ভুল তথ্যে জীবন গেল কাউন্সিলর একরামুলের?

টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক
একরামুল হক। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল নিহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে। একরামুলকে মাদক ব্যবসায়ী বলে র‍্যাব দাবি করলেও পরিবার, দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও তার পরিচিতরা বলছেন, ইয়াবা বা কোনো ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে কখনই তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

১৩ বছর টেকনাফ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী একরামুল শনিবার দিবাগত রাতে নিহত হন।

একরামুলকে মাদক ব্যবসায়ী দাবি করে কক্সবাজারে র‍্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে ছিল। এই তালিকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা। অপরাধ জগতে সে ইয়াবা গডফাদার হিসেবেও পরিচিত।

তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী দুটি মামলায় একরামুল অভিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফ থানায় একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা রয়েছে।’

তবে একরামুলের মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া জানান, এই থানায় তার নামে দুটি মামলা হয়েছিল। এর একটি হয় মারামারি নিয়ে ও অপর মামলাটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে।

২০০৮ সালে দায়ের করা প্রথম মামলাটি আদালত খারিজ করে দেন। আর মাদক সংক্রান্ত মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, একরামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‍্যাবের ওই কোম্পানি কমান্ডার বলেন, আমরা তার [একরামুল] ব্যাপারে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। তিনি টেকনাফের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ‘র‍্যাব শতভাগ স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।’

কক্সবাজারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক সোমন মন্ডল বলেন, আমি যতদূর জানি একরামুলের নামে ডিএনসি কোনো মামলা করেনি।

ডিএনসির কোনো তালিকায় তার নাম রয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তালিকা ভালোভাবে না দেখে আমি কিছু বলতে পারব না। বিভিন্ন ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করে সদর দপ্তর থেকে তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, একরামুল নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

র‍্যাব কমান্ডার মেজর রুহুল আমিনের দাবি, নোয়াখালীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও র‍্যাব সদস্যদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। পরে একরামুলের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। র‍্যাব সূত্রগুলো জানায়, শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় হয়।

একরামুলের ভাই এহসানুল হক বাহাদুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের কিছু লোক শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে, জমি বিক্রির ব্যাপারে তারা একরামুলের সঙ্গে কথা বলতে চায়।

একরামুলের স্ত্রী আয়েশা ও ভাই বাহাদুর বলেছেন, কোনোকালেই সে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আয়েশার দাবি, একরামুলকে মাদক ব্যবসায়ী বলা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

একরামুল দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন জানিয়ে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ীর তকমা দিয়ে থাকতে পারে।

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক খোলা চিঠিতে বলেছেন, প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হককে ‘হত্যা’ করানো হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করে তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘.... সারা দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানকে যখন দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা স্বাগত জানিয়েছেন। ঠিক তখনই আপনার এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা একাত্তরের দোসররা। তারা ইয়াবাবিরোধী অভিযানের দোহাই দিয়ে আপনার সন্তানকে হত্যা করেছে। প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে আজন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারের অহংকার টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরপর তিন বার নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামকে হত্যা করা হয়েছে। মাগো এমন চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশ নিঃশেষ হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’

এছাড়াও একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

1h ago