‘বাংলাদেশ ভবন’-এর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে, ১৯ মে আসছে হাসিনার অগ্রিম নিরাপত্তা দল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণ কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু শেষ মুহূর্তে ধোয়ামোছায় ব্যস্ত পরিচ্ছন্নকর্মীরা। চলছে ভবনের চারপাশের সবুজায়নের কাজও।
ভবনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেড বা এনবিসিসি আগামী ১৫ মে অথবা ১৬ মে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করতে পারবে। দ্য ডেইল স্টারকে এমন তথ্য জানালেন সংস্থার প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ (সিভিল) চন্দন সেন।
তিনি আরও জানালেন, মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে তারা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন। এই কাজে প্রতিদিন গড়ে ২০০ নির্মাণশ্রমিক যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফের অগ্রিম দল ১৯ মে শান্তিনিকেতন এসে পৌঁছোবে। ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর নিরাপত্তার ভার নেওয়ার পাশাপাশি ওই দল শান্তিনিকেতন, আসানসোলের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখবে। কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের দায়িত্বশীল সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিশ্বভারতী ও বাংলাদেশ উপদূতাবাসের নিরাপত্তাবিষয়ক সূত্র আরও জানায়, ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর দ্বারোদ্ঘাটক করবেন। এমনকি, ভবনের অভ্যন্তরে অডিটোরিয়ামে এই উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের যোগ দেবেন তাঁরা। সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেবেন।
গত ৯ মে ‘বাংলাদেশ ভবন’ ঘুরে জানা যায়, দুই বিঘা জমির ওপর ভবনটির আয়তন চার হাজার একশ বর্গ মিটার। ভবনের অভ্যন্তরে দুটি সেমিনার হল (২৬৪ বর্গ মিটার), একটি লাইব্রেরি (১১৫ বর্গ মিটার) এবং দুটি স্টাডি সেন্টার রয়েছে। মোট ৪৫৩ জন একসঙ্গে বসে অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে ৬০০ বর্গ মিটারের বিশ্বমানের একটি অডিটোরিয়ামও। শব্দ নিরোধক, অত্যাধুনিক আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সেখানে বসানো রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে একটি যাদুঘরও।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ভবনের প্রবেশদ্বারের সামনে থাকা লিফট সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে সেই লিফট এখনও সেখানে রয়েছে।
এমনকি, সেখানে বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি ভাস্কর্য স্থাপনের অনুরোধও করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ কিংবা অন্য যেকোনো ভাস্কর্য তৈরির কোনও বিধান নেই। ফলত ভাস্কর্যের বিকল্প হিসেবে ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই দিকে দুই দেওয়ালে বসানো হবে বঙ্গবন্ধু ও বিশ্বকবির দুটো মুর্যাল। বাইরে মুর্যাল তৈরির কাজ চলছে। সেটি তৈরি করে খুব শিগগিরিই দেওয়ালে বসানো হবে।
শুধু তাই নয়, ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর অভ্যন্তরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে একটি শহীদ মিনারও তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই সেটি তৈরি করা হবে। দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন- বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজ কলি সেন।
গত ৯ মে শান্তিনিকেতনের ‘বাংলাদেশ ভবন’ ঘুরে দেখেন কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের চার কর্মকর্তা। তারা হলেন, হেড অফ চ্যান্সারি বিএম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর মনছুর আহমেদ বিপ্লব, প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল এবং প্রথম সচিব (ক্রীড়া ও শিক্ষা) শেখ ইমাম।
ভবনের নির্মাণ কাজ দেখে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। দ্য ডেইলি স্টারকে এই বিষয়ে বিএম জামাল হোসেন বলেন, “আগামী ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এই ভবনের উদ্বোধন করবেন। তাই আমরা ভবনের নির্মাণ কাজ এবং এখানে নিরাপত্তারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি।”
এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতিকে তারা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন- যোগ করেন কাউন্সিলার মনছুর আহমেদ বিপ্লব।
ভবন উদ্বোধনের সময় বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারেন কিনা সে বিষয়েও ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন প্রথম সচিব (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল।
Comments