বৃষ্টিস্নাত কলকাতা মজেছে বাংলাদেশি নাট্য ও চলচ্চিত্র উৎসবে
বৃষ্টিস্নাত কলকাতা মজেছে বাংলাদেশি উৎসবে। দক্ষিণ কলকাতায় চিন্তাশীল মানুষদের জায়গা বলে পরিচিত নন্দনে চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব।
অন্যদিকে উত্তর কলকাতার নতুন সৃজনশীল মানুষের দ্রষ্টব্য সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পূর্বাশায় চলছে বাংলাদেশি নাটক নিয়ে ‘পুবের নাট্যগাথা’ শীর্ষক নাট্য উৎসব।
বাংলাদেশের সঙ্গে নাড়ির টান রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে কম নয়। আর নানা ক্ষেত্রেই ওপারের শিল্প-সাহিত্য তথা সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বেড়ে উঠায় নতুনদের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের নাটক-চলচ্চিত্রকে জানতে স্থানীয় অনেক মানুষও আসছেন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে।
যেমনটি বলছিলেন নাট্য উৎসবের আয়োজক ‘প্রাচ্য নিউ আলিপুর’ নাট্যগোষ্ঠীর সম্পাদক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কথায়, “আমরা বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে কোনো সীমানা দেখি না। সাধারণ মানুষও দেখেন না। পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ আমরা একই সংস্কৃতি, একই ভাষা আবেগ-সৃষ্টি- সব দিকেই শতভাগ মিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, ওপারের সঙ্গে এপারের মানুষের নাড়ির যোগাযোগ রয়েছে।”
“তবে এটাও ঠিক, নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশকে জানার আগ্রহ আছে। তারাও এই ধরণের উৎসবে এসে প্রতিবেশী দেশের নাটক কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোকে পরখ করে দেখেছেন এখন,” যোগ করেন বিপ্লব।
এই নাট্য উৎসবে যোগ দিতে আসা বাংলাদেশের নাট্যকার ও নাট্য উদ্যোক্তার জাহিদ রিপনও তাই মনে করেন। তিনি বলেন, “আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন কলকাতায় বাংলাদেশের উৎসবের সংখ্যা বেড়েছে। যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ আছে তারাও যেমন আসছেন আবার যারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানছেন তারাও স্বশরীরে যোগ দিচ্ছেন এই ধরণের উৎসবে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী মহুয়া ব্যানার্জি দ্য ডেইলি স্টারকে বলছেন, “মায়ের মুখ থেকে অনেক গল্প শুনেছি। মা বাংলাদেশের মেয়ে। ছোটবেলায় তিনি নাকি মঞ্চ নাটক করতেন। সেই কৌতূহল থেকেই বাংলাদেশের নাট্য উৎসব দেখতে এসেছি।” মহুয়ার মতো উৎসবের প্রথমদিনে পাওয়া গেল অনেক তরুণ-তরুণীদেরও।
প্রায় একই দৃশ্য দেখা যায় নন্দন চত্বরেও। চারদিনের এই আয়োজনের আয়োজক ফেডারেশন অফ ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া। সংস্থার একজন কর্মকর্তা প্রেমেন্দ্র মজুমদার বললেন, “বাংলা চলচ্চিত্র বিকাশের জন্যই এমন আয়োজন করা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে উৎসবে যেভাবে রোজ দর্শক আসছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে কলকাতার মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। প্রবীণদের পাশাপাশি আসছেন নতুনরাও।“
উৎসবের প্রথমদিন ২৫ জুন সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “সংস্কৃতির কোনও সীমানা হয় না। এই যে বাংলা চলচ্চিত্র আমরা দেখছি, তার প্রধান মানুষটি হচ্ছেন হীরালাল সেন। তাকে ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন বলে গণ্য করা হয়। তার জন্ম বাংলাদেশে। স্বাভাবিকভাবে সেই দেশের চলচ্চিত্র, সৃষ্টি নিয়ে শুধু কলকাতায় কেন পৃথিবীর সব ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে কৌতূহল থাকবে।”
আয়োজনের উদ্বোধক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী ও নাট্যকার অভিনেতা ব্রাত্য বসু বলেন, “বৃষ্টি উপেক্ষা করে যদি পাঁচজন মানুষও এই পেৃক্ষাগৃহে সমবেত হয়ে চলচ্চিত্র দেখেন বুঝতে হবে এই মানুষগুলো একত্রিত হয়েছেন। তারা যদি একত্রিত হন, তবে বড় কিছু করা সম্ভব হয়।”
“বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার যুদ্ধে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমানভাবে অংশ নিচ্ছে। কলকাতায় এই ধরনের আয়োজন তার একটি অংশ- যা দেখতে কৌতূহল নিয়ে আসছেন প্রবীণ-নতুনরা,” ডেইলি স্টারকে বলছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর।
গত ২২ জুন থেকে নাট্য উৎসব চলছে; শেষ হবে ২৮ জুন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে গত ২৫ জুন এবং চলবে ২৮ জুন পর্যন্ত।
গত ২৬ জুন নন্দনের উৎসবে জয়া আহসান অভিনীত ও আকরাম খান নির্মিত ‘খাঁচা’ এবং পরিচালক আবু সাইদের ‘ড্রেসিং টেবিল’ প্রদর্শিত হয়। সেখানেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রচুর সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি চোখে পড়ে। আজ (২৭ জুন) উৎসবে দেখানো হচ্ছে মেহের আফরোজ শাওনের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ এবং ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘টু বি কনটিনিউড’।
একইভাবে নাট্য উৎসবে আজ যশোরের বিবর্তন নাট্য গোষ্ঠীর সাধনা আহমেদের ‘মাতব্রিং’ নাটক মঞ্চস্থ হবে। যার নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। কাল শেষদিন সন্ধ্যায় জাহিদ রিপনের নির্দেশনায়, অপূর্ব কুণ্ডুর ‘হেলেন কেলার’ মঞ্চস্থ হবে। ঢাকার স্বপ্নদল এই নাটকটির প্রযোজনা করছে।
Comments