বাসের কাউন্টারে নারী টিকেট বিক্রেতা

হাতিরঝিল এলাকায় টুরিস্ট বাসের টিকেট বিক্রি করছেন ববিতা সরকার।
হাতিরঝিল এলাকায় টুরিস্ট বাসের টিকেট বিক্রি করছেন ববিতা সরকার। ছবিঃ স্টার

বাসের কাউন্টারে বসে টিকেট বিক্রি করছেন একজন নারী - এই দৃশ্য কি কল্পনা করতে পারেন? বাংলাদেশের পুরুষ শাসিত সমাজে এমনটা হয়তো কল্পনাতীত। কিন্তু শুধু পুরুষরাই এই পেশায় থাকবে এমন প্রচলিত ধারনাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন আমাদের দেশেরই কয়েকজন নারী।

হেলেনা চিসিম, প্রিয়াঙ্কা রাণী, বৃষ্টি মানকিন, মৌসুমী থিগিডি, লিহিনা মাঝি, নূপুর, নুসরাত এবং ববিতা সরকার নামে কয়েকজন ছাত্রী হাতিরঝিল বাস কাউন্টারে টিকেট বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছেন। আমাদের সমাজের নারীরা তাঁদের চিরাচরিত ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসছেন। এই ঘটনা অন্তত তাই প্রমাণ করে।

জানুয়ারীতে এই কাজে যোগ দেন হেলেনা আর বৃষ্টি। প্রিয়াঙ্কা আর ববিতা শুরু করেন জুলাইতে আর মৌসুমী, লিহিনা, নূপুর আর নুসরাত বাসের টিকেট বিক্রির কাজে যোগ দেন আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে।

সপ্তাহে ছয় দিন সকাল সাতটা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাজ করেন তাঁরা।

হাতিরঝিলের এইচ আর ট্রান্সপোর্ট নিয়ন্ত্রিত স্পেশাল বাস সার্ভিসের সাতটি টিকেট কাউন্টার আছে। এই আটজন নারী সহ মোট পনেরো জন কাজ করেন কাউন্টারগুলোয়।

রক্ষণশীল সামাজিক মূল্যবোধ যেহেতু এখনও আমাদের সমাজে রয়ে গেছে শুরুতে তাই একটু চিন্তিতই ছিল এই নারীরা। কিন্তু কাজ শুরু করার পর সেই সন্দেহ দূর হয়ে গেছে তাঁদের।

“শুরুর দিকে কাজটা নিয়ে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, যেহেতু এখানে যারা আসেন তারা শিক্ষিত নন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম না আমাদেরকে তারা কিভাবে নেবে। কিন্তু ভাবলাম - কাজটা করেই দেখি,” সরকারী তিতুমীর কলেজের ছাত্রী হেলেনা চিসিম বলেন।

২০১০ সালে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন হেলেনা। শুরুতে কিছু সমস্যা হলেও সেগুলো থামাতে পারেনি তাঁকে।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা প্রিয়াঙ্কা রাণী বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময়টা কাটানোর জন্য এই কাজটা নেই আমি। ভাবলাম ছুটিতে কিছু টাকা যদি আয় করা যায়। এখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়ে আমার নিজের খরচ চলে যায়।”

টিকেট বিক্রির পাশাপাশি এই নারীদের ঘরের কাজ আর পড়াশুনার জন্য সময় বের করতে হয়।

পরীক্ষার আগে কারো ছুটি প্রয়োজন হলে অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যায় বলে জানান বৃষ্টি মানকিন।

পুরুষ সহকর্মীদের মতই চাপ নিতে হয় এই নারী কর্মীদের। সময় মত লাঞ্চ ব্রেক পাননা তাঁরা। আর টিকেটক্রেতাদের বাজে আচরণ তো প্রতিদিনের ঘটনা।

“একদিন বাস আসতে দেরি হওয়াতে একজন যাত্রী কোম্পানির বসিয়ে দেয়া পুতুল বলে আমাকে ধমক লাগান... আমার কিছুই করার ছিল না,” লিহিনা বলেন।

এই নারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হাতিরঝিল এলাকায় টয়লেট সুবিধা।

ববিতা জানান, “অফিসে ফোন করলে ওরা গাড়ি পাঠায়, আমরা সেখানে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করি।”

টিনের তৈরী এই বাস কাউন্টারগুলো দুপুরের দিকে প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে, কিন্তু এই কাউন্টারগুলোর ভেতরে কোন ফ্যান নেই।

“দুপুরে ব্যাপারটা অসহ্য হয়ে ওঠে,” ববিতা বলেন।

এইচআর ট্রান্সপোর্টের আটটি বাস প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল করে। হাতিরঝিলের টিকেট কাউন্টারগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হয়েছে।

টয়লেট এবং গরমের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করায় এইচআর বাস সার্ভিসের ম্যানেজার জাহাঙ্গির আলম বলেন, “হাতিরঝিল প্রকল্পের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তখন আর এই সমস্যা থাকবেনা।”

তিনি আরো জানান এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা এখানে স্থায়ী টিকেট কাউন্টার তৈরী করবেন যেখানে সব ধরনের সুবিধা থাকবে। আর এই মুহুর্তে এইচআর বাস সার্ভিস এখানে সাময়িক ভাবে টিকেট কাউন্টার বসিয়েছেন।

মেয়েদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তাঁদের সকালের সময়টাতেই কাজ দেয়া হয়েছে বলেও জানান জাহাঙ্গির।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago