ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’-‘বাংলাদেশি’ ইস্যু!

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় বিষয়টি নেই। গুরুত্ব পায়নি গণমাধ্যমেও। যদিও বাংলাদেশের পাশের ভারতের আসাম রাজ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় ‘অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘অবৈধ বাংলাদেশি’। আসামে বহু বছর ধরে ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলন চলছে। বাঙালি তাড়াও বলতে আসলে বোঝানো হয় ‘বাংলাদেশি তাড়াও’।
নাগরিক তালিকায় নাম রয়েছে কি না দেখতে আসামে নগাও জেলায় সরকারি অফিসের বাইরে উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়। রয়টার্স ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় বিষয়টি নেই। গুরুত্ব পায়নি গণমাধ্যমেও। যদিও বাংলাদেশের পাশের ভারতের আসাম রাজ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় ‘অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘অবৈধ বাংলাদেশি’। আসামে বহু বছর ধরে ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলন চলছে। বাঙালি তাড়াও বলতে আসলে বোঝানো হয় ‘বাংলাদেশি তাড়াও’।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসামের নাগরিকদের তালিকা তৈরির এনআরসি’র (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) কাজ চলছে। সর্বশেষ খসড়ায় ৪০ লাখ মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। নিজ দেশের নাগরিক সনাক্তকরণ অবশ্যই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়। কিন্তু তালিকার বাইরে থাকাদের ‘বাংলাদেশি’ পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাওয়া হচ্ছে।

আসামে তো বটেই ভারতীয় রাজনীতিতে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলছে। মূলত বাংলাদেশ প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে আসাম পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে দেখা যাক।

১. ইতিহাসের বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলন নিয়ে আসাম অস্থির হয়ে ওঠে আশির দশকে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ‘সদৌ অসম ছাত্র সস্থা’ ছিল ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলনের নেতৃত্বে। ১৯৮৫ সালের ১৫ আগস্ট দিল্লিতে আসাম ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আসামের রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহ সচিব ‘আসাম চুক্তি’তে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই চুক্তি অনুযায়ী আসামে বসবাসরত ‘বিদেশি নাগরিক’দের তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

ক. ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারির আগে যারা আসামে এসেছেন, তারা আসামের বৈধ নাগরিক হিসেবে ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

খ. ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত যারা আসামে এসেছেন, প্রথম ১০ বছর নাগরিকত্ব পাবেন না, তবে আসামে থাকতে পারবেন।

গ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যারা আসামে প্রবেশ করেছেন, তারা আসামের নাগরিক নয়। তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না। তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

২. চুক্তির ‘গ’ শ্রেণিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে আসামে গেছেন, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। মূলত তাদেরকে ফেরত পাঠানোর জন্যেই চলছিল এই আন্দোলন।

চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ ছিল না। যদিও আসামে আন্দোলন চলছিলই। ২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিষয়টি ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আসাম রাজ্য বিজেপি ‘বাংলাদেশি তাড়াও’ বিষয়টি প্রধান করে নির্বাচনের মাঠে নামে। আসাম থেকে ৮০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে, নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তা অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে বিজেপি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর, আসামের বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আসামের নাগরিকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে বিজেপি সরকার।

উল্লেখ্য ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলনের বিপরীতে বাঙালিরাও সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আসামের মুসলিম নেতা মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল ২০০৫ সালে গঠন করেন ‘অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)’। দলটি শুধু বাংলাভাষী মুসলমানদের কাছে নয়, হিন্দিভাষী হিন্দুদের একটা অংশের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পায়। বদরুদ্দিন আজমলসহ তিন জন ভারতীয় লোকসভায় এবং আসাম বিধান সভায় দলটির ১৩ জন সদস্য রয়েছে।

৩. নাগরিক সনাক্তের তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। সেই তালিকা থেকে লোক সভার সদস্য বদরুদ্দিন আজমলসহ এক কোটিরও বেশি মানুষ  বাদ পড়েন। তুমুল সমালোচনার পর সম্প্রতি দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। যা থেকে বাদ পড়েছেন ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই ৪০ লাখকে ভারতের নাগরিক কিনা তা প্রমাণের জন্যে, এবছরের অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বাদ পড়া মোট ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনের মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণের আবেদনের সুযোগ পাবেন না। তারা বংশবৃক্ষ (বিবাহিত মহিলাদের পঞ্চায়েত সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হয়নি) প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন আর তারা আসামের তথা ভারতের নাগরিক নন।

