একজন পুলিশ কনস্টেবল কেন তার সহকর্মীকে খুন করলেন?

ঘটনার এক মিনিট আগেও হয়তো পুলিশ কনস্টেবল কাউসার আলী জানতেন না যে তিনি খুনী হয়ে উঠছেন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য তার হাতে তুলে দেওয়া একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে তিনি যে তার একজন সহকর্মীকেই গুলি করে বসবেন, সেটি হয়তো কাউসারের কল্পনায়ও ছিল না। নিহত মনিরুল ইসলামের তো নয়ই। কিন্তু নির্মম সত্য হলো খুনটি হয়ে গেছে। শনিবার রাতেও যে দুজন মানুষ ছিলেন পরস্পর সহকর্মী—আজ তাদের একজন নিহত, আরেকজন খুনের দায়ে অভিযুক্ত!

বস্তুত একজন মানুষ (যিনি পেশাদার খুনী নন) যখন আরেকজন মানুষকে খুন করেন, তখন সেই খুনের পরিণতি নিয়ে তিনি ভাবেন না বা সেই ভাবনাটি তার মাথায় আসে না। বাংলাদেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় খুনের সর্বোচ্চ শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড—সেটি একজন সাধারণ মানুষও জানেন। কিন্তু তারপরও মানুষ কেন খুনী হয়ে ওঠে?

বলা হয়, মানুষ মূলত অপরাধপ্রবণ। কিন্তু পারিবারিক মূল্যবোধ, আইনি কাঠামো ও তার প্রয়োগ তথা বিচারের প্রতি ভয়, ধর্মীয় অনুশাসনসহ নানাবিধ কারণে মানুষ অপরাধ থেকে দূরে থাকে বা নিজের ভেতরের অপরাধী সত্তাটিকে দমিয়ে রাখে। এটাকে বলে আত্মসংযম।

জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ৩ (৩৮) ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী 'অপরাধ' অর্থ কোনো কর্ম বা কর্মবিচ্যুতি, যা বর্তমানে বলবৎ কোনো আইনে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। আইনের ভাষায় অপরাধের চারটি মৌলিক উপাদান রয়েছে। যেমন: (ক) জেনে বুঝে অপরাধ, (খ) ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধ, (গ) প্রতারণামূলকভাবে অপরাধ ও (ঘ) অবহেলাজনিত অপরাধ। ফৌজদারী কার্যবিধিতে অপরাধকে আমলযোগ্য এবং আমলের অযোগ্য—এই দুইভাবে ভাগ করা হয়েছে। তবে কোনটি আমলযোগ্য আর কোনটি আমলের যোগ্য নয়, সেটি আদালত ঠিক করেন।

বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আমাদের প্রিয়জন, সহকর্মী, প্রতিবেশী কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতিনিয়তই নানারকম মনকষাকষি, ঝগড়াঝাটি এমনকি কালেভদ্রে হাতাহাতিও হতে পারে। কিন্তু কখনো কি মনে হয় যে কাউকে মেরে ফেলতে হবে? তারপরও সন্তানের হাতে বাবা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন—এরকম সংবাদ শিরোনামও আমাদের পড়তে হয়। সবশেষ সংবাদ শিরোনাম হলেন দুজন পুলিশ কনস্টেবল—যারা পরস্পর সহকর্মী ছিলেন। তাদের একজনের গুলিতে আরেকজন নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। অথচ তাদের মধ্যে যে বিরাট কোনো দ্বন্দ্ব ছিল, এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন হলো—তাদের মধ্যে কী এমন ঘটলো যে একজন পুলিশ কনস্টেবল তার একজন সহকর্মীর শরীরে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চালিয়ে দিলেন? ব্যাপারটা এমন নয় যে, কথাকাটাকাটির জেরে একজন আরেকজনকে ঘুষি দিয়েছেন এবং ঘুষিটা শরীরের এমন জায়গায় এবং এমন জোরে লেগেছে যে, তাতেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ যে ঘুষিটা খুনের উদ্দেশ্যে মারা হয়নি। এই জাতীয় ঘটনাকে বলা হয় অনিচ্ছাকৃত খুন। কিন্তু বারিধারায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি অনিচ্ছাকৃত খুন নয়। বরং খুব কাছ থেকে একজন পুলিশ কনস্টেবল তার একজন সহকর্মীকে উপর্যপুরি গুলি করেছেন। এমনও নয় যে, অসাবধানতাবশত তার বন্দুক থেকে গুলি বেরিয়ে গেছে। বরং তিনি সচেতনভাবেই গুলি করেছেন এবং যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তার হাতে ছিল, তার শক্তি সম্পর্কেও তিনি জানতেন। সুতরাং এরকম একটি অস্ত্র দিয়ে কারো শরীরে গুলি চালালে যে তিনি মরে যাবেন, এটি আক্রমণকারীর না জানার কোনো কারণ নেই। তার মানে তিনি বুঝেশুনেই গুলি করেছেন।

