কলকাতায় ইফতার নিয়ে বিড়ম্বনায় বাংলাদেশি পর্যটকরা
নোয়াখালীর ব্যবসায়ী মহম্মদ শাহবুদ্দিন। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে গতকাল (৪ জুন) সন্ধ্যায় মার্কুইজ স্ট্রিটের একটি রেস্টুরেন্টে ইফতারির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাংবাদিক পেয়ে জানালেন আক্ষেপের কথা।
দ্য ডেইলি স্টারকে শাহবুদ্দিন বললেন, “এখানে আমাদের বাংলাদেশের মতো ইফতার পেলাম না। মুড়ি নেই, নেই শরবত। ফলও যা দেওয়া আছে নগণ্য। কিন্তু, দাম প্লেট প্রতি ১২০ রুপি!”
শাহবুদ্দিন সাহেবের পাশে আরেকটি টেবিলে একই সময় ইফতারের জন্য অপেক্ষারত পুরনো ঢাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান শামীম বললেন, “দেখুন, ইফতারটা তো আমাদের রিজিক। ভারতের বহু রাজ্যে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে আমার। এমন কি পশ্চিমবঙ্গও। খোদ কলকাতার বড় বাজারের মতো মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলেও ইফতার পাওয়া কষ্টের।”
পুরনো ঢাকার ওই বাসিন্দার মতোই বরিশালের সরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হক ডেইলি স্টারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, “আসলে বিদেশ-বিভূঁইয়ে এমনটাই হয়ত হবে। বাড়ির মতো ইফতার আশা করা ঠিক নয়; আর এখানে যেহেতু অন্য একটি ধর্মের মানুষের বাস বেশি তাই সাজানো-গোছানো ইফতার পাওয়ার আশা করা ঠিক হবে না।”
যদিও নাজমুল হকের পাশে বরিশালের শাহনাজ পারভিন নামের এক গৃহবধূ তাঁর নিজের ভাষায় বললেন, “আর কিছু হোক না হোক ভাই। আখের গুড় আর চিড়া পাইলেই তো চলত; বরিশাইল্যাগো এইডাই ইফতার!” ওই ভদ্রমহিলার কথা শুনে যদিও সবাই হেসে দিয়েছিলেন।
গতকাল ইফতারের সময় ঠিক এমনই কথোপকথন হলো উল্লেখিত বাংলাদেশি পর্যটকদের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই নানা কারণে ভারতে এসেছিলেন। কেউ দুদিনের মধ্যেই ফিরবেন নিজের গ্রামে; কেউবা থাকবেন আরও কয়েকদিন। আবার এদের মধ্যে আজই কলকাতায় প্রথম আসার অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন কেউ কেউ।
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর স্ট্রিট, মার্কুইজ স্ট্রিট, চৌরঙ্গী লেনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ঘুরে মাত্র একটি রেস্টুরেন্টেই মিলল ‘রেডি ইফতার’। সেই মার্কুইজ স্ট্রিটের ওই দোকানটি এমনিতেই বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু আরও জনপ্রিয় যে চার-পাঁচটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই হিন্দু মালিকানায় থাকায় ইফতার কিংবা সেহরির মতো ধর্মীয় খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়না বলে জানানো হলো।
তবে এই সময়ে তাদের সাধারণ ব্যবসাও ভালো হয় না বলে হোটেলের কর্মীদের ছুটি দেওয়া হয়। কস্তূরী, ভোজ কোম্পানি কিংবা রাঁধুনির অধিকাংশ বাবুর্চি বাংলাদেশের মানুষ। এই রেস্টুরেন্টগুলোর কোনটাই ইফতারের আয়োজন রাখেনি এবারও। যদিও তারা কেউ এনিয়ে কোনও মন্তব্যও করতে রাজি হননি।
তবে দাওয়াত হোটেলের চিত্রটা ভিন্ন। দুপুরের পর থেকেই সেখানে ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়। অনেকেই অগ্রিম বলে রাখেন। সেই মতো প্যাকেট হোটেলের রুমে পৌঁছে দেওয়া হয়। আবার যারা অন্য রোজদারদের সঙ্গে বসে ইফতার করতে চান- তাদের জন্য রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
সেদিন সরেজমিনে দেখা গেলো রেস্টুরেন্টের ১২০টি চেয়ারের সবগুলোতে রোজদাররা বসে ইফতার করেছেন। এর মধ্যে ৭০ জন ছিলেন বাংলাদেশি পর্যটক। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতায় আসা-যাওয়া করেন। এই পর্যটকদের অধিকাংশ মুসলমান। পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে হলেও স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের ইফতার কিংবা সেহরির ব্যবস্থা করার উচিত।
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিষয়ক দফতরকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান অনেক বাংলাদেশি পর্যটক। কিন্তু, যোগাযোগ করা হলে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে অন্য সময় কথা বলবো। এখন ব্যস্ত আছি।”
দাওয়াত হোটেলের কর্ণধার আসলাম রেজা বললেন, “আমিও আগে ইফতারের আয়োজন করতাম না। তবে গত তিন-চার বছর ধরে এই ব্যবস্থা করছি। আমি দেখতাম, বাংলাদেশি পর্যটকরা ইফতারের জন্য এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কষ্ট লাগতো। এখন অনেকেই জানেন, দাওয়াত হোটেলেই একমাত্র ‘রেডি ইফতার’ পাওয়া যায়।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইফতারের সব সামগ্রী দেওয়া সম্ভব হয় না। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “মুড়ি না থাকার অভিযোগটা ঠিক। তবে কাল থেকে (৫ জুন) থেকে ইফতারে মুড়ি অবশ্যই যোগ হবে।”
Comments