আবেদন করে নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ পাবেন মূলত ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৭০৭ জন। যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না, তারা বিদেশি বা ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

এদের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়ে যারা ‘হিন্দু’ নন, ধর্মীয় পরিচয়ে যারা ‘মুসলিম’ তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

ইতিমধ্যে গঠিত বেশ কয়েকটি ‘বিদেশি নাগরিক সনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনাল’ কাজ শুরু করেছে। অনেকগুলো  ক্যাম্পে রাখা হয়েছে কয়েক হাজার ‘বাংলাদেশি’। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ভারতের জমির কাগজ, ভোটার আইডি থাকা সত্ত্বেও, তাদেরকে বলা হচ্ছে ভারতীয় নয়- তারা ‘বাংলাদেশি’।

৪. বাঙালিদের অনুপ্রবেশকারী বা ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মমতার বিরোধিতার কারণ দুটি। প্রথম কারণ ‘বাংলাদেশি’ চিহ্নিত কিছু সংখ্যক বাঙালি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে পারেন। এই দায় পশ্চিমবঙ্গ নিতে চায় না।

দ্বিতীয় কারণ, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি করার দাবি তুলেছে বিজেপি। বাংলাদেশ থেকে যারা বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমবঙ্গ গিয়েছে বলা হয়, তারা একসময় বামফ্রন্টের ভোট ব্যাংক ছিল। এখন তারা মমতার ভোট ব্যাংক।

গত ৫ আগস্ট সর্বভারতীয় বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ রাজস্থানের জনসভায় বলেছেন, ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতে রাখতে চায় বিরোধীদল’। (দৈনিক যুগসঙ্খ, আসাম থেকে প্রকাশিত)

১২ আগস্ট কলকাতায় জনসভায় অমিত শাহ বলেছেন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা বিপদ, কি বিপদ নয়? দেশজুড়ে সন্ত্রাসের মূলে এরাই। বাংলাদেশিরা বোমা ফাটায়। তাদের ফেরত পাঠানোই উচিত। আমাদের কাছে দেশ আগে, পরে ভোট ব্যাংক। যতই বাধা দাও, এনআরসি বন্ধ করব না।’ -দৈনিক যুগসঙ্খ

ভারতের সেনাবাহিনী রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলেন না। বিষয়টি ভারতের রাজনীতিতে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, বিষ্ময়করভাবে আসাম ইস্যুতে কথা বলেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত।

‘ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবেই পাকিস্তান উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশে মদত দিচ্ছে - আর সে কাজে তাদের সাহায্য করছে চীন।...এআইইউডিএফ বলে সেখানে একটা দল আছে। এরা কিভাবে শক্তিবৃদ্ধি করেছে যদি দেখেন, তাহলে দেখবেন বিজেপির চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।’ (বিবিসি বাংলা, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)

এআইডিইউএফ’র প্রতিষ্ঠাতা ও এমপি বদরুদ্দিন আজমল সেনাপ্রধানের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে টুইট করেন, ‘শকিং! জেনারেল রাওয়াত তো রাজনৈতিক বিবৃতি দিচ্ছেন!...গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল যদি বিজেপির চেয়ে বেশি ফুলে ফেঁপে ওঠে, তাতে সেনাপ্রধানের কিসের মাথাব্যথা?...বড় দলগুলোর দুঃশাসনের জন্যই এআইইউডিএফ বা আম আদমি পার্টির মতো বিকল্প দলগুলোর উত্থান হচ্ছে।’ (বিবিসি বাংলা, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)

ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওপি রাওয়াত সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। এই সময়ের মধ্যে যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না, তারা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বেন।