প্রশ্ন হলো—কী এমন ঘটনা ঘটলো বা কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো যে, একজন সহকর্মীকে গুলি করে মেরে ফেলতে হলো—যে ঘটনার পরিণতি সম্পর্কে আক্রমণকারী ব্যক্তির সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে? কাউকে খুন করার আগে মানুষের মস্তিষ্ক কি কোনো কারণে শূন্য হয়ে যায়? সে কি জ্ঞান ও বিবেকশূন্য হয়ে যায়? খুনের আইনি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিণতি সম্পর্কে তার যে বোধ, যে জ্ঞান সেটি কি সাময়িক সময়ের জন্য উবে যায়?

গণমাধ্যমের খবর বলছে, শনিবার (৮ জুন) রাত পৌনে ১২টার রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনের সড়কে কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবলের গুলিতে অপর এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, তার গুলিতে জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালকও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত কনস্টেবলের নাম মনিরুল ইসলাম। তাকে যিনি গুলি করেছেন তার নাম কাউসার আলী। তিনিও একজন কনস্টেবল। ঘটনার পরে পুলিশ কাউসারকে গ্রেপ্তার করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'আমাদের কাছে মনে হয়েছে তিনি (কাউসার) মেন্টালি স্ট্রেসড। তবে একজন যদি এরকম ঘটনা ঘটায় স্বাভাবিকভাবে তার মানসিক অবস্থা ঠিক থাকে না। সে সেখানে অস্ত্র রেখে হাঁটাহাঁটি করছিল। এর কারণ সে স্ট্রেসটা নিতে পারছিল না।' (ডেইলি স্টার বাংলা, ০৯ জুন ২০২৪)

তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর খবরে বলা হচ্ছে, ফিলিস্তিন দূতাবাসের কাউন্টারে দায়িত্ব পালনকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মনিরুল ইসলামকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন কাউসার। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। বাইরে দাঁড়িয়ে কে কতক্ষণ দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। নিয়ম অনুযায়ী একজন ছিলেন কক্ষের ভেতরে। আরেকজন বাইরে। কাউসার চাকরিতে মনিরুলের চেয়ে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তিনি চাইতেন মনিরুল তাকে সম্মান করুক। কিছুটা বেশি সময় বাইরে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করুক। কিন্তু মনিরুল সেই কথা শুনতেন না। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে গুলি করেন কাউসার। (প্রথম আলো, ০৯ জুন ২০২৪)

আরেকটি পত্রিকার খবরে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, কাউসারের কাছে টাকা পাওনা ছিল মনিরুলের। টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কাওসার তাকে গুলি করেন। (আজকের পত্রিকা, ১০ জুন ২০২৪)

কাউসারের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনের ভাষ্য, 'কাউসারের মানসিক সমস্যা ছিল। রাঙামাটির বরকলে চাকরি করার সময় তিনি মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারিভাবেই তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে অন্তত তিনবার চিকিৎসা করানো হয়েছিল। নিয়মিত ওষুধও সেবন করতেন। কাওসারের কাছে প্রেসক্রিপশনও আছে।'

তার স্ত্রী জানান, কিছুদিন ধরে কাউসার খুবই কম কথা বলতেন। ঈদের কেনাকাটার জন্য বাড়িতে টাকাও পাঠিয়েছিলেন। সংসারে কোনো অভাব–অনটন ছিল না। তবে চাকরি নিয়ে খুবই টেনশন করেন তিনি। ছয় ঘণ্টার ডিউটি আট ঘণ্টা হতো। এ ছাড়া নানা বিষয় নিয়ে তিনি (কাউসার) টেনশন করতেন। (প্রথম আলো, ০৯ জুন ২০২৪)

