বৃষ্টিতে পুরো বাগেরহাট শহর যেন জলাশয়

বৃষ্টিতে জলমগ্ন বাগেরহাট পৌর ভবন। ছবি: স্টার

বৃষ্টি কম হোক বা বেশি, জলাবদ্ধতা যেন বাগেরহাট শহরের নিত্যসঙ্গী। অল্প বৃষ্টিতেই শহরের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, খেলার মাঠ এমনকি সরকারি অফিসও পানির নিচে চলে যায়। কয়েকদিন ধরে স্থায়ী পানি জনজীবনকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে।

শুধু এক-দুটি এলাকা নয়, শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, জেলা হাসপাতালের সামনের সড়ক, ডাকঘর এলাকা, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের এলাকা পর্যন্ত জলমগ্ন হয়ে পড়ে। 

সামান্য এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায়।

খারদ্বার এলাকার বাসিন্দা শুভ সাহা এমন ভোগান্তিতে পড়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হয় যেন আমরা পুকুরে বাস করি। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে পড়ে, কয়েকদিনেও নামে না। ভাড়াটিয়ারা থাকতেই চায় না। আমরা এই দুর্ভোগ থেকে বের হতেও পারছি না।'

জুলাই মাসে টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। 

বাসাবাটি এলাকার বাসিন্দা আশীষ হোড় বলেন, 'বৃষ্টি হলেই ঘরের চারদিকে পানি জমে যায়। কোথাও যাওয়ার উপায় থাকে না। বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যেতেও পারি না।'

বাগেরহাটের এই জলাবদ্ধতা নতুন কিছু নয়—গত এক যুগ ধরে শহরের মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগেরহাট দেশের অন্যতম পুরোনো প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। অথচ, নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।'

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট পৌরসভার আয়তন প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার। বাসিন্দা এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি। কিন্তু প্রতি বৃষ্টিতেই থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন, যা টেকসই পরিকল্পনা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার ঘাটতির পরিষ্কার ইঙ্গিত।

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা জলাবদ্ধতার জন্য তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করছেন। প্রথমত, শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব ও দড়াটানা নদীতে পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত গেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় রয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, শহরের ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

তৃতীয়ত, শহরের পাঁচটি খাল প্রায় দখল হয়ে গেছে এবং যা কিছু বাকি আছে, তাও আবর্জনায় ভরপুর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক এসকে হাসিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরের রাস্তা, খাল, ড্রেন—কোনোটাই ঠিকঠাক নেই। এই শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।'

জানতে চাইলে বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, 'আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। ড্রেন ও খালে ময়লা জমে যাওয়াই এখানে মূল সমস্যা। শহর রক্ষা বাঁধের গেটগুলোর অবস্থাও দুর্বল। শিগগির পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

পৌর প্রশাসক ডা. ফখরুল হাসান বলেন, 'কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago