অপারেশন সিঁদুর

যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কারণ 'রাজনৈতিক', ভারতে নতুন বিতর্ক

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের কাছে ওয়ায়ান এলাকায় বিধ্বস্ত একটি বিমানের অংশ দেখছেন লোকজন। ছবি: এএফপি

গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত কথা স্বীকার করে এক জ্যেষ্ঠ ভারতীয় নৌবাহিনী কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের চাপিয়ে দেওয়া 'সীমাবদ্ধতার' কারণেই তাদের ওই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে দায়ী করে তার এই মন্তব্যের পর ভারতে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিব কুমার গত ১০ জুন এক সেমিনারে এই মন্তব্য করেন। সে সময় বিষয়টি তেমন আলোচনায় না এলেও গত রোববার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'দ্য ওয়্যার' এ নিয়ে প্রতিবেদন করলে বিষয়টি সামনে আসে।

ক্যাপ্টেন শিব কুমারের এই বক্তব্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস। তারা এটিকে নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে একটি 'অভিযোগপত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

কী বলেছেন ওই কর্মকর্তা

ইন্দোনেশিয়ার এয়ার মার্শাল সূর্যধর্মা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওই সেমিনারে ক্যাপ্টেন শিব কুমার বলেন, 'আমরা যতগুলো যুদ্ধবিমান হারিয়েছি বলে যে দাবি করা হয়, তার সঙ্গে আমি একমত না-ও হতে পারি, কিন্তু আমি স্বীকার করছি যে আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি ঘটেছিল শুধুমাত্র ৭ মে তারিখে রাজনৈতিক নেতৃত্বের টেনে দেওয়া সীমারেখার কারণে। আমাদেরকে (পাকিস্তানি) সামরিক স্থাপনা বা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।'

ওই নৌ কর্মকর্তা আরও জানান, ভারতীয় সামরিক বাহিনী পরবর্তীতে কৌশল পরিবর্তন করে এবং পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করে। তিনি বলেন, 'আমরা প্রথমে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করি এবং এ কারণেই পরবর্তীতে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আমাদের সমস্ত আক্রমণ সফল হয়।'

ক্যাপ্টেন শিব কুমারের এই মন্তব্যে ভারতে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই ঘটনাকে মোদি সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি নতুন করে জোরালো করেছে।

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, 'মোদি সরকার শুরু থেকেই জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। অপারেশন সিন্দুরের সময় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি জানাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।' তিনি শিব কুমারের ওই মন্তব্যকে সরকারের বিরুদ্ধে 'ব্যর্থতার দলিল' বলে অভিহিত করেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, ক্যাপ্টেন কুমারের মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দূতাবাসের দাবি, তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে।

গত ৭ মে ভারত 'অপারেশন সিঁদুর' শুরু করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে। ভারত জানায়, ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের হত্যার প্রতিক্রিয়ায় তারা পাকিস্তানের ছয়টি শহরে সন্ত্রাসীদের নয়টি অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা জানায় ভারত।

ইসলামাবাদ পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে, যার মধ্যে অন্তত তিনটি রাফাল।

পরবর্তীতে, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ১০ মে পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চলে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যদিও নয়াদিল্লি তৃতীয় পক্ষের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

পাকিস্তান ৭ মে প্রথম বিমান ভূপাতিত করার দাবি করলেও নয়াদিল্লি শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। পরবর্তীতে ভারতীয় কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে বিমান ভূপাতিত হওয়ার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেন।

প্রথমে ১১ মে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মহাপরিচালক এ কে ভারতী বলেন, আমরা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আছি এবং ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই একটি অংশ। এরপর ৩০ মে থেকে ১ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত শাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনের সময় ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন যে পাকিস্তানের হাতে ভারতের বিমান ভূপাতিত হয়েছে, যদিও তিনি সংখ্যা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কেন এই ক্ষতি হয়েছে এবং এর পরে আমরা কী করব।'

জেনারেল চৌহানের এই স্বীকারোক্তির পরই কংগ্রেস ভারতের সামরিক প্রস্তুতি পর্যালোচনার দাবি তোলে এবং সংসদের বিশেষ অধিবেশন দাবি করে। ক্যাপ্টেন শিব কুমারের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সেই বিতর্কই নতুন করে উস্কে দিল।

Comments

The Daily Star  | English

Ritu Porna brace takes Bangladesh to verge of history

Peter Butler's charges beat favourites Myanmar 2-1 in Asian Cup Qualifiers

1h ago