কাউসার যে তার সহকর্মীকে খুন করেছেন, তার ভিডিও ফুটেজও এরইমধ্যে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সুতরাং তিনি যে খুন করেছেন, সেটি সহজেই আদালতে প্রমাণিত হয়ে যাবে। যদি শেষমেষ এটি প্রমাণিত হয় যে তিনি সজ্ঞানে খুনটি করেছেন এবং খুনের উদ্দেশ্যেই গুলি চালিয়েছেন, তাহলে হয়তো তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তবে বিচারের ভার শেষ পর্যন্ত আদালতের ওপর। কেননা আদালত অপরাধের তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্ক এবং অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রায় দিয়ে থাকেন।

তবে এই ধরনের অপরাধ বা ঘটনার পরিণতি অন্য সাধারণ ঘটনার চেয়ে ভিন্ন হয়। যেমন: রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কারো মৃত্যু হলে সেটিকে সরাসরি হত্যা বা হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বলে প্রমাণ করা কঠিন। কেননা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন আদালতে এই যুক্তি দিতে পারে যে, তারা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে গুলি করেছে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে বিশেষ কারো দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করা হয়নি।

রাষ্ট্রীয় কর্মে নিয়োজিত নন এমন দুজন সাধারণ মানুষের মধ্যে ঝগড়া, জমি বা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ কিংবা ত্রিভূজ প্রেম—ইত্যাদি নানা কারণে খুনোখুনি হতে পারে। কিন্তু সেসব ঘটনায় সরাসরি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রশ্নের মুখে পড়েন না। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না। কেননা এই ধরনের অপরাধ সারা পৃথিবীতেই কমবেশি হয়ে থাকে। কিন্তু যখন জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি কূটনৈতিক পাড়ার মতো নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে তথা অতি স্পর্শকাতর স্থানে জনগণের টাকায় কেনা আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে কাউকে অন্যায়ভাবে খুন করেন এবং সেই খুনটি যদি হয় পরস্পরের মধ্যে—তখন এই ধরনের ঘটনা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়। এই জাতীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসে। যেমন:

১. কাউকে কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তা তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার আগে তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা পরীক্ষা করা হয় কি না?

২. স্বয়ং স্ত্রীর ভাষায় যে কাউসার মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন এবং অন্তত তিনবার চিকিৎসা নিয়েছিলেন, তার হাতে কী করে এরকম আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তুলে দেওয়া হলো?

৩. এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তার কোনো নীতিমালা আছে কি না এবং এই ধরনের অস্ত্র চালানোর জন্য তাদেরকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কি না?

৪. কাউসারের মানসিক অসুস্থতার খবর কি পুলিশ বাহিনী বা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানতো না?

৫. রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্যকে কূটনৈতিক পাড়ায় নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়ার আগে তার ব্যাপারে কি বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি?

৬. যদি মানসিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েও যান, তারপরেও কি তাকে পর্যাপ্ত সময় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল? তাকে কেন এমন কোথাও ডিউটিতে দেওয়া গেল না যেখানে তার হাতে এরকম আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকবে না?

৭. এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ঢাকার দূতাবাস এলাকায় নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের মনে প্রশ্ন উঠবে কি না এবং এ নিয়ে সরকার যদি প্রশ্নের মুখে পড়ে, তার জবাব কী হবে?

৮. অপরাধ প্রমাণিত হলে কাউসারের শাস্তি হবে। কিন্তু নিহতের পরিবারের কী হবে? রাষ্ট্র হয়তো কিছু ক্ষতিপূরণ দেবে। কিছু আর্থিক সহযোগিতা পাবেন। হয়তো ওই পরিবারের কাউকে সরকারি চাকরিও দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরেও কি মনিরুলের স্ত্রী তার স্বামীকে ফিরে পাবেন? তার সন্তান কি তার বাবাকে ফিরে পাবে? খুনের কি আদৌ কোনো ক্ষতিপূরণ হয়?

