দুর্নীতি বনাম জিরো টলারেন্স

রাজধানীর কারওয়ান বাজার। পেট্রোবাংলার সামনে থেকে সিএনজি অটোরিকশার চালক 'রামপুরা ‍পুলিশ প্লাজা' বলে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। রিজার্ভ নয়, শেয়ারে যাওয়ার জন্য।

কয়েকজন এসে ভাড়া জিজ্ঞেস করলেন। চালক বললেন, '৫০ টাকা।' একজন যাত্রী বললেন, '৩০ টাকা ছিল। ২০ টাকা বাড়ায়া দিছেন?' চালক বললেন, 'খরচা বাড়ছে।'

পুলিশ প্লাজায় নামব বলে দুই যাত্রীর সঙ্গে উঠে পড়ি। চলতে চলতে জিজ্ঞেস করি, কী খরচা বাড়ছে? বললেন, পুলিশের খরচা। পুলিশের খরচা মানে কী? জানালেন, এই রুটে চলতে গেলে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশাকে দৈনিক একবেলায় ৬০০ টাকা এবং দুইবেলায় ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। আগে ছিল মাসিক। এখন দৈনিক দিতে হয়।

পুলিশকে টাকা দিয়ে রাস্তায় চলতে হবে কেন? প্রশ্নটা শুনে চালক ঘাড় বাঁড়া করে পেছনে এমনভাবে তাকালেন, মনে হলো যেন মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছি।

এই আলাপচারিতা হতে হতে হাতিরঝিলের প্রবেশমুখে ঠিকই ট্রাফিক পুলিশ তাকে আটকে দেয়। সিটে বসেই পুলিশকে বললেন, 'স্যার আমারে চিনেন নাই?' স্যার চিনতে পারেননি। তিনি দরজা খুলে ট্রাফিক পুলিশের কন্ট্রোলরুমে যান। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসেন। আরেক যাত্রী জিজ্ঞেস করলেন, 'সমাধান হইছে?' চালক বললেন, 'হইছে।'

এটা ঢাকা শহরের কোনো অস্বাভাবিক দৃশ্য নয়। অথচ এর অদূরেই কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং থেকে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যে অসংখ্য ট্রাক কোথাও রাস্তার অর্ধেক বা কোথাও দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে এবং এই ট্রাকের কারণে এই সড়কে যে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া সব সময়ই যানবাহনের জটলা লেগে থাকে—সেটা ট্রাফিক পুলিশের না জানা বা না দেখার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এখানে এসে তারা সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরির দায়ে কাউকে জরিমানা করেছে বলে শোনা যায় না।

দিন কয়েক আগে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। পুলিশ প্লাজার সামনে একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়ি আটকে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। গাড়িতে বসা কোম্পানির একজন কর্মী পুলিশকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, রাস্তায় তাদের গাড়ি আটকানোর কথা নয়। কারণ 'কন্ট্রাক্ট' করা আছে।

যে অফিসারের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট, তার নামও তিনি বললেন। কিন্তু তিনি ওই অফিসারের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের কথা বলিয়ে দিতে পারছিলেন না। কারণ মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না। তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন আমার ফোন দিয়ে একটু কথা বলার জন্য। ফোনটা দিলাম। ওই তরুণ একটু আড়ালে গিয়ে কী কী যেন বললেন। তারপর ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা ফেরত দিয়ে অনুরোধ করলেন, যদি খুব তাড়া না থাকে তাহলে যেন আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। কেননা যাকে ফোন করেছেন তিনি একটু পরে ব্যাক করবেন। আমার তাড়া ছিল। তাই তার ফোনে ২০ টাকা রিচার্জ করে দিয়ে চলে আসি।

ঢাকা শহর তো বটেই, সারা দেশের রাস্তায় এগুলো খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ট্রাফিক পুলিশের হয়রানির মুখে রাস্তায় এক যুবকের মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়ার দৃশ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।

