‘আমার প্রতি সালমানের ভালোবাসা মানতে পারেননি তাঁর মা’

Salman Shah and wife Samira
সালমান শাহ ও তাঁর স্ত্রী সামিরা। ছবি: সংগৃহীত

সালমান শাহ খুন হয়েছেন না কি আত্মহত্যা করেছিলেন? ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ-এর মৃত্যু নিয়ে জট খুলেনি আজও। সালমানের পরিবার এই মৃত্যুকে খুন বলে দাবি করে আঙুল তুলেছেন সালমানের স্ত্রী সামিরা ও তাঁর পরিবারের উপর। সন্দেহভাজন রয়েছেন আরও কয়েকজন। সেইসব বিষয় নিয়ে সামিরা আজ (১৭ আগস্ট) বিস্তারিত কথা বলেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে।

সামিরা বলেন, “আমার মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটিই সত্যি যে সালমান আত্মহত্যা করেছে। আবেগের জায়গা থেকে এটাকে খুন বলা হলেও এর কোনো প্রমাণ কিন্তু নেই। সালমানের মা, ভাই ও তাঁর মামারা এটিকে খুন বলে দাবি করছেন। তাঁরা বেশ কিছু প্রশ্নও রেখেছেন দেশবাসীর সামনে আমাকে উদ্দেশ্য করে। এর মধ্যে রয়েছে যে আত্মহত্যা করলেও সালমানের মুখ কেন বিকৃত হয়নি? ফাঁসি নিলে সালমানের শরীর কেন পরিষ্কার ছিলো? সালমানকে কেন জলদি হাসপাতালে নেয়া হয়নি? কেন তার শরীরে তেল মালিশ করা হচ্ছিলো? সালমান মালবোরো গোল্ড সিগারেট খেতেন। তাঁর ঘরে ডানহিলের প্যাকেট কী করে এলো? সালমানের লাগেজে কেন চেতনানাশক ওষুধ পাওয়া গেল? সেখানে কেন ভেজা তোয়ালে ছিলো? কেন আত্মহত্যার দিন সকালে সালমানের বাবাকে সালমানের সঙ্গে দেখা করতে দেননি সামিরা? আরও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে।”

“সালমানের মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো প্রচারণা চাইনি। এ নিয়ে আমি কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ি হোক তাও চাইনি। তবু আজ যখন কথা বলছি কিছু প্রশ্ন সালমান ভক্তদের কাছে রেখে যেতে চাই। তাদের মনে একতরফাভাবে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়েছে। সেসব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যেতে চাই। যে উত্তরগুলো আমিও পাইনি বা পাচ্ছি না। কি অবস্থায় থাকলে মুখ বিকৃত হয়? সালমান আনুমানিক বিশ মিনিটের মতো ঝুলন্ত ছিলো। সেজন্যই হয়তো বিকৃত হয়নি। সালমানের চোখ খোলা ছিলো। আমি কাজের লোকদের সঙ্গে নিয়ে লাশ নামানোর পর ওর চোখ বন্ধ করেছি।”

“তার চেয়েও বড় কথা, সালমানের লাশের সুরতহাল বর্ণনা করেছিলেন রমনা থানার এসআই মো. মাহবুবুর রহমান। সেখানে আত্মহত্যাই বলা হয়েছিলো। আজ সালমানের পরিবার এতো প্রশ্ন করছেন, সন্দেহ করছেন তাঁর ছেলের খুন হওয়া নিয়ে। তবে তখন কেন এই সুরতহালে স্বাক্ষর করলেন সালমানের বাবা, ভাই ও আত্মীয়রা? কেন সেদিন তাঁরা এই সুরতহাল বেঠিক বলে এর প্রতিবাদ করেননি? সালমানের পোস্টমর্টেম হয়েছে দুবার। দুবারই তাঁর পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। দুবারই আত্মহত্যার রিপোর্ট এসেছ। যদি খুনই করা হতো তবে ভিন্ন কিছু আসেনি কেন? আর কেনই বা তাঁরা সেই রিপোর্ট মেনে নিলেন?” - প্রশ্ন সামিরার।