৯. অভিযুক্ত কাউসারের পরিবারেরই বা কী হবে? তার বাবা-মা-স্ত্রী ও সন্তান আছেন। এই ঘটনায় যাদের কোনো দায় নেই। কিন্তু সমাজে এখন তারা কতটা সম্মানজনক অবস্থায় থাকবেন? কাওসারের দুই সন্তান কি খুনীর সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠবে?

এটা ঠিক যে, পিতার অপরাধের দায় সন্তানের নয়। স্বামীর অপরাধের দায়ও স্ত্রীর নয়। কিন্তু যখন কেউ কোনো কারণে খুনী হয়ে ওঠেন, তখন তার যন্ত্রণা শুধু তিনি একা ভোগ করেন না, বরং সেই যন্ত্রণা পুরো পরিবারকে ভোগ করতে হয়। আবার কাউসারের অপরাধের যন্ত্রণা শুধু তার পরিবারও নয়, বরং পুলিশ বাহিনীকেও কিছুটা ভোগ করতে হবে।

যেকোনো হত্যাকাণ্ডই অনাকাঙ্ক্ষিত। সেটি হোক রাজনৈতিক কিংবা পারিবারিক অথবা ইগো সমস্যাজনিত কারণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু এটিও ঠিক যে, কেউ খুনী হয়ে জন্মায় না। কিছু কিছু খুন যেমন দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় করা হয়, আবার কিছু খুন হয় একেবারেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়। যে ঘটনাটি ঘটানোর এক মিনিট আগেও হত্যাকারী জানতেন না যে তিনি খুনটা করে ফেলবেন। কিন্তু এটা ঠিক যে, প্রতিটি মানুষের ভেতরেই একজন খুনী বসবাস করে। সেই খুনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটাকে বলে আত্মসংযম। যে সংযম তৈরি হয় তার পারিবারিক মূল্যবোধ, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা, চারপাশের পরিবেশ, কর্মপরিবেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাসহ নানা কিছুর মাধ্যমে।

মানসিকভাবে পরিপূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ সজ্ঞানে বা সচেতনভাবে কাউকে খুন করতে পারেন না—যদি না তিনি পেশাদার খুনী হন এবং খুনটি পূর্বপরিকল্পিত হয়। কেননা একজন সুস্থ মানুষ খুনের পরিণতি সম্পর্কে জানেন। তিনি জানেন এর আইনি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিণতি কী হবে। কিন্তু তারপরও মানুষ অনেক সময় ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় অনেক ধরনের অপরাধ করে বসে। তখন হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য তার মস্তিষ্ক নিষ্ক্রীয় হয়ে যায়। হয়তো মাথার ভেতরে কোনো 'বোধ' কাজ করে না।

পরিশেষে, নিহত মনিরুলের পরিবার ন্যায়বিচার পাক। অভিযুক্ত কাউসারের পরিবারের পাশেও সবার দাঁড়ানো দরকার। কাউসার যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকেন, যদি তার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, বিচারের আগে সেটি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। আর যদি তিনি সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে কূটনৈতিক পাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ডিউটিতে পাঠানো হলো কেন, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার এবং এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পুলিশ বাহিনীতে নজরদারি ও প্রশাসনিক পদ্ধতি আরও বেশি কঠোর করা প্রয়োজন।

কাউসারের স্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, চাকরি নিয়ে তিনি খুবই টেনশন করতেন। ছয় ঘণ্টার ডিউটি আট ঘণ্টা হতো। তার মানে কাজের চাপ তার শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাস্তাঘাটে পুলিশের ডিউটি এমনিতেই অনেক বেশি। পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ যেমন বেশি, তেমনি অন্য যেকোনো পেশার লোকের চেয়ে তাদের ওপর কাজের চাপও যে বেশি, সেটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সুতরাং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পুলিশের কর্মঘণ্টা তথা কাজের ধরন অনুযায়ী কর্মবণ্টন এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য নতুন করে ভাবতে হবে কি না—সেটিও বিরাট প্রশ্ন।

আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক

Comments

The Daily Star  | English

Yunus urges patience, promises polls roadmap soon after electoral reforms

He said the election train has started its journey and will not stop

19m ago