এশিয়া কাপে কেন প্রতিবছর একই গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান?

India & Pakistan
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি

এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের একই গ্রুপে থাকা নতুন কোন খবর নয়, বরং বেশ কয়েক বছর ধরেই চলা অবধারিত বাস্তবতা। ভারত-পাকিস্তান যাতে পরের রাউন্ডে যেতে পারে সেজন্য তাদের গ্রুপে আর কোন বড় দলও রাখা হয় না। এই অলিখিত নিয়ম নিরপেক্ষ দর্শক হিসেবে আপনি অপছন্দ করতে পারেন কিন্তু এর ভিন্নতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এমনকি এশিয়ার বাকি তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বোর্ডকেও এই ফরমেশন নিয়ে কখনো আপত্তি জানাতে দেখা যায় না। কেন দেখা যায় না এর পেছনেই আসলে আছে বড় বাণিজ্যিক স্বার্থ। সেই ব্যাখ্যাই একটু করা যাক।

২০০৪ সালে এশিয়া কাপে যখন প্রথমবার গ্রুপ পর্ব নিয়ে আসা হয় তখন ভারত ও পাকিস্তান ছিলো আলাদা গ্রুপে। এরপর গ্রুপ পর্বের ফরম্যাটে যতবার এই আসর হয়েছে প্রতিবারই ভারত-পাকিস্তান ছিলো একই গ্রুপে। মাঝে তিন আসরে গ্রুপ পর্ব ছিলো না, সবাই সবার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এশিয়া কাপ তো বটেই এমনকি আইসিসি ইভেন্টগুলিতে একটি কৌতূহলী প্যাটার্ন দেখা গেছে। ভারত-পাকিস্তান যেন মুখোমুখি হয় এই এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বৈরিতায় ২০১৩ সাল থেকে দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ বন্ধ। যত বৈরিতা তত যেন এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াই ঘিরে বাড়তি রসদ, খেলার মাঠে রাজনৈতিক উত্তেজনা। উপমহাদেশের আবেগীয় দর্শকদের কাছে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও বিদ্বেষ বিক্রির সুযোগ পুরো কাজে লাগিয়ে চলেছে মার্কেট।

আইসিসি বা এসিসির ইভেন্টের সম্প্রচার সত্ত্ব যারা কেনেন তাদের চাহিদাই থাকে এই দুই দলের এক বা একাধিক ম্যাচ।

নির্ধারক যখন বাণিজ্যিক দৈত্য

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ম্যাচগুলো কেবল ক্রিকেট খেলা নয়; এগুলো 'গ্লোবাল ক্যাশ কাউ'। এই লড়াই ক্রিকেট বোর্ড ও ব্রডকাস্টারদের জন্য অভূতপূর্ব দর্শকসংখ্যা ও রাজস্ব নিয়ে আসে।  সংখ্যাগুলো একটু তুলে ধরলে বিষয়টা সহজ হতে পারে।

এশিয়া কাপের কথা ভাবুন: চারটি সংস্করণের (২০২৪-২০৩১) মিডিয়া স্বত্ব প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলারে কিনেছে সনি পিকচার্স নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া। বাংলাদেশি টাকার অঙ্কে যা দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এই বিপুল অর্থের বেশিরভাগই উঠে আসবে ভারতের বাজার থেকে। সনি এই বিনিয়োগ করেছে দুই ক্রিকেট পরাশক্তির উপস্থিতি ও পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করেই।

গত এশিয়া কাপে ভারত- পাকিস্তানের একটি ম্যাচে ২ কোটি ৮০ লাখ দর্শক নিবন্ধিত প্লাটফর্মে দেখেছেন। ধারণা করা হয় সব প্লাটফর্ম মিলিয়ে দুদলের সেই লড়াই অন্তত সাড়ে তিন কোটি মানুষ সরাসরি দেখেছেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। ভারত-পাকিস্তানের ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেছেন ৫ কোটি ৩০ লাখ দর্শক। বিশাল দর্শক সম্পৃক্ততার কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা এসব ম্যাচে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এসিসির আয়ের বেশিরভাগই উঠে আসে এই ম্যাচ ঘিরে। একটা আসরে যদি দুটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকে তাহলে আর তাদের চিন্তা নেই। তিনটি হলে তো পোয়াবারো অবস্থা আরকি।

কেন মেনে নিচ্ছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান

ভারত-পাকিস্তান যখন সহযোগী সদস্য দল নিয়ে সহজ গ্রুপে থাকে স্বাভাবিকভাবেই অন্য গ্রুপ হয় কঠিন। যেখানে নিয়মিতভাবে থাকছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। তিন টেস্ট খেলুড়ে দলের মধ্যে অন্তত এক দলের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়।

অবধারিত ফরম্যাটে প্রতি বছর নিজেদের বাড়তি ঝুঁকির পরও কেন এই তিন দেশ আপত্তি জানায় না? এখানেই আসলে বাণিজ্যিক স্বার্থ। কারণ এসিসির এক আসর থেকে আয়ের ১৫% শতাংশ পায় পূর্ণ সদস্য বোর্ড। অর্থাৎ এসিসির আয় যত বেশি হবে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের প্রাপ্তিও তখন তত বেশি হয়। 

এশিয়া কাপ কেবল একটি খেলার প্রতিযোগিতাই নয়; এটি এসিসি এবং এর সদস্যদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইঞ্জিন। ভারত ও পাকিস্তানের ইচ্ছাকৃত গ্রুপে রাখা একটি পরিকল্পিত কৌশল, যার ফলে অপরিহার্য সম্প্রচার রাজস্ব সুরক্ষিত হয়।

পুরুষদের এশিয়া কাপ না হলে এসিসি অনেকটাই অকেজো সংগঠনে পরিণত হবে। আর এশিয়া কাপের  কোনো আসরে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ না থাকলে আয় হয়ে পড়বে সীমিত। এসিসি এই দুই দেশের একাধিক ম্যাচ নিশ্চিত করতে গিয়ে যে পথে হাঁটে তা বেশ দৃষ্টিকটু। এই নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠলেও লাভ হয়নি।

এশিয়া কাপের সময়ে প্রচারটাও এমনভাবে করা হয় যেন ভারত-পাকিস্তানই খেলছে, বাকিরা আছে কেবল শোভাবর্ধনের জন্য। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ কাভার করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে তেমন অভিজ্ঞতা পেতে হয়েছিলো। 

ভারত-পাকিস্তানের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ ফিরলে হয়ত পরিস্থিতির বদল হতো। সেক্ষেত্রে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের আয় পেত আয়োজক বোর্ড। দেখা যাচ্ছে এদের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ না হলে বরং লাভবান হচ্ছে এসিসি ও আইসিসি। তবে ক্রিকেট সংস্কৃতির জন্য তা কতটা লাভের হচ্ছে সেই প্রশ্ন থাকছে। 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago