এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআরের কতিপয় কর্মকর্তা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বড় ধরনের কর ফাঁকিতে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
তদন্তের আওতায় আসা কর্মকর্তারা হলেন—অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল রশিদ মিয়া, এনবিআরের সদস্য লুৎফুল আজিম, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ-কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাসান।
এনবিআর কর্মকর্তাদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দুই দিনের মাথায় এই কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্তের খবর এলো। গত ২৯ জুন কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দিনই এনবিআরের ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল দুদক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম 'এনবিআর রিফর্ম ইউনিটি কাউন্সিল'–এর সদস্য।
এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে দুদক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দুদক নিয়ে আমি কোনো উত্তর দেব না। তাদের নিজস্ব কর্মপরিধি রয়েছে। আপনারা তাদের সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারেন।' তিনি আরও যোগ করেন, 'যদিও তারা একটি সরকারি সংস্থা, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় না।'
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা এখন নির্বিঘ্নে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন...এনবিআরের বিষয়টি সমাধান হওয়ায় আমরা আনন্দিত।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমানও সব রাজস্ব কর্মকর্তাকে অতীতের ঘটনা ভুলে জাতীয় স্বার্থে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, কর প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলো থেকে কমিশনার থেকে শুরু করে নৈশপ্রহরী পর্যন্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাজিরার তথ্য চাওয়া হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এমন একটি হাজিরার তালিকা এসেছে।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গত ২৬ জুন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার ২৮ জুন ও রোববার ২৯ জুন—এই তিন কর্মদিবসের হাজিরার তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিতির জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এনবিআরের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, কর্মস্থল ত্যাগের আগে প্রত্যেককে নিজ নিজ দপ্তর প্রধানের অনুমতি নিতে হবে এবং রেজিস্টার বইয়ে স্বাক্ষর করতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, 'এটি একটি নিয়মিত কার্যক্রম, অন্য কিছু নয়। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে হাজিরার খাতায় সই করা একটি প্রাথমিক দায়িত্ব।' তবে আন্দোলনের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Comments