তবে কি এবার ঘুচবে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকার্স’ অপবাদ?

South Africa captain Temba Bavuma

আইসিসির বৈশ্বিক আসরের নকআউট ম্যাচ মানেই যেন ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয় বিদারক সব হার। রঙিন পোশাকে মলিন হয়ে মাঠ ছাড়ার প্রোটিয়াদের একেকটি ট্র্যাজেডির গল্প নাড়া দেয় নিরপেক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীরদেরও। এবার সাদা পোশাকে বৈশ্বিক মঞ্চে আইসিসির শিরোপা খরার ধারা কাটাতে চায় তারা।  দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা আশাবাদী আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে তার দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে, তাতে ঘুচবে অপবাদও।

আগামী ১১ জুন লর্ডসে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের ফাইনাল। যাতে প্রোটিয়াদের লড়াই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, যারা কিনা গেল আসরে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

এই ফাইনালের আগে বাভুমা বলেছেন, 'আমার টেস্ট ক্যারিয়ারে এই ফাইনালে যোগ্যতা অর্জন করা সম্ভবত সর্বোচ্চ অর্জন। আমার অভিষেকের পরই এটি সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হবে।'  তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, তার দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জেতার জন্য 'ইটের দেয়াল ভেদ করে যেতে' প্রস্তুত।

দক্ষিণ আফ্রিকা দল তাদের এই ফাইনালের পথে বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা। তবে, বাভুমার নেতৃত্বে দলটি ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করেছে এবং এই ফাইনাল খেলার সুযোগ অর্জন করেছে। তিনি মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া একটি শক্তিশালী দল হলেও দক্ষিণ আফ্রিকারও জেতার ৫০-৫০ সুযোগ রয়েছে। এবং তারা ফাইনাল পর্যন্ত এসেছেন নিজেদের প্রমাণ করেই, 'অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য আছে। তারা জানে কী করতে হয়। আমাদের জন্য নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখাটা জরুরি। আমাদের কেউ হাতে ধরিয়ে ফাইনাল খেলার সুযোগ করে দেয়নি, আমরা তা অর্জন করে নিয়েছি। আমরা তাদের (অস্ট্রেলিয়া) শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমার চোখে এটা ৫০-৫০ সুযোগ সবার জন্য।'

দক্ষিণ আফ্রিকা দল প্রায় তিন দশক ধরে 'চোকার্স' (চাপের মুখে ভেঙে পড়া দল) হিসেবে পরিচিত। আইসিসি ইভেন্টগুলোতে তাদের সেমিফাইনাল বা ফাইনালের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসার ঘটনা এতটাই নিয়মিত যে এটি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।

১৯৯২ সালে বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি এমন এক অদ্ভুত অবস্থায় পৌঁছায় যে, ১৬ বলে ২২ থেকে শেষ বলে ২২ রানের অসম্ভব লক্ষ্য দাঁড়ায়, যা তাদের হৃদয় ভেঙে দেয়।

১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল: এই হার সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতার জন্য শেষ ৪ বলে ১ রান দরকার ছিল, কিন্তু উদ্ভটভাবে অ্যালান ডোনাল্ড রান আউট হলে ম্যাচ টাই হয়। গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে চলে যায়।

২০০৩ বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব: ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সহজ সমীকরণ ভুলভাবে হিসাব করার কারণে বৃষ্টি আইনে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় তারা।

২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার জন্য শেষ ২ বলে ৫ রান দরকার ছিল কিউইদের। গ্রান্ট এলিয়ট ডেল স্টেইনকে ছক্কা মেরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন ভেঙে দেন।

২০২৩ ওডিআই বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল: দুর্দান্ত ফর্মে থাকা প্রোটিয়ারা আবারও সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয়।

২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল: প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও ভারতের কাছে ৭ রানে হেরে আবারও শিরোপা হাতছাড়া হয়। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ৩০ বলে ৩০ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি দলটি।

এই হারগুলো দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ও সমর্থকদের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। আইসিসি আসরে একবারই কেবল শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই ১৯৯৮ সালে ঢাকায় নকআউট মিনি বিশ্বকাপে (পরে যার নাম হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এরপর একের পর এক হতাশার গল্প। বাভুমা এবং তার দল এবার সেই ইতিহাস পরিবর্তন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোচ শুকরি কনরাডের অধীনে তারা একটি শক্তিশালী মানসিকতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। যদিও তাদের দলে বড় মাপের তারকারা নেই, কিন্তু সম্মিলিত প্রচেষ্টাই তাদের সাফল্যের চাবিকাঠি বলে বাভুমা মনে করেন।

গ্রায়েম স্মিথের মতো প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়কও বাভুমার উপর আস্থা রেখেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এবার প্রোটিয়াসরা  বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতবে।

Comments

The Daily Star  | English

Former CEC ATM Shamsul Huda passes away at 83

As CEC, Huda oversaw the ninth parliamentary elections in 2008

1h ago