বিশেষ সাক্ষাৎকার

আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যা ঘটেছে, এতে কেমন বোধ করছেন? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি, এরকম নিষ্ঠুর ঘটনা কোথাও ঘটেনি। ব্রিটিশ পাকিস্তানেও ঘটেনি, একাত্তর ছাড়া বাংলাদেশেও ঘটেনি। আমি মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ।

ডেইলি স্টার: হাজারো মানুষ যুক্ত হয়েছে এই আন্দোলনে। প্রতিদিন পত্রিকায় নতুন নতুন মৃত্যুর খবর আসছে। এগুলো দেখার সুযোগ হয়েছে আপনার? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: হ্যাঁ, পত্রিকার পাতায় নিয়মিত চোখ রাখছি। টিভিতে সেরকম কিছু নেই। কিছু পত্রিকা ভালো ভূমিকা রাখছে, লিখছে। এর মাঝে যা দেখলাম, বলা যায়- আগের সব গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে এবারের অভ্যুত্থান ভিন্ন। এবার অনেক ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যুক্ত হয়েছে। মানুষ ব্যাপকভাবে হয়রানিও হচ্ছে। সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে অনেক। পথে-ঘাটে নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। এই ক্ষত অনেক দিন থাকবে।

ডেইলি স্টার: নিহত অনেকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছে সরকার, কিন্তু শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ক্ষমা চাওয়া...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: এগুলো হাস্যকর কাজ। মানুষ বুঝে এসব। এত মানুষ মারা গেছে তার খবর নেই, স্থাপনার কথা বারবার আসছে। মানুষের মৃত্যুতে কাঁদে না। স্থাপনা দেখে কাঁদে। তাহলে স্থাপনা পোড়ার সময় পুলিশ বাহিনী কোথায় ছিল? সেখানে তো একজন মানুষও মারা যায়নি।

ডেইলি স্টার: অনেক ক্ষতির পর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালে দেখতে গেছেন...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: শামসুর রাহমানের একটা কবিতা আছে, 'সরকারি প্রেসনোটের মতো মিথ্যা তোমার প্রেম'। মানুষ এই সরকারকে আর বিশ্বাস করে না, তিনি যাই করেন, সন্দেহ করবেই। 

ডেইলি স্টার: একজন সাবেক বিচারক টেলিভিশনে বলেছেন, পুলিশের গুলি করা ঠিক আছে। অন্যদিকে মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, পুলিশকে গুলি করতে সরকার বলেনি...

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সংবিধানের কোথাও নেই যে, এই পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারবে। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আবু সাঈদকে। আবার তার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী টাকা দিচ্ছেন, এটা তো অনেকটা ' জুতা মেরে গরু দান'র মতো অবস্থা।

ডেইলি স্টার: এত প্রাণহানি। এটা কি এড়ানো যেত? 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তাদের ভেতরটাই এমন। এড়াবে কী করে? একে রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতাও বলব না, এটা তাদের মানসিকতা। যা তারা চেপে রাখতে পারেনি। বাইরে বেরিয়ে এসেছে। গতকাল দেখলাম ওবায়দুল কাদেরকে ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারাই ভুয়া ভুয়া বলে চেঁচাচ্ছিল, যার কারণে সে সভা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদের নিজেদের দলের অবস্থাও ভালো না।

ডেইলি স্টার​​​​​​​: ​​​​​​​যাকে-তাকে ধরছে পুলিশ। এত হামলা, মামলা, ভয়। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা কোন দিকে যাচ্ছি তা বুঝতে পারছি না। তবে এটা বুঝতে পারছি যে, বিরাট একটা ধাক্কা লাগছে। মানুষের স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে বা পারবেও না স্বাভাবিক হতে। ভালো হতে কে কাজ করবে? আমাদের রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থ দেখে না, স্বার্থ দেখে কতিপয়ের। এ রাষ্ট্র জনমতের তোয়াক্কা করে না। বুর্জোয়ারা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে, হবে। আমাদের এখানকার বুর্জোয়ারা বেশি খারাপ। এইখানে পুঁজিবাদ যে ফ্যাসিবাদের আকার ধারণ করেছে, তা না থামার কারণ বলার কেউ নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Sohag’s murder exposes a society numbed by fear and brutality

It was a murder that stunned the nation, not only for its barbarity, but for what it revealed about the society we have become.

25m ago