কেন সালমানকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, “যেদিন সালমান মারা গেল সেদিন বাসায় আমি আর কাজের লোক ছাড়া আর কেউ ছিলো না। যখন ওকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই আমরা চিৎকার চেঁচামেচি করে ওকে নামিয়ে আনি। সালমানের মাথা কোলে নিয়ে আমি কাঁদতে থাকি। চিৎকার শুনে লোকজন আসতে থাকে। সবাই দেখার চেষ্টা করছিলো সালমানের দম পড়ছে কি না। কেউ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিলো, কেউ তেল মালিশ করছিলো। বাসায় জমজমের পানি ছিলো সেটাও দেওয়া হচ্ছিলো। বাসায় কোনো ল্যান্ড ফোন ছিলো না যে তখনই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো। যে মোবাইলটি ছিলো সেটা সালমান আগেই এক ঝগড়ার সময় রাগে ভেঙে ফেলেছিলো। পাশের বাসা থেকে আমাদেরই প্রতিবেশি ইমনদের (সালমান শাহ) বাসায় কল দিয়ে তাঁর আত্মহত্যার খবর জানায়। সবাই ছুটোছুটি করছিলো আতঙ্কে, হতবাক হয়ে। আমিও তো শোকে হতবিহ্বল ছিলাম। তবে কেমন করে আমাকে দায়ি করা হয় সালমানকে দ্রুত হাসপাতালে না নেওয়ার জন্য?”

সিগারেটের প্যাকেট ও চেতনানাশক ওষুধের শিশি পাওয়া প্রসঙ্গে সামিরা জানান, “সালমানের আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তাঁরা ফাঁসির রশি, ফ্যানের ছবি নেন। সালমানের প্যান্টের পকেটে পাওয়া সালমানের চিরকুটটি জব্দ করেন। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে সবকিছু উলট পালট করে। যেখানে যা পেয়েছে সন্দেহ অনুযায়ী তাঁরা নিয়ে যান। বাসাটি সিলগালা করে চাবিও নিয়ে যায় পুলিশ। দু-তিনদিন পর ওই ফ্ল্যাটে মিলাদ পড়াবে বলে পুলিশের কাছে আবেদন করে চাবি নিয়ে আসেন নীলা চৌধুরী। এরপরই সিগারেটসহ নানা কিছু বের হয়।”

“তাঁরা দাবি করেন দরজায় দায়ের আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু তাঁদের দাবি পুলিশ গ্রহণ করেনি। নীলা চৌধুরী চাবি নিয়ে সেসব জিনিসপত্র ঢুকিয়েছেন বলে পুলিশ এগুলোকে আলামত হিসেবে আমলে নেয়নি। শাহ ভবনের মালিকানা কার নামে? সালমান শাহ কক্সবাজারে জায়গা কিনেছিলো। সেসব জায়গার খবর কী? আমার নামেও সে জায়গা কিনেছে। এ নিয়ে ওর মা মন খারাপ করেছিলো। সেই জায়গার কী খবর? ছেলের মৃত্যুকে খুন বলে চালিয়ে ধান্দা-ফিকির করে যাচ্ছেন, পাবলিসিটি নিচ্ছেন, রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনা করছেন, কিন্তু ছেলের নামে একটা কিছু গড়ে তুলতে পারলেন না কেন? রিজভী নামের একজনকে মিথ্যে সাক্ষী বানিয়ে লোক হাসানো হয়েছে। তখন সালমানের পরিবাররের উপর আইন-প্রশাসন বিরক্তি প্রকাশ করেছিল তদন্তের কাজে সময় নষ্ট করার জন্য।”

“সালমান ভক্তদের বুঝতে হবে, কেন এসব গল্প ছড়িয়েছে ইমনের পরিবার। কেবলমাত্র আমাকে ফাঁসানোর জন্য। ইমন আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো এটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি নীলা চৌধুরী। আর ইমনের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিলো না। ওর মা আমার গায়েও হাত পর্যন্ত তুলেছেন। সেই ঘটনার পর ইমন রেগে গিয়ে আমাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায় উনার কাছ থেকে।”

Comments

The Daily Star  | English

'No legal bar' to Babar's release after acquittal in another 10-truck arms case

He has now been cleared in both cases filed over the high-profile incident from 2004

2h ago