ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা তারা

সাগর ও সংলগ্ন নদীতে নিজের ছোট নৌকায় মাছ ধরে সংসার চালান মনির সরদার (৪৫)। মাঝেমাঝে অন্যদের সঙ্গে সাগরেও ইলিশ শিকারে যান তিনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইজগেট এলাকায় নদী তীরে ঝুপড়ি ঘর তুলে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছিলেন।
গত শুক্রবার নিম্নচাপে স্ফীত জোয়ার ও দমকা বাতাসে তার আশ্রয়টুকু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এখন তিনি পাশের বেড়িবাঁধে ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

মনির সরদার বলেন, 'মাছ ধরে কোনো রকমে বেঁচে ছিলাম। নিম্নচাপের দমকা বাতাস আর জোয়ারের পানিতে ঘরটা ভেঙে দিয়ে গেল। এখন পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকতে খুবই কষ্ট।'
একই এলাকার আরেক জেলে আব্বাস হাওলাদার (৫০)। নিম্নচাপের প্রভাবে তার বসত ঘরটিও ভেঙে গেছে। প্রবল জোয়ারের তোড়ে তার ঘরের মাটি সরে গেছে, দমকা বাতাসে ঘরের টিনের বেড়া উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কঙ্কালের মতো শুধু ঘরটি দাঁড়িয়ে আছে।
উপজেলার মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমর সানি বলেন, 'জোয়ারে বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা ডুবে গেছে। ভাটায় পানি নামলেও রয়ে গেছে ক্ষতির ছাপ। নদীভাঙনে নিঃস্ব, তার ওপর এই জলোচ্ছ্বাস। আমার ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
শুধু মনির, আব্বাস বা ওমর সানি নয়, এই এলাকার অনেকেই বসতঘর হারিয়ে এখন দিশেহারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে করছেন মানবেতর জীবনযাপন। এ পর্যন্ত খাবারের জন্য কিছু চাল বিতরণ করা হয়েছে সরকারি সাহায্য হিসেবে। এখন আশ্রয়ের জন্য তাদের দরকার আর্থিক সহায়তা ও ঢেউটিন।
সরকারি হিসেবে সাগর পাড়ের এই উপজেলায় ৬০টি বসত ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় জানিয়েছে, জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। জোয়ারের পানি ভাটায় নামলেও নিচু এলাকায় জমে আছে। কোথাও আবার বৃষ্টির পানি জমেছে। ফলে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে অসংখ্য পরিবার।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান জানান, দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব করে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলমান।
সরকারি হিসেবে পটুয়াখালীতে ৯৫৫টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলাপাড়ায় ৪৬০টি, অন্যান্য উপজেলার মধ্যে দুমকিতে ৩০০টি, পটুয়াখালী সদন উপজেলায় ২৭০টি, বাউফলে ১০৫টি, রাঙ্গাবালীতে ৬০টি, গলাচিপায় ৫৬টি, মির্জাগঞ্জে ২০টি ও দশমিনায় ১৫টি।
পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এসব ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নিরূপণে কয়েকদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জেলার উপজেলাগুলোতে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১০৯ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ঢেউ টিন কেনার জন্য ৯ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে স্থানীয় বাজার থেকে ঢেউটিন কিনে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণে কিছুটা সময় লাগছে।
Comments