জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্যাস-বিদ্যুৎ-খাবার সংকটে এলাকার বাসিন্দারা

জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর পর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খড়ির চুলায় রান্না করছেন এক নারী। ছবিটি সিলেটের শিববাড়ির পার্শ্ববর্তী জৈনপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: শেখ নাসির

গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় সিলেটে নিজের ঘরে দিন কাটাচ্ছেন রাকিব আলি। জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই তাদের খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। টাকা রোজগারেরও কোন উপায় নেই তার। এমন অবস্থায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঝুপড়িতে অনিশ্চিত দিন কাটছে তার।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের এলাকার লোকজন। এখন তাদের মনে একটাই প্রশ্ন, কখন শেষ হবে এই দুঃস্বপ্ন?

পেশায় রিকশা চালক আলী (৫২) রাকিবের মতই নিজের ঘরে বন্দী দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি যেখানে থাকেন যে জায়গাটি ১৪৪ ধারার মধ্যে থাকায় রিকশা নিয়ে বের হতে পারছেন না। ফলে খেয়ে-পরে দিন কাটানোই এখন তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

জঙ্গি দমন অভিযান চতুর্থ দিনে গড়ানোর সাথে সাথে স্থানীয়দের সংকটও বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের সমস্যা আরও বেশি। খাবার পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ।

স্থানীয় সিরাজ মিয়ার কলোনি, মুনির মিয়ার কলোনি ও সানর মিয়ার কলোনিতে স্বল্প আয়ের লোকজনের বসবাস। প্রায় ৯০০ জন দিন মজুর থাকেন এখানে। নিরাপত্তার কারণে এই কলোনিগুলো সিল করে দেওয়া হয়েছে।

কলোনির লোকদের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা মইনউদ্দিন বলেন, “দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাতে রাত-দিন খাটতে হয় মানুষগুলোকে। কলোনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সবাই কাজ হারিয়েছেন।” তার আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অপরাধের দিকে ঝুঁকতে পারে এখানকার লোকজন।

আতিয়া মহলে কখন অভিযান শেষ হবে তার কোন কূলকিনারা না পেয়ে স্থানীয় জৈনপুর, পাঠানপাড়া, বান্দারঘাট, পটিয়াপাড়া, ও শিববাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে।

এই এলাকার হুসনা বেগম (৪৫) বলেন, অভিযান শুরুর পর থেকেই বাজার বন্ধ। এখন শুকনা খাবার খেয়ে দিন যাচ্ছে তার। “এখানে কোন বিদ্যুৎ নেই, গ্যাসও বন্ধ।”

“দিন রাত সারাক্ষণ গুলির শব্দ। রাতে ঘুমাতে পারি না। বেশিরভাগ সময়ই আতঙ্কে থাকি। এটা শেষ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি,” বলেন হুসনা বেগম।

স্থানীয় দেব মার্কেটের মালিক রবীন্দ্র কুমার দেব। গত শুক্রবার থেকে তারও মার্কেট বন্ধ। তিনি বলেন, “ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। আমাদের দেড়শো দোকান বন্ধ হয়ে আছে। কোন খাবার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কিছুই নেই।”

দ্য ডেইলি স্টারের সাথে কথা বলার সময় শিব বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মুজিব মিয়ার কণ্ঠেও একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল। “আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা অনিশ্চিত কখন অভিযান শেষে ব্যবসা চালু করতে পারবো।”

এলাকার সবচেয়ে পুরনো স্কুলগুলোর একটি মহালক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিরাপত্তার অভাবে বাচ্চাদের না পাঠানোয় স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে রয়েছে।

স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীমা জানান, শনিবার সে স্কুলে গিয়েছিল। সে বলে, “আমি ভয় পেয়ে যাই। তখন খুব জোরে জোরে শব্দ হচ্ছিলো। লোকজন এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছিলো।” স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শনিবার স্কুলে উপস্থিতি কম ছিলো। তার পরদিন থেকেই স্কুল বন্ধ রয়েছে।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

7h ago