বিজেপি দিল্লিতেও ‘বাংলাদেশি’ সনাক্তের উদ্যোগ নিতে চায়। দিল্লি বিধান সভাতে ‘বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করার জন্যে এনআরসি’র দাবি তুলেছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, চিহ্নিত করে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ গত কয়েকদিনে একাধিকবার বলেছেন, কোনো হিন্দুকে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে না। পরিষ্কার করে বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দুরা ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এর বাইরে যারা থাকবে, তাদের অবশ্যই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। ‘মুসলিম’ উল্লেখ করে না বললেও, মূলত আসাম থেকে মুসলমানদেরই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ৪০ লাখের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কত ‘মুসলিম’ নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ ২ লাখ ৪৮ হাজারের মধ্যে কতজন মুসলিম, তাও জানা যায়নি। আসাম গণমাধ্যমের সংবাদ এবং এআইইউডিএফ’র ভাষ্য অনুযায়ী ৪০ লাখের মধ্যে মুসলমান বাঙালির সংখ্যাই বেশি। যদিও গত ১৪ আগস্ট মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ৪০ লাখের মধ্যে ২৫ লাখ হিন্দু ১৩ লাখ মুসলিম।

‘হিন্দুদের ফেরত পাঠানো হবে না’- বিজেপি সরকারের এই ঘোষণায় আসামের ‘বাঙালি তাড়াও’ আন্দোলনকারীরা অসন্তুষ্ট। তারা বলছে, এটা আসাম চুক্তির লঙ্ঘন।

৫. পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে কেউ কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। তবে এ নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।...এটা নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কের কারণ নেই।’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৩ আগস্ট ২০১৮)

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।

১৪ দলের অংশীদার তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুর রহমান মাইজভান্ডারী কয়েকদিন আগে দিল্লি সফরে গিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু এ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি আসামের দৈনিক যুগসঙ্খকে বলেছেন, ‘ভারত সরকার তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, কাউকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে না।’

৬ আগস্টের যুগসঙ্খ লিখেছে, ‘স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন।’

গত ৯ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আসামের এনআরসি’র উদ্যোগ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ।এবং বিষয়টি বাংলাদেশকে বারবার অবহিত করা হচ্ছে।

আবার গত এক সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, তালিকার বাইরে থাকা ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিষয় নিয়ে কথা বলছে না, সে বিষয় নিয়ে একজন এমপি নজিবুর রহমান মাইজভান্ডারী ভারতের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ভারতে গেলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারত সফর করলেন। এবিষয়ে কথা তখনও আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়নি।

৬. কে ভারতের নাগরিক কে নাগরিক নয়, এটা অবশ্যই ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়। এখানে বাংলাদেশের কথা বলার সুযোগ নেই। কিন্তু যারা শেষ পর্যন্ত ভারতের নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন না এবং এদের মধ্যে যারা বাংলা ভাষী মুসলিম, তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। তাদেরকে বলা হচ্ছে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’।

এটা নরেন্দ্র মোদি সরকারের খুব পরিষ্কার অবস্থান। এখানেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক আলোচনা শুরুর প্রসঙ্গ আসছে।বাংলাদেশের নীরব থাকার নীতি নিয়ে পরবর্তীতে প্রশ্ন উঠতে পারে।

যারা আসামের অধিবাসী নয় তারা ভারতের কোন রাজ্যের অধিবাসী, তা বাংলাদেশের জানার বিষয় নয়। বাংলাদেশ সরকার খুব পরিষ্কার করে বলতে পারে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে গিয়েছিলেন, তারা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর ফিরে এসেছেন। অল্প কিছু সংখ্যক যদি না ফিরে থাকেন, ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ সেই দায় নিতে পারে না।

‘এখনও বাংলাদেশিরা আসামে যাচ্ছেন’- এই অভিযোগের যে কোনো ভিত্তি নেই, বাংলাদেশ তা জোর দিয়েই তুলে ধরতে পারে। কারণ মাথাপিছু আয়,জীবনযাপন, কাজের সুযোগসহ সকল সূচকে বাংলাদেশ আসামের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশিদের আসামে চলে যাওয়ার কোনো কারণই নেই।

ভারত হুট করে ফেরত পাঠানো শুরু করবে, তা হয়ত নয়। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না-বিষয়টি এমন সরলও নয়।

এটা বিজেপির রাজনীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে এনআরসি’র কার্যক্রম। সময়সাপেক্ষ হলেও, বাস্তবায়ন হবে না বা করবে না, তা বলার সুযোগ নেই। সুতরাং ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় হলেও, বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে।

s.mortoza@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English
Who is Kalpana Chakma?

Who is Kalpana Chakma?

As a “new” Bangladesh emerges, knowing who Kalpana Chakma is becomes crucial in understanding our shared history

3h ago