বৃষ্টি মানেই নৌকার চাহিদা: বাগেরহাটের বাঁধাল বাজারে বাড়ছে ক্রেতার আনাগোনা

নৌকা দেখে পছন্দ করে কারিগরদের অগ্রিম চাহিদার কথা জানান ক্রেতারা। ছবি: স্টার

বর্ষার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের নদী-খালগুলো পানিতে টইটম্বুর। সেইসঙ্গে জমে উঠেছে বাগেরহাটের কাঠের নৌকার অন্যতম বাজার কচুয়ার বাঁধাল বাজার। 

সম্প্রতি সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুর সড়কের পাশে নতুন নৌকা সাজিয়ে বসেছেন টেংরাখালী গ্রামের কারিগররা। প্রতিটি নৌকায় লেখা মোবাইল নম্বর—ফোন করলেই চলে আসে কাঙ্ক্ষিত নৌকা।

এসব কাঠের নৌকা তৈরি করছেন স্থানীয় দক্ষ কারিগররা।  কারিগর আলতাফ শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন একটি নৌকা তৈরি করতে পারি। অর্ডার বেশি হলে সহকারী নিয়ে একাধিক বানাই। একেকটি নৌকা বানাতে খরচ পড়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকা, বিক্রি করি চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়।'

মোরেলগঞ্জ থেকে নৌকা কিনতে আসা আব্দুল লতিফ একটি নৌকার পাশে লেখা নম্বরে ফোন দিয়ে অর্ডার দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার দরকার মজবুত একটা নৌকা, যা দিয়ে বৃষ্টির সময় মাছ ধরা আর চলাচল দুটোই করা যাবে। এসব নৌকা টেকসই এবং পানিতে ভারসাম্য ভালো রাখে।'

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী থেকে আসা হোসেন আলী বলেন, 'বন্ধুর কেনা নৌকা দেখে এখানে আসি। নিজে গিয়ে কারিগরের সঙ্গে কথা বলে আমার মাপ মতো নৌকা বানানোর অর্ডার দিয়েছি। দোকানে গেলে এতটা সুবিধা হতো না।'

কারিগর রুহুল শেখ জানান, 'আমাদের নৌকা দেখে অনেকে নম্বর নিয়ে যান। পরে ফোনে অর্ডার দেন। মোরেলগঞ্জের পোলেরহাট, দৈবজ্ঞহাটী, রামপাল, চিতলমারী এমনকি পিরোজপুরের ভাইজোড়া থেকেও ফোন আসে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্ষাকালে আমাদের বিক্রি বাড়ে। প্রতি মাসে ৫০-৬০টি নৌকা বিক্রি করি। কেউ মাছ ধরেন, কেউ পণ্য পরিবহন করেন, আবার কেউ পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা পেরোতে ব্যবহার করেন।'

টেংরাখালীর আরেক কারিগর মাকফুর শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই পেশাতেই আমরা এখন স্বাবলম্বী। শহরে গিয়ে কাজ খুঁজতে হয়নি, বরং এখানেই রোজগার করছি, এখানকার সংস্কৃতি ধরে রাখছি।'

চিতলমারীর কৃষক নূর ইসলাম বলেন, 'এখানে নৌকা দেখে কারিগরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারি। কোন জমির জন্য কেমন নৌকা দরকার, সেটা তারা বোঝেন। দোকানের তুলনায় এটা অনেক সুবিধাজনক।'

কাঠের ফ্রেম, দক্ষ হাতের ছোঁয়া আর মোবাইল নম্বর দিয়ে বাঁধাল বাজারের নৌকার কারিগররা আজ নিজস্ব ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখে গড়ে তুলেছেন জীবিকার নতুন দিগন্ত। বর্ষার পানিতে ভেসে চলা এসব নৌকা শুধু মানুষ নয়, বয়ে নিয়ে যাচ্ছে একেকটি পরিবারের আশা, সংস্কৃতি আর স্থানীয় গর্ব।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

9h ago