এইচএসসি বিপর্যয় নিরসনে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে

সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: স্টার

এইচএসসির বিষয়ে সরকার যে পথে হেঁটেছে, যে সংকটে নিজেদের ফেলেছে, সেখান থেকে উত্তরণের সহজ কোনো রাস্তা খোলা নেই। আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারের একেরপর এক পদক্ষেপই পরীক্ষায় ফেল বা খারাপ করা শিক্ষার্থীদের বর্তমান আন্দোলনকে ডেকে এনেছে।

দেশব্যাপী অস্থিরতার মধ্যেই ১৫ আগস্ট হুট করে স্থগিত ছয়টি বিষয়ের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নতুন তারিখ ঘোষণা করে সরকার। এর প্রতিবাদে ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করলে তাড়াহুড়ো করে এই পরীক্ষাগুলোও বাতিল করে দেওয়া হয়। তখন নতুন এক মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করে সরকার। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। এর সঙ্গে হওয়া পরীক্ষাগুলোর স্কোর যোগ করে দেওয়া হয় চূড়ান্ত ফলাফল।

কিন্তু ১৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশের পর থেকে পরীক্ষায় খারাপ করা শিক্ষার্থীরা 'বৈষম্যহীন' ফলাফল দাবি করে আসছে। তাদের দাবি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সব বিষয়ের ওপর 'ম্যাপিং' করে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। যার মাধ্যমে তারা সবাই সরাসরি পাস করতে পারবে। একটি সংকট নিরসনে ব্যর্থতা কীভাবে আরেকটি সংকট ডেকে আনে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এটি। সরকার বলতে পারে এটি পুরোপুরি তাদের দোষ না। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। কিন্তু সাতটি পরীক্ষার পর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের কারণে পরবর্তী পরীক্ষাগুলো একাধিকবার স্থগিত হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি ছিল। আগের সরকারের কাছ থেকেই এই সংকট অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের হাতে এসেছে। কিন্তু সংকট সমাধানে তাদের পদক্ষেপগুলোও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

২০ আগস্ট 'অটো পাস' এর দাবিতে হওয়া আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার না করে স্থগিত পরীক্ষাগুলো উপযুক্ত একটি সময়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে ফলাফল নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকত না। বর্তমান সংকটও এড়ানো যেত। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলার পর দায়ের করা একটি মামলায় ২৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরও ২৬ জনকে তাদের অভিভাবকদের হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কী করবে সরকার? সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আবারও দেখিয়েছে, চাপের মুখে সরকারের পা হড়কানোর ঝুঁকি আছে। কিন্তু আমরা চাই এ ক্ষেত্রে সরকার তার অবস্থানে শক্ত থাকুক এবং আমাদের সর্বোত্তম স্বার্থের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিক। 

বিশেষজ্ঞরা এই দৈনিককে জানিয়েছে, এইচএসসির ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের দাবিগুলো 'অযৌক্তিক' এবং 'অগ্রহণযোগ্য', যা সামনে জাতির জন্য ভালো পরিণাম বয়ে আনবে না। যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়া কাউকে পাস করিয়ে দেওয়া পরিশ্রম করে সফল হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর অন্যায়ের সামিল এবং এমন পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ পরীক্ষার্থীদের জন্যও একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে দেয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশের জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত করবে না এমন পদক্ষেপ। সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে স্বল্পমেয়াদী সমাধানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব থাকে— যেমন: কোভিড মহামারির সময় দেওয়া 'অটো পাস'। সুতরাং সরকারকে এই ইস্যুতে অবশ্যই তার ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যথাযথ পরামর্শের ভিত্তিতে শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

4h ago