হোলির রঙে রঙিন পশ্চিমবঙ্গ
প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলছে দোল পূর্ণিমার ‘হোলি উৎসব’। তবে এই উৎসবের রঙিন ছটা অন্য রাজ্যের চেয়ে যেন বেশি ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে তথা সর্বত্র। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে জেলা শহর, নানা রঙে রঙিন মুখ-পোশাক-রাজপথ। উৎসবে সামিল কচিকাঁচা থেকে তরুণ-প্রবীণ। বাদ নন, রাজনীতিক থেকে সেলিব্রেটি অথবা রাজ্যের প্রভাবশালী আমলারাও।
হিন্দুধর্ম মতে, দ্বাপর যুগে এই দিনে মথুরার বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার প্রেমিকা রাধার সঙ্গে এভাবে হোলি খেলেছিলেন। শাশ্বত সেই প্রেমকাহিনী বাঙালি-অবাঙালির হৃদয়ে আজও লালিত। প্রেম শুধুই ভালবাসা, প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই নয়, বরং মানুষে-মানুষে মানুষে-প্রকৃতি কিংবা মানুষের সঙ্গে প্রাণিজগতের প্রেমই এখানে প্রধান হিসেবে বিবেচ্য হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। আর সেই চিরন্তনী মেনেই আজ এমন ‘হোলি উৎসব’।
কলকাতার অদূরে নিউটাউনের রবিতীর্থ, দমদম পার্ক কিংবা বারাসাত। অথবা খোদ কলকাতার মানিকতলা, ধর্মতলা, শ্যামবাজার কিংবা দক্ষিণ কলকাতার বজবজ, গড়িয়াহাট কিংবা বেহালা অঞ্চলের রাজপথ ছিল নানা রঙের আবিরে বর্ণময়। সব মানুষের মুখগুলো যেন আজ একই ছাঁচে, একই রঙে রঙিন। কেউ লাল, তো কেউ হলুদ-নীল মেশানো আবির মেখেছেন মুখে। আবার কেউ গেরুয়া বর্ণে রাঙানো মুখ নিয়ে পথে নেমেছেন, সমবেত হয়েছেন কিংবা রয়েছেন বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে আবির খেলার মুডে। নানা রঙের পোশাকগুলোও যেন আজ আরো রঙিন।
হোলি উদযাপনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছিল নাচ-গান ও কবিতা আবৃত্তির আসর।
পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ রাজনীতিকরাও এদিন রঙের খেলায় মেতে উঠেছিলেন। যেমন, রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উত্তরকলকাতায় নেমে পড়েছিলেন আবির খেলায়। নিউটাউনের রবিতীর্থে পাওয়া গেলো রাজ্য সরকারের এক বর্ষীয়ান সচিব দেবাশীস সেনকেও। রঙিন মুখ নিয়ে তিনিও উচ্ছ্বসিত।
প্রতিবারের মতো এবারও কলকাতার টালিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও যার যার এলাকায়, পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আবির খেলেছেন। যেমন, অভিনেত্রী অপরাজিত আঢ্য।
এ উৎসব নিয়ে বলতে গিয়ে মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের মনের মধ্যে যে রঙ থাকে। সেই রঙটি আজ ছড়িয়ে দেওয়ার দিন। সব দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভুলে রঙিন হওয়ার দিন আজ।
প্রভাবশালী আমলা দেবাশীষ সেন, যার হাত ধরেই পৃথিবীর বুকে অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে কলকাতার অদূরের উপশহর নিউটাউন-রাজারহাট সেই ব্যক্তি বলছেন, “বছরের এই দিনের জন্য সবাই যেমন অপেক্ষা করেন আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আজ রঙিন হওয়ার দিন, রাঙানোরও দিন।”
এদিকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতনেও হোলি উৎসব চলছে। যদিও এ দিনটিকে তারা বসন্ত উৎসব হিসেবে উদযাপন করে আসছেন।
এদিনও সেই বসন্ত উৎসবে ছিলো নানা আয়োজন। সকালে বৈতালিকের মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশ থেকে আসা অতিথিরা নৃত্যের তালে তালে পা মেলান বিশ্বভারতীর চত্বরে।
যদিও রং নিয়ে কলকাতা ও রাজ্য জুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।
হোলি উৎসবে যোগ দিয়ে আবির খেলার সময় গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজ্য সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও মদ্যপ হয়ে আবির খেলার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজার আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, জোর করে রঙ দেওয়ার অভিযোগ পেলেই গ্রেফতার হবেন অভিযুক্ত রং-বাজ।
Comments