অপ্রতিরোধ্য নারী ফুটবলাররা সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন

আফিদা খন্দকারের নেতৃত্বে এবং পিটার বাটলারের প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আবারও জাতিকে দেখিয়েছে যে বিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং ঐক্য কী অর্জন করতে পারে।
এই তরুণীরা ইয়াঙ্গুনে সমস্ত যুক্তিকে উপেক্ষা করে এবং সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা শক্তিশালী মিয়ানমার ও বাহরাইনকে হারিয়েছে এবং তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নিজেদের অভিপ্রায় স্পষ্ট করেছে।
এই দলের আসল পরিচয় হলো তাদের অদম্য স্পৃহা। ঋতুপর্ণা চাকমা এর যথার্থ উদাহরণ, যিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন: 'আমরা, বাংলাদেশের মেয়েরা, প্রতিকূলতার মধ্যেও লড়াই করতে জানি।'
সত্যিই তারা লড়েছে; শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও। আর যখন তারা ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, তখন তাদের এই সাফল্য একটি কঠিন বাস্তবতাও তুলে ধরছে: তাদের এই উত্থান সিস্টেমের সহায়তায় নয়, বরং সিস্টেমের বাধা সত্ত্বেও হয়েছে।
ন্যায্যতার খাতিরে বলতে হয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নারী ফুটবলের উন্নয়নে অবদান রেখেছে। কিন্তু যখন খেলোয়াড়রা, এমনকি অধিনায়কও বড় সাফল্যের পরে আবাসন, সঠিক পুষ্টি, একটি সুষ্ঠু লিগ এবং সম্মানজনক বেতনের মতো মৌলিক প্রয়োজন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তখন তা গভীর অবহেলার ইঙ্গিত দেয়।
খেলোয়াড়রা প্রকাশ্যে পুষ্টি, কার্যকর জিম, উন্নত প্রশিক্ষণ মাঠ এবং একটি নিয়মিত ঘরোয়া লিগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। বেতন বকেয়া পড়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট চলাকালীনও কিছু খেলোয়াড়কে মৌলিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করতে হয়েছে। যখন জাতীয় বীররা খাবার বা বকেয়া বেতনের জন্য আবেদন করেন, তখন এর অর্থ হলো কোথাও একটা গুরুতর সমস্যা রয়েছে।
অধিনায়ক আফিদা দলের প্রত্যাশাগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছেন: উন্নত সুযোগ-সুবিধা, ভালো খাবার, শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে আরও বেশি প্রীতি ম্যাচ এবং একটি কার্যকর নারী লিগ। এগুলো মোটেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী দাবি নয়, বরং অপরিহার্য চাহিদা।
তাই, ঐতিহাসিক যোগ্যতা অর্জনের পর বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল যখন 'পূর্ণ সমর্থন' এবং 'মিশন অস্ট্রেলিয়া' স্লোগানের কথা বললেন, তখন তা অনেকের কাছেই ফাঁপা মনে হয়েছে।
২০২২ এবং ২০২৪ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পরেও আমরা একই ধরনের প্রতিশ্রুতি শুনেছি। বড় বড় বক্তৃতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়ন কোথায়?
ঘরোয়া লিগ কোথায়? সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নে বিনিয়োগ কোথায়? এই মেয়েদের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন থেকে গুরুতর এশিয়ান প্রতিযোগী হিসেবে তুলে ধরার রোডম্যাপ কোথায়?
আরও একবার, অগ্রগতির বোঝা খেলোয়াড়দের দ্বারা বহন করা হচ্ছে, তাদের উন্নয়নের জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারা নয়।
প্রশংসার দাবি রাখে যে বাফুফে সভাপতি সঠিক আবেগপূর্ণ সুরে কথা বলেছেন। তিনি এই মেয়েদেরকে সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবং তারা সেটাই। তারা বাংলাদেশে নারীদের জন্য যা সম্ভব, তা নতুন করে লিখছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া আবেগপূর্ণ বক্তৃতা ফাঁপা প্রশংসা ছাড়া আর কিছুই নয়।
'মিশন অস্ট্রেলিয়া' যদি অর্থবহ হতে হয়, তবে তাকে স্পষ্টতা দিয়ে শুরু করতে হবে। ছয় মাসের প্রস্তুতির পরিকল্পনা কী? নারী ফুটবলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি কী? কেউ রাতারাতি অলৌকিক কিছু আশা করতে পারে ন। একটি সুনির্দিষ্ট পথ এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ছাড়া, এমনকি সবচেয়ে প্রতিভাবান স্কোয়াডগুলোও একটি মিলিয়ে যাওয়ার সীমায় পৌঁছে যাবে।
স্লোগান দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। প্রতিভার জন্য কাঠামো দরকার। আবেগের জন্য নীতি দরকার। এগুলো ছাড়া, দেশ আরেকটি সোনালী প্রজন্ম হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে, যেমনটি অন্যান্য খেলাধুলায় আগেও ঘটেছে।
বাফুফেকে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করতে হবে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মেয়েরা পেশাদার ফুটবল খেলার স্বপ্ন দেখতে পারে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে তা আশা করতে পারে। বর্তমান স্কোয়াড তাদের ভাগের চেয়ে বেশি করেছে। তারা সম্মান এনেছে, কুসংস্কার ভেঙেছে এবং দেখিয়েছে যে সুযোগ পেলে বাংলাদেশের মেয়েরা জিততে পারে এবং বড় জয় পেতে পারে।
এখন সময় এসেছে বাফুফের সেই স্পৃহার সঙ্গে তাল মেলানোর; সংবর্ধনা ও হাততালি দিয়ে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা দিয়ে। কারণ এই খেলোয়াড়রা কেবল প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য।
যেমন ঋতুপর্ণা বলেছেন: 'আমরা লড়তে জানি।'
এখন আসল প্রশ্ন হলো: বোর্ড কি এশিয়ান এলিটদের মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারবে, যাদের সঙ্গে আগামী মার্চে বাংলাদেশের মেয়েরা লড়বে?
Comments