হৃদয়ের আবার নিষিদ্ধ হওয়াকে ‘হাস্যকর’ বললেন তামিম

চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তাওহিদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ঘিরে তৈরি হওয়া নাটক থামছেই না! দিন যত গড়াচ্ছে, তত বিভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে তা। এবার এই নাটকের নতুন পর্বে যুক্ত হলেন তামিম ইকবালসহ বাংলাদেশের আরও অনেক ক্রিকেটার। এই ইস্যুসহ গত কয়েক মাসের বেশ কয়েকটি ঘটনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ওপর নাখোশ তারা। সেসব নিয়ে সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করলেন তারা। সেখানে নেতৃত্ব দেওয়া তামিম পরে সাংবাদিকদের কাছে বললেন, হৃদয়ের আবার নিষিদ্ধ হওয়াটা হাস্যকর।
শুক্রবার দুপুরে মিরপুরের একাডেমি ভবনে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন দলের ক্রিকেটাররা। এরপর তামিমের নেতৃত্বে তারা বিসিবি কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বোর্ড প্রধান ফারুকের সঙ্গে। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিবির দুই পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও ইফতেখার রহমান মিঠু।
বিকালে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের শাস্তি নিয়ে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খলার বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম। পাশাপাশি কিছুদিন আগে প্রিমিয়ার লিগে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর বিসিবির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট (আকু) যেভাবে প্রকাশ্যে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছিল সেটা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তাছাড়া, সবশেষ বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে তদন্তাধীন ১০ ক্রিকেটারের নাম গণমাধ্যমে চলে আসা নিয়েও কথা বলেন। প্রতিটি ইস্যুতে বিসিবিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তামিম।
মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে আচরণ ও পরে গণমাধ্যমের কাছে আম্পায়ারদের সমালোচনার জেরে নিষেধাজ্ঞা মিলেছে হৃদয়ের। এই শাস্তি কমানো-বাড়ানো নিয়ে নাটকের একের পর এক পর্ব মঞ্চস্থ হচ্ছে। প্রসঙ্গটি নিয়ে তামিম বলেছেন, 'হৃদয়ের ইস্যুটা... ওর সঙ্গে মাঠে একটা ঘটনা হয়, ওকে দুটি ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। তখন কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি। আম্পায়ার আর ম্যাচ রেফারি মিলে তাকে নিষিদ্ধ করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করতে পারি, সিদ্ধান্তটা কঠোর ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কিন্তু কেউ কোনো কথা বলিনি। তার কিছুদিন পর দেখলাম যে, (নিষেধাজ্ঞা) দুই ম্যাচ থেকে এক ম্যাচ করা হলো। এটা বিসিবি করেছে। তখনও আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তারপর হৃদয় একটা ম্যাচ না খেলে পরের দুটি ম্যাচ খেলল। স্বাভাবিকভাবে ওর যে শাস্তি ছিল (এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা), সেটা সে ভোগ করে নিয়েছে। এখন দুটি ম্যাচ খেলার পর গতকাল শুনলাম যে, তাকে আবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।'
তিনি যোগ করেছেন, 'এটা কোন নিয়মে, কীভাবে করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। এটা হাস্যকর ছিল। কোনোভাবেই সে নিষিদ্ধ হতে পারে না যে কিনা আগেই (একবার) নিষিদ্ধ হয়েছে। তাকে বিসিবি দুটি ম্যাচ খেলতে দিয়েছে, তাকে আবার আপনি কিভাবে নিষিদ্ধ করতে পারেন? এটা আমাদের একটা বড় পয়েন্ট ছিল।'
গত মাসে সাভারে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তামিম আপাতত আছেন খেলার বাইরে। ছিটকে যাওয়ার আগে তিনি ছিলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক। তার অনুপস্থিতিতে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটার হৃদয়। প্রিমিয়ার লিগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) টেকনিক্যাল কমিটি গতকাল হৃদয়কে নতুন করে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা নিয়ে তামিমের মন্তব্য, 'যেহেতু আগামীকাল খেলা আছে (মোহামেডানের), আমি নিশ্চিত উনারা (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ) খুবই দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। আপনারা সবাই জানতে পারবেন, আমরাও জানতে পারব।'
আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তামিম বলেছেন, 'মোহামেডান থেকে চাপ দিয়ে (সাজা কমিয়ে হৃদয়কে) খেলানো হয়েছে কি হয়নি, সেটা জরুরি না। তাকে কি বিসিবি খেলতে অনুমতি দিয়েছে? যদি দিয়ে থাকে, তাহলে আবার একই ঘটনায় কীভাবে শাস্তি দেওয়া হয়! এটা নিয়ে আমাদের বিতর্ক হয়েছে। তাদের (বিসিবি সভাপতি ও বোর্ড পরিচালকদের) কাছে আমরা সুন্দর করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, আমরা কী অনুভব করি। তারপর তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত দেবেন।'
কেন হঠাৎ ক্রিকেটাররা একত্রিত হয়েছেন জানতে চাওয়া হলে তামিমের জবাব, 'আমরা যেকারণে সবাই একসঙ্গে হয়েছি, সেটা হলো, সবশেষ দুই-তিন মাসে কিছু কিছু ঘটনা হচ্ছে, যেটা নিয়ে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মনে একটা কষ্ট ছিল। খেলোয়াড়রা সবাই খুবই অখুশি। যে ধরনের ব্যবহার বা যে ধরনের কাজকর্ম হচ্ছিল, আমি দুই-তিনটা পয়েন্ট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব।'
প্রিমিয়ার লিগে ওঠা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ও পরবর্তী তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তামিম বলেছেন, 'আপনারা দেখেছেন, গুলশান আর শাইনপুকুর ম্যাচে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডকে সরাসরি বলেছি যে, যদি ওখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে বা কোনো খেলোয়াড় কোনো ধরনের ভুল করে থাকে, আমরা সবাই চাই এটার শাস্তি হোক। কিন্তু তার মানে এটা না যে, আপনি (অভিযুক্ত) ওই দুটি ছেলেকে নিয়ে গিয়ে গণমাধ্যমের সামনে অভিনয় করাবেন। এমনটা করার অধিকার কারও নেই। বিশ্বের কোথাও দুর্নীতি দমন কমিশনে এমন নিয়ম নেই যে, আপনি ওই দুটি ছেলেকে বেইজ্জতি করবেন গণমাধ্যমের সামনে। এটা মানে খেলোয়াড়কে অপমান করা।'
বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে অভিযুক্তদের নাম গণমাধ্যমে চলে আসা ব্যাপারে তার ভাষ্য, 'বিপিএলেও ১০ জনের নাম বের হয়েছে, ১০ জনের নাম গণমাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই চাই, ওখান থেকে কেউ যদি দোষী হয়, তার শাস্তