এখন সরকারের উচিত সংস্কারে মনোযোগ দেওয়া

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের মেয়াদের প্রথম ছয় মাস পূরণ করেছে। এই পুরোটা সমস্যা তারা পার করেছে নানা সমস্যার মোকাবিলায়।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। তবে তাদের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে ছাত্র-জনতা ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এই সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশার মাত্রা অনেক উচ্চ ছিল, যা পূরণ করা স্বভাবতই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসনে কিছুটা অদক্ষতা ও দুর্বলতা দেখা গেলেও, মূলত আগের সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাগুলোকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার প্রবণতার কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি সক্ষম হতে পারেনি। অপরদিকে, গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে এমন প্রাধান্যের বিষয়গুলোর সমাধান করতে না পারার ক্ষেত্রে এই সরকারের ব্যর্থতা খুবই হতাশাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির সুপারিশসহ সংস্কার প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে সরকার। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ড. ইউনুস ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে রাশ টেনে ধরতে সফল হননি। মার্চে রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। প্রায় প্রতি বছরই এই মাসে খাদ্য সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারলে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সমস্যার মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর অনেকগুলোই আওয়ামী লীগের নেতা বা আগের সরকারের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওইসব কারখানায় যারা কাজ করতেন, তারা এখন কর্মহীন। যার ফলে সার্বিকভাবে বেকারত্বের হার বেড়েছে। আগামী বছরের অর্থনৈতিক পূর্বাভাষেও পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের তেমন কোনো লক্ষণ নেই। আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার বাদ দিলে, সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি বড় আকারে স্থবিরতায় ভুগছে। 

পাশাপাশি, সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি, যা খুবই উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষের মনে যে ধারণাটি রয়েছে, তা হলো, সরকার বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি। বিশেষত, রাজধানীতে ছোটখাট অপরাধ ও ছিনতাই ঠেকানোর ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় জনমনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। এই সরকারের মেয়াদ ছয় মাস পেরোলেও, পুলিশের মনোবল এখনো চাঙ্গা হয়নি। তাছাড়া, আমাদের সড়কগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঘটনাগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যর্থতা পরিচয় দিয়েছে এই সরকার। চাকুরিপ্রার্থী, শিক্ষার্থী বা অধিকারবঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষক—আন্দোলন ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী যে বা যারাই হোক না কেন, এতে ঢাকা শহরে তুমুল গোলযোগের সৃষ্টি হয়েছে এবং তা নাগরিকদের জন্য অসহনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়েছে।

এখন যেহেতু ছয়টি সংস্কার কমিটি তাদের সুপারিশ জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ম্যান্ডেট পরিপূরণের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রতিটি খাতের প্রস্তাবিত সংস্কারের ঠিক কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নির্ধারণ করবে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনরা। এ পরিস্থিতিতে আমরা আশা করব—সংস্কার প্রস্তাবের বিপরীতে ঐক্যমত্য গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে বলে জানা গেছে। আমরা আশা করব সংস্কার আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। তবে একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যেও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো জরুরি। 

 

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

5h ago