাত্র কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের একটি দাবি ছিল। সেটা পূরণ না করে সরকার আরও যে ভয়ংকর কাজগুলো করেছে, এখনকার প্রতিবাদ সেটার সূত্র ধরে।

তিন বছরের শিশু থেকে ৭০ বছর বয়সী পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিক ঘরের মধ্যে, বারান্দায়, ছাদে, বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হলো, গুলিবিদ্ধ হলো এবং ইতিহাসের জঘণ্য মাত্রার নারকীয় ও নৃশংস নির্যাতন করলো সরকার। এর একটা বিচার হতে হবে না?

১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাগুলোতে তিন লাখের বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি করা আছে। এমন একটি ফ্যাসিবাদী নির্যাতন এবং রক্তাক্ত অধ্যায় তৈরি করলো সরকার। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে এত মানুষের হত্যাকাণ্ড—এটা সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পৃথিবীতে তো আমরা অনেক স্বৈতন্ত্রবিরোধী লড়াইও দেখেছি। কিন্তু এমন ঘটনা খুব কম। এটার তো বিচার হতে হবে এবং এর দায় সরকারকে নিতে হবে।

এখন এই আন্দোলনে শুধু শিক্ষার্থীরা নেই—নিহত-আহত মানুষের পরিবারের সদস্যরা আছে; যেসব শিক্ষক দায় অনুভব করছেন তারা আছেন; অনেক শ্রমজীবী মানুষ নিহত হয়েছেন, তারা আছেন; নারীরা আছেন; এটাতো এখন আর কোটা সংস্কারের আন্দোলন নেই এখন। এটা এখন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। সবার দাবি হচ্ছে, বাংলাদেশকে এমন একটি ফ্যাসিবাদী অবস্থানে রাখা যাবে না, গণতান্ত্রিক অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে।

আলোচনায় বসার বিষয়ে বলবো, এখন আলোচনার কী আছে? আলোচনার সময় ছিল ১৪ জুলাই। তখন বসলে, কোটা সংস্কার নিয়ে কথা বললেই ফয়সালা হয়ে যেতো। সরকার সেটা করেনি। তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বাজে ধরনের কথা বলেছে, হুমকি দিয়েছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে, পুলিশকে পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে। সবমিলিয়ে সবকিছু অন্য রকম করে ফেলেছে।

প্রথমত, জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় সরকারকেই নিতে হবে। এখনকার হত্যাকাণ্ডগুলোও জুলাইয়ে গণনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে আজ জুলাইয়ের ৩৪ তারিখ। এই জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে এর সমাধানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই সরকার নিজেরাই যেখানে দায়ী, সেখানে তারাই এর বিচার কীভাবে করবে, আমি তার রাস্তা দেখি না। হত্যাকারী নিজেই কীভাবে বিচার করবে? এখন এটা আর জাতীয় ইস্যুও নেই, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কাজেই আন্দোলনকারীদের আটকে বা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এগুলোর সমাধান হবে না। এর জন্য বাংলাদেশের পুরো গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রশ্ন আসবে।

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীদের দাবি এবং সরকারের অবস্থান—এর সমাধান কী? আরও হত্যাকাণ্ড, আরও নিপীড়ন?

আনু মুহাম্মদ: এখন এটা বন্ধ করতে হবে সরকারকে পদত্যাগ করে। কীভাবে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে বাংলাদেশ যেতে পারে তার জন্য আন্দোলনকারীদের সম্মিলিত কণ্ঠ ও তাদের দাবি মানতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে যেতে হবে। এই হত্যার বিচার করতে হবে, আটক সবাইকে ছাড়তে হবে, কারফিউ তুলে নিতে হবে—সবমিলিয়ে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেই পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায়, সেটাই হতে হবে এখনকার আলোচনার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English
Speaker Shirin Sharmin Chaudhury resigns

How could fugitive ex-Speaker submit biometrics for passport?

The question arises, if the passport employees got a trace of Shirin Sharmin then how come the police did not?

7h ago