ফিরে দেখা জুলাই গণঅভ্যুত্থান

জুলাই ২৩: কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন, ঢালাও গ্রেপ্তার, সীমিত পরিসরে ফিরল ইন্টারনেট

ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলি-ছররা গুলিতে আহত রোগীদের কয়েকজন। ছবি: স্টার

চব্বিশের ২৩ জুলাই কারফিউয়ের চতুর্থ দিন সকাল থেকে ঢাকার সড়কে মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল কিছুটা বাড়লেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহল একইরকম ছিল।

এদিন কোটার সংখ্যায় পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংবাদ সম্মেলন করেন চার মন্ত্রী। রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়।

পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশজুড়ে গ্রেপ্তার হাজার ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ ও র‍্যাব। তারা এটিকে 'সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে' অভিযান বলে বর্ণনা করে।

এ সময় কোটা আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার, হয়রানির সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া, অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের একটা বড় অংশই ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হতে থাকে এ সময়।

নেতাকর্মীদের এভাবে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হেনস্থা করার জন্যই কাল্পনিক অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন তিনি।

বিভিন্ন জেলায় কারফিউ শিথিল

২৩ জুলাই বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কারফিউ শিথিল করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন।

এর মধ্যে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়।

চট্টগ্রামে এ সময়সীমা ছিল সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সকাল ১১টায় কারফিউ শিথিলের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীবাহী কিছু বাস চলাচল শুরু করে।

খুলনায় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। এছাড়া, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, মাগুরা, ভোলা, নীলফামারী, নোয়াখালী গোপালগঞ্জ, পাবনা ও রংপুরেও কারফিউ শিথিল ছিল এদিন।

ঢাকার আট থানার ওসি বদলি

২৩ জুলাই ঢাকার আট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বদলির আদেশ আসে। থানাগুলো হলো—ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, দারুস সালাম, তুরাগ ও কামরাঙ্গীরচর।

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হুমকি

এদিন সংবাদ সম্মেলনে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগের দিন সন্ধ্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেন।

আনিসুল হক বলেন, 'সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন করেছে। রায়ের কিছুই পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি। এর বাইরে যাওয়ার কোন অভিপ্রায়ও আমাদের নেই।'

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, 'আশা করি এখন আর নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি করা হবে না এবং পরিস্থিতিরও আর অবনতি হবে না। তবে যদি অবনতির চেষ্টা কোনো অপশক্তি করে সে বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি আহ্বান জানাবো যে ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছে সংস্কার চেয়ে, এখন তাদেরও কর্তব্য আছে। এখন তাদের স্ব স্ব জায়গায় ফিরে পড়াশোনা করা উচিত।'

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দফা

আইনমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সংগঠকরা। উপস্থিত ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মাহিন সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোটা আন্দোলন ঘিরে যে রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

সারাদেশে কারফিউ প্রত্যাহার, ইন্টারনেট সংযোগ চালু, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও সারা দেশের সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানানো ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে। দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বলা হয়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এই চার দাবি না মানা হলে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

ইন্টারনেট চালু

২৩ জুলাই রাত ৮টার পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগগুলো চালু হতে শুরু করে।

এদিন বিকেলে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, রাত থেকেই সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু হবে। আপাতত ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই সেবা চালু হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh welcomed 20 percent US tariff

Bangladesh gains edge after US tariff cut

Trump admin has reduced tariffs on Bangladeshi goods from 35% to 20%, a move expected to strengthen the country’s competitiveness against rivals such as India and Vietnam

8h ago