প্রশ্ন হলো, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ কি অহেতুক কারো গাড়ি থামায় বা বিনা অপরাধে জরিমানা করে বা মামলা দেয়? নিশ্চয়ই না। আটকানোর পরে কাগজপত্র ঠিক থাকলে তারা ছেড়েও দেয়।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের বিরাট অংশেরই কোনো না কোনো ত্রুটি আছে, যে ত্রুটি ধরে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিতে পারে, জরিমানা করতে পারে। কিন্তু তারা কি সবাইকে ধরে বা এটি সম্ভব? কাদেরকে ধরে এবং কাদেরকে ধরে না? পয়সা নিয়ে কাদের ছেড়ে দেয় আর কাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়—এসব প্রশ্নের উত্তর মোটামুটি সচেতন মানুষেরা জানেন।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—পুলিশ যদি সত্যিই রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য যানবাহন আটকায়, তাহলে এতদিনে ঢাকাসহ সারা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার কথা। ফিরেছে? যানবাহনের মালিক ও চালকরা অনিয়ম করেন, ট্রাফিক পুলিশও সেই সুযোগ নেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সড়কে যে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফেরার কথা, সেটি দৃশ্যমান নয়।

এটি শুধুমাত্র রাষ্ট্রের একটি বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের চিত্র। রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এরকম সিস্টেমেটিক দুর্নীতি রয়েছে এবং সেটি কমার কোনো লক্ষণ নেই। উন্নয়ন প্রকল্প মানেই শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি—এটি এখন আর কাউকে বিস্মিত করে না। বরং কোটির নিচে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে যথেষ্ট দুর্বল বলে মনে করা হয়।

দুর্নীতির যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও বিস্তৃতি ঘটেছে, তাতে সম্ভবত এমন একটি রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেরও নাম বলা যাবে না, যে প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত এবং যে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী না হলে বা ঘুষ না দিলে বিনা হয়রানিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাবে।

এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। একসময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ 'চ্যাম্পিয়ন' হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চ্যাম্পিয়ন না হলেও দেশ থেকে দুর্নীতি কমেছে—এটি বিশ্বাস করা কঠিন।

সবশেষ গত ৩০ জানুয়ারি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতির যে ধারণাসূচক প্রতিবেদন ২০২৩ প্রকাশ করে, সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। এবার বাংলাদেশের অবস্থান দশম, যা গতবার ছিল ১২তম।

প্রতিবেদন বলছে, গত এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্নীতি এবার সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতির হার বেশি। (প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪)

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'করাপশন ইজ ওয়ে অব লাইফ অ্যাক্রস দ্য ওয়ার্ল্ড নাও।' অর্থাৎ তার ভাষায়, দুর্নীতি এখন সারা বিশ্বে জীবনের অংশ হয়ে গেছে। তিনি দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইয়ের বাংলাদেশ অধ্যায় টিআইবিকে 'বিএনপির দালাল' বলেও মন্তব্য করেন। (দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪)

স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একজন সিনিয়র সাংবাদিকের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল—যেখানে তিনি বলেছেন, 'যেহেতু দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না, ফলে এটাকে ওয়ে অব লাইফ এবং লিগ্যালাইজ (আইনসিদ্ধ) করে দেওয়া উচিত।' এর প্রায় এক বছর পরে একই কথা বললেন দেশের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। দুজনের ভাষাই অভিন্ন। দুজনই দুর্নীতিকেও 'ওয়ে অব লাইফ' বলে মেনে নেওয়ার পক্ষপাতী।

একজন সাবেক অর্থমন্ত্রীও ঘুষকে বলেছিলেন 'স্পিড মানি'। সুতরাং যে দেশের নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই দুর্নীতি দমনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ কিংবা সরকারকে পরামর্শ না দিয়ে পরোক্ষভাবে দুর্নীতির পক্ষে কথা বলেন, সেই দেশে দুর্নীতি কমানো শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব ব্যাপার।

রাষ্ট্র্রীয় সেবাদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিকে সিস্টেম্যাটিক রেখে, দুর্নীতি মেনে নিয়ে বা এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সবক দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা সাংঘর্ষিক কি না—সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ, দুর্নীতিতে আপনি যখন বৈশ্বিক ফেনোমেনা বা ওয়ে অব লাইফ বলে মেনে নেবেন—তখন আপনার পক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অসম্ভব। কারণ আপনি দুর্নীতি মেনেই নিয়েছেন। অথবা দুর্নীতির সংজ্ঞা আপনি বদলে দিয়েছেন।

