বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বিক্রিতে শীর্ষে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস
আজ (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্দা নামবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম বইয়ের আসর ‘কলকাতা পুস্তক মেলা ২০১৮’-এর। শেষ মুহূর্তে মেলায় বই বিক্রি ও পাঠকদের আগমন- দুই জমে উঠেছে।
মিলন মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরে বই মেলা অস্থায়ীভাবে নতুন জায়গা পেয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে। জেলা হলেও কলকাতার সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে অভিজাতদের এলাকা বলে পরিচিত এই সল্টলেকে।
প্রথম দিকে মেলা জমবে কিনা- এ নিয়ে বির্তক থাকলেও মেলার শেষ সন্ধ্যা এগিয়ে আসতেই পাঠক-ক্রেতা-বিক্রেতাদের সবার মনের ওই শঙ্কাও দূর হয়েছে ক্রমশ। মেলার শেষ দিনের আগে ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় মানুষের ঢল ছিলো মেলায়। বিশেষ করে বাংলাদেশ প্যভিলিয়নে সেই সন্ধ্যায় ক্রেতা-দশনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
আয়োজকরা জানালেন, এবার প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি বিক্রি হয়েছে অন্যান্য ‘আত্মজীবনী’ কিংবা ‘ইতিহাস নির্ভর’ বইয়ের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের সচিব মহম্মদ সওকত নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০টি শিরোনামের বই নিয়ে এসেছি কলকাতা বই মেলায়। কলকাতার পাঠক এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। এছাড়াও, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বই বিক্রি হয়েছে প্রচুর।”
প্যাভিলিয়ন ঘুরে জানা গেল, বাংলাদেশি লেখকের মধ্যে এবার চাহিদার শীর্ষে ছিলো প্রয়াত কথা-সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাস। হিমু কিংবা মিসির আলি সিরিজের বইয়ের পাঠক প্রিয়তা বোঝা যাচ্ছে সেসব বই বিক্রির হার দেখেই।
অনন্যা প্রকাশনীর বাবুল হোসেন জানালেন, “দিন শেষে বই বিক্রির হিসাব কষলে দেখছি ৮০ শতাংশ বই বিক্রি হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের। বাকি ২০ শতাংশ বইয়ের মধ্যে ১০ শতাংশ অন্য লেখক আর বাকি অন্যান্য বই।” শুধু বাবুল হোসেন নন, মেলার অন্য স্টলগুলোর বিক্রেতাদের বক্তব্যও প্রায় একই রকম।
তবে মেলায় ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক বাংলাদেশি বইও বিক্রি হয়েছে প্রচুর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি সাহদাৎ উল্লাহ দাবি করলেন যে, “কলকাতা বই মেলা কলকাতার যে প্রান্তেই হোক। তাতে তাদের ইসলামী বই বিক্রিতে প্রভাব পড়ে না। এবারও প্যাভিলিয়নের মোট বই বিক্রির নিরিখে বেশ ভালো সংখ্যক বই বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।”
“এবার বাংলা একাডেমির বাংলা অভিধান, জেলার ইতিহাস কিংবা ভাষা-ভিত্তিক বইও বিক্রি হয়েছে অনেক। বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি কলকাতার পাঠকদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী হয়তো বাংলাদেশের প্রকাশকরা বই আনছেন না কলকাতায়। সেটা যদি তারা কিংবা আমরা করতে পারি তবে কলকাতার পাঠকদের কাছে আমাদের বইয়ের একটা স্থায়ী জায়গা হবে,” যোগ করলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং লন্ডন বই মেলার পর কলকাতা বই মেলা হচ্ছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম। আর এশিয়ার মধ্যে এই মেলা সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বইয়ের আসর হিসেবে পরিচিত। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই মেলার দরজা বন্ধ হবে।
আজ সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে ৪২তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলা। গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং ফ্রান্সের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ৪২বার হাঁতুড়ি পিটিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যদিও পরদিন ৩১ জানুয়ারি দুপুর থেকে মেলার প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯টি দেশ এবারের এই আন্তর্জাতিক বই মেলায় অংশ নিচ্ছে।
ঢাকার ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলের আদলে এবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুট জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। বাংলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর প্রকাশনা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, অনন্যা, বাংলা প্রকাশ, অবসর প্রকাশন, পাঠক সমাবেশ, বিজয় ডিজিটাল, চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগামী, মদীনা পাবলিকেশনস, কথা প্রকাশ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস, দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, সিসটেক পাবলিকেশনস, ভাষাচিত্রসহ মোট ৪২টি বাংলাদেশি প্রকাশনী সংস্থা কলকাতা বই মেলায় অংশ নিয়েছে।
Comments