‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নারীরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে 'নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা' কর্মসূচিতে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে এই আহ্বান জানানো হয়।

জুলাই শহীদ পরিবারের দুজন নারী সদস্য ও একজন আদিবাসী নারী এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘোষণাপত্র উল্লেখ করা হয়েছে, যারা আমাদের সমর্থন চায়- তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক, তাদের স্পষ্ট করতে হবে নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত ও লৈঙ্গিক সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং এসব জনগোষ্ঠীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত শতকরা ৩৩ ভাগ (ক্রমে জনসংখ্যার অনুপাতে) নারী হতে হবে।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এতে আরও বলা হয়, নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঘোষণাপত্র পাঠকারী নারীরা বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা তারা মেনে নেবেন না। তাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে অস্বীকার করার ষড়যন্ত্র তারা প্রতিরোধ করবেন। তারা বলেন, বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা প্রতিরোধ করা হবে।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ইতিহাসবিচ্ছিন্ন কূপমণ্ডূকতার মাধ্যমে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে কিছুতেই সফল হতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, 'আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাস দারুণ বৈচিত্র্যময় ও সংবেদনশীল। সেই বিশালতাকে উপেক্ষা করে আমরা গুটিকয়েক মানুষের সংকীর্ণ ব্যাখ্যাকে সর্বজনীন হতে দেব না। আমরা অধিকার ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে দেব না, মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের দ্ব্যর্থকতা মেনে নেব না। আমরা সরকার ও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নারী বিষয়ক অবস্থান নজরদারিতে রাখব। যে ক্ষমতাকাঠামো এসব জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, আমরা সেই কাঠামোকে ভাঙব।'

ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নারীরা হাল ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়। 

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

'সমতার দাবিতে আমরা' স্লোগানে এই কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।

সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, 'আমরা নারীর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ এখানে এসেছি- সবাইকে এটা জানাতে যে, আমরা আমাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন এবং সেই অধিকার আদায়ে আমরা একতাবদ্ধ। এখানে আমরা কারও বিষোদগার করছি না, কোনো চিৎকার বা গালিগালাজ নেই। নারীদের একতা প্রদর্শনের জন্য আজ আমরা এখানে এসেছি।'

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এনজিওকর্মী নাজিফা রায়দাহ জানান, সারাদেশে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমাগত দেখছি নারীরা জনসমক্ষে হয়রানি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন, তাদের ওপর মব হামলার হুমকি আসছে। মব হামলাকারীরা নারীকে ঘরে বন্দী করে রাখতে চায়। আমরা আমাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতার জন্য এবং নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছি।'

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), তীরন্দাজ ও শ্রমিক অধিকার আন্দোলন প্রভৃতি সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছে।

এই আয়োজন উপলক্ষে ৩১টি স্লোগানের একটি তালিকা করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষেও স্লোগান রাখা হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Opening aid corridors, leasing out ports not this govt’s job

Making decisions on a “humanitarian corridor” to Rakhine and leasing out container terminal of Chittagong Port to foreign companies are not the interim government’s job, said BNP acting chairman Tarique Rahman last night.

3h ago