সেবা বা কাজের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বা সরকারের অন্য কোনো দপ্তরের কর্মীকে টাকা দেওয়াটাকে আপনি ঘুষ হিসেবে দেখছেন না বা ঘুষ বললেও সেটিও অপরাধ মনে করছেন না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মানুষও এখন এটা বিশ্বাস করতে চায় না যে, ক্ষমতা ও পয়সা ছাড়া তারা আদৌ কোনো সেবা পাবেন।

এই বাস্তবতার ভেতরেই এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, সেখানে দুর্নীতিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে ঘোষণা করা হয়।

তবে বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং জনগণের ভোগান্তি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বলে নির্বাচনি ইশতেহারে দাবি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান থাকবে; প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের জন্য ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ক্ষেত্রে সূচিত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

বাস্তবতা হলো—সরকারের তরফে বরাবরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহনশীল নীতির কথা ঘোষণা করা হলেও কোথাও দুর্নীতি কমেছে বা বন্ধ হয়েছে, সেটি বিশ্বাস করা কঠিন। কেননা সরকারি অফিসগুলোয় ডিজিটাল সেবা চালুর পরেও নাগরিকদের ঠিকই সার্ভার ত্রুটিসহ নানা অজুহাতে অফিসে যেতে বাধ্য করা হয়। আর অফিসে যাওয়া মানে ঘুষ দিয়ে সেবা নেওয়া। তাহলে ডিজিটালাইজেশনের ফলে কোথায় দুর্নীতি কমলো, সেই প্রশ্নটি জনপরিসরে আছে।

একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানকে শত ভাগ দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়—সেই সরকার যতই শক্তিশালী হোক। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয়, এরকম অন্তত একটি প্রতিষ্ঠানকেও কি শত ভাগ দুর্নীতি ও ঘুষমুক্ত করা সম্ভব নয়?

মুশকিল হলো একটি অপরাধের সঙ্গে আরেকটি অপরাধের যোগসূত্র থাকে। যেমন: ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করতে গেলে বিআরটিএর দুর্নীতিও বন্ধ করতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো তথা ঘুষ বন্ধ করতে হলে দলীয় মাস্তানদের চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। শুধু রাজধানীর কারওয়ান বাজারেই পরিবহন খাতের মাস্তানরা প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে যে পরিমাণ চাঁদা তোলে (প্রকাশ্যে), সেই টাকার পরিমাণ কত এবং সেই টাকার ভাগ কোথায় কোথায় যায়—সেই হিসাব কি সরকারের কাছে নেই?

এভাবে সরকারি হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতিতে যে দুর্নীতি হয়—সেগুলোও বন্ধ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার বলেছিলেন, তিনি পাসপোর্ট প্রত্যাশী নাগরিকদের কাছ থেকে 'উহ' শব্দটিও শুনতে চান না। (দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩)

কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি বন্ধ করতে গেলে ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশ যে বকশিশ বা ঘুষ নেয়, সেটাও বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ দুর্নীতির অর্থনীতি এতই ব্যাপক ও বিস্তৃত যে চট করে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ দুর্নীতি এতটাই সিস্টেম্যাটিক বা প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে গেছে যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ মানুষ এখন এটা বিশ্বাস করতেও চায় না যে, কোথাও ঘুষ ছাড়া তিনি সেবা পাবেন। যেকোনো কাজের জন্য সরকারি অফিসে গেলে মানুষ ধরেই নেয় যে সেখানে কিছু 'খরচাপাতি' হবে।

এই খরচাপাতি কখনো ৫০০ টাকা, কখনো লাখ টাকা। মুদ্রার অন্য পিঠ হলো, সাধারণ মানুষেরও বিরাট অংশই রাষ্ট্রীয় যেকোনো সেবা অন্যের চেয়ে আগে বা দ্রুত পেতে স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘুষ দেয়। অর্থাৎ প্রতিবাদ করার বদলে তারাও যে ঘুষ সিস্টেমের অংশ হয়ে গেলো, সেই দায় কার?

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

 

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

15h ago