আল জাজিরার বিশ্লেষণ

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেভাবে ‘ব্যর্থ’ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নিজ দেশের 'ঐতিহাসিক বিজয়' ঘোষণা করে বলেছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এটি স্মরণ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছি। ইসরায়েলে সেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কয়েক মিনিট আগে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে ইরানের অশুভ ইচ্ছা মুছে দেওয়া হয়েছে।'

একইদিনে ইরানের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্বের প্রশংসা করে তেহরানে বিশাল জনসমাবেশ হয়েছে।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বস্তরের হাজারো মানুষ মধ্য তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ারে জড়ো হয়ে ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে ও নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাদের প্রতি তাদের সমর্থন জানান।

বিক্ষোভকারীরা ইরানে এই হত্যাযজ্ঞের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন এবং বলেন 'কোনো আপস করা হবে না। আত্মসমর্পণ করবো না। লড়াই চলবে।'

এমন পরিস্থিতিতে বাস্তবতা হলো—ইসরায়েলের ইরান যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল উপসাগরীয় দেশটির পরমাণু কর্মসূচি 'সম্পূর্ণ গুড়িয়ে দেওয়া' ও বর্তমান শাসককে 'ক্ষমতাচ্যুত' করা।

কিন্তু, ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বিশ্বের সেরা শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েও তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।

গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরার এক মতামতে ইরান বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে—ফোরদো পরমাণুকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র বোমা ফেলার আগেই ইরান পরিশোধিত ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে। এই ইউরেনিয়াম ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তার মতে, ইরান যদি নিজে থেকে অন্য দেশের প্রতিনিধিদের পরমাণুকেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের অনুমতি না দেয় তাহলে সেগুলোর কতটা ক্ষতি হয়েছে তা কারো পক্ষে জানা সহজ নয়।

ইরানের শাসক বদলানোর ইসরায়েলি লক্ষ্য সম্পর্কে তার ভাষ্য—এই ভাবনার বিরোধিতা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তেহরানে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল তেল আবিব। সেই লক্ষ্য পূরণে ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়।

শুধু তাই নয়, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার মাধ্যমে ইরানে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টাও করে ইসরায়েল। কিন্তু, তা কাজে আসেনি।

বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইসরায়েলি সরকার 'সাফল্য' না পেলেও সারাবিশ্ব থেকে নিজেদেরকেই 'বিচ্ছিন্ন' করতে পেরেছে। গাজায় তাদের চলমান হত্যাকাণ্ড থেকে অনেকের দৃষ্টি ফেরাতে পেরেছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি 'ধ্বংস' হয়ে যাওয়ার দাবি বারবার করলেও মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে—সর্বশক্তি দিয়ে হামলা চালিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে পারেনি।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইরানে শক্তিশালী ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামলা করায় সারাবিশ্ব তেহরানকে 'আক্রান্ত' ও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে 'আগ্রাসী' হিসেবে তুলে ধরেছে।

ইরান সফলভাবে যুদ্ধ 'ছড়িয়ে' দিতে পেরেছে। কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ইরান শুধু নিজের সক্ষমতাকেই তুলে ধরেনি, ওয়াশিংটনকে বাধ্য করেছে তেল আবিবের 'রাশ' টেনে ধরতে।

ইরান নিজেকে যেভাবে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে চেয়েছিল সেভাবেই পেরেছে। ইরান এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যতেও সবলে দাঁড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

42m ago