সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ নিয়ে যাচ্ছি, বললেন চিত্রনায়ক আলমগীর
‘প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাকের নামাঙ্কিত পুরস্কারটি আমি কলকাতা থেকে নিয়ে যাচ্ছি বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ হিসেবেই। আমি গর্বিত রাজ্জাক সাহেবের নামে এই পুরস্কার পেয়ে। তবে সৌমিত্রদার সঙ্গে এক মঞ্চে এই সম্মাননা পাবো, কোনদিনও তা ভাবিবি। তাই আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি,’- কলকাতার বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন চেম্বার অফ কমার্স বিএফটিসিসির দেওয়া আজীবন সম্মাননা পেয়ে এভাবেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা এবং রাজ্জাককে স্মরণ করলেন চিত্রাভিনেতা আলমগীর।
গতকাল (১ মে) সন্ধ্যায় কলকাতার একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বর্ষীয়ান এই অভিনেতাকে আজীবন এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মঞ্চে মানপত্র পড়ে শোনান বাংলাদেশের মডেল তারকা ইশরাত পায়েল। সেখানে পড়ে শোনানো হয় নয় বারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাকের সব চির সবুজ চলচ্চিত্রের নাম। তাঁর মতো একজন গুণী অভিনেতাকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে নায়করাজের নামে আজীবন সম্মাননা দিতে পেরে আয়োজক সংস্থা গর্বিত বলেও মানপত্রে জানানো হয়।
মানপত্র পড়ে শোনানোর সময়ই অভিনেত্রী ঋতুপূর্ণা সেনগুপ্ত আয়োজকদের পক্ষ থেকে ফেরদৌস হাসান উত্তরীয় ও ক্রেস্ট নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। নায়ক আলমগীর মঞ্চে উঠছেন, আর সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা-অভিনন্দন জানান।
সম্মাননা পেয়ে আলমগীর বলেন, ‘এটি আমার জন্য সৌভাগ্যের। এক মঞ্চে আমার শ্রদ্ধাভাজন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কেও দেওয়া হলো হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননা। আর আমি পেলাম, রাজ্জাক সাহেবের নামের আজীবন সম্মাননা।’
আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ছিল প্রথম পর্বে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন আয়োজক সংস্থার সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, তপন রায়, শতরূপা স্যানাল প্রমুখ। যদিও চলচ্চিত্র উৎসে উদ্বোধন-পর্ব খুব বেশি সময় দীর্ঘ ছিল না। কারণ দর্শক-সারিতে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার জন্য প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপূর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রাণী দত্ত, কৌশিক সেন, ক্ষুদে অভিনেতা ঋদ্ধি সেনের মতো তারকা-মহা-তারকারা। তাঁদের হাত দিয়ে দর্শকাসনে বসা কিংবদন্তি দুই অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং আলমগীর।
তাই দ্রুত প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান শেষে ডাকা হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননার দেওয়ার জন্য। তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
তাঁদের হাত থেকে সম্মাননা পেয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘হীরালাল সেনের মতো একজন মহান ব্যক্তির নামের এই সম্মাননা আমায় আরও কৃতজ্ঞ করল। আমি অভিভূত এবং আনন্দিত।’
আলমগীর ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা চলচ্চিত্র নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, সাংবাদিক ড. সোমা এ চ্যার্টাজি এবং চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কাটেশ মুভিজ।
তবে সবারই দৃষ্টি ছিল আলমগীরের দিকে। আর তাই প্রসেনজিৎ থেকে ঋতুপর্ণা কিংবা পাওলি দাম- সবাই উচ্ছ্বসিত হলেন। বললেন তাঁদের মনের কথা।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আলমগীর এমন একজন অভিনেতা যাঁর অভিনয় জীবন প্রায় পঞ্চাশ বছর। বাংলা চলচ্চিত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে আরেক কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের নামে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া- আমরা যারা এই ক্ষেত্রে কাজ করি, তাঁরা সবাই গর্বিত হয়েছি।’
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, তারও খুব ভাল লাগছে নিজের হাতে বর্ষীয়ান ওই অভিনেতাকে তিনি এই সম্মাননা তুলে দিতে পারলেন।
বিগত বছর গুলোতে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, তরুণ মজুমদারের মতো বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা পেয়েছেন বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন চেম্বার অফ কমার্সের দেওয়া ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভম্যান্ট’।
সংস্থার মুখপত্র শতরূপা সান্যাল জানান, আগামীতে নায়ক রাজ রাজ্জাকের নামাঙ্কিত এই আজীবন সম্মাননা পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও পাবেন।
Comments