সম্পাদকীয়

নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশকে সাধুবাদ, সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করুন

জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে নির্দয়ভাবে মারধর করেছেন এবং অটোরিকশা ছিনতাইয়ের দায় মেনে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে জোরজবরদস্তি করেছেন।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ একটি সাধারণ বিষয় হলেও এই অপরাধে সাজার ঘটনা বিরল। নাটোরে থানা হেফাজতে আসামি নির্যাতনের অভিযোগে আদালত ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন— আমরা একে সাধুবাদ জানাই। 

গত ১৩ জুলাই অটোরিকশা ছিনতাই মামলায় ৩ আসামিকে আদালতে তোলা হলে জবানবন্দিতে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেন। পরে লালপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নাটোরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে নির্দয়ভাবে মারধর করেছেন এবং অটোরিকশা ছিনতাইয়ের দায় মেনে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে জোরজবরদস্তি করেছেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সোহাগ বলেন, থানায় নেওয়ার পরপরই তাকে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়। তার পায়ের তালুতে লাঠি দিয়ে মারা হয়, অণ্ডকোষে লাথি মারা হয় এবং রিমান্ডে যেতে না চাইলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করে নিতে বলা হয়। মো. সালাম তার জবানবন্দিতে বলেন, পুলিশ সদস্যরা তার কনিষ্ঠ আঙুলের ওপরে টেবিলের পায়া রেখে বারবার চাপ দিয়েছেন, কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত স্টিলের পাইপ দিয়ে পিটিয়েছেন। আরেক আসামি শামীম মোল্লাও অভিযোগ করেন যে, পুলিশ তার চোখ বেঁধে টেবিলের নিচে মাথা রেখে মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রচণ্ড রকমের মারপিট করেছেন, দুই পা বেঁধে পায়ের তালুতে পিটিয়েছেন ও বুকে বারবার লাথি দিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তি না দিলে আরও নির্যাতন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।

নির্যাতনের বর্ণনা ও তাদের শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ইঙ্গিত করে যে এই বেআইনি অনুশীলন এখনও দেশে সর্বব্যাপী। এ ঘটনা পুলিশ হেফাজতে ও রিমান্ডের সময় অপরাধীর কাছ থেকে পাওয়া স্বীকারোক্তির বৈধতা বা সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে৷

১৯৮৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ 'নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্চনাকর দণ্ড বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন' গ্রহণ এবং ২০১৩ সালে 'নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন' করা হলেও এটা সত্যিই দুঃখজনক যে রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা এই আইন বাস্তবায়ন ও হেফাজতে নির্যাতনের মতো ঘটনায় জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এ ধরনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের খুব কমই আইনের আওতায় আনা হয়। কারণ ঘটনা তদন্ত সাধারণত অভিযুক্ত সংস্থার কর্মকর্তারাই পরিচালনা করে থাকে। ফলে এই ধরনের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেও তারা দায়মুক্তি পেয়ে যান।

নাটোরের ঘটনায়ও মামলা করার দায়িত্ব যে এসপিকে দেওয়া হয়েছে তিনি ইতোমধ্যেই দাবি করেছেন 'অটোরিকশা ছিনতাই মামলার আসামি'রা আটকের সময় দৌড়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন এবং ঘটনা তদন্তের পরই মামলা হবে।

কিন্তু সঠিক তদন্ত পরিচালনা করবে কে? আমরা কীভাবে এর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করব? আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ জানাই, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করুন। যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের বিপথগামী সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না চায়, তাহলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আদালতকে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে।

 

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

1d ago