নির্বাচনে অনিয়ম: আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দিলেন সাবেক সিইসি নুরুল হুদা

গত ২৭ জুন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। স্টার ফাইল ছবি

জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের খাস কামরায় জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়।

আদালতে দায়িত্বরত এক উপপরিদর্শক দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিকেল সোয়া ৫টায় তিনি বলেন, 'জবানবন্দি রেকর্ড করা এখনো চলছে।'

পরে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হয় বলে জানান তিনি।

তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জবানবন্দির বিস্তারিত জানা যায়নি।

আদালতে জবানবন্দির বিষয়ে পুলিশের আবেদনে বলা হয়, সাবেক সিইসি একেএম নূরুল হুদা ৪ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম ও দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার অপরাধের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে নিজেই সম্মতি দিয়েছেন। 
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমানের সই করা আবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৮ সালে সংসদের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় শেখ হাসিনা নূরুল হুদার মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও বলেছেন যে, তৎকালীন অবৈধ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ নির্বাচন কমিশনাররা পূর্ণ সহায়তা করে অবৈধভাবে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করে। নূরুল হুদাসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের দ্বারা দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখে।

নূরুল হুদা ৩০ ডিসেম্বর সকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এবং বিএনপির ৬ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করে বলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। 

আবেদনে বলা হয়, কে এম নূরুল হুদা স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম ও দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখার অপরাধের বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে নিজেই সম্মতি দিয়েছেন।

গত ২২ জুন উত্তরার নিজ বাসভবনে একদল জনতার হামলার শিকার হন কে এম নুরুল হুদা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরদিন আদালত তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠান।

এর আগে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করে বিএনপি।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাছির উদ্দীনের কাছে মামলার আবেদনের অনুলিপি পৌঁছে দেন।

বিএনপির অভিযোগ, ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালে একাদশ এবং ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নেতাসমর্থকদের মিথ্যা মামলা, অপহরণ ও হুমকি দিয়ে টার্গেট করা হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য অনেককে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হয়েছে।

বিএনপির ভাষ্য, এই মামলার আসামিরা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামও রয়েছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী ও শহিদুল হক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার বেনজীর আহমেদ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। একইসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধানকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বিএনপি বলেছে, এই ব্যক্তিরা ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপির জন্য দায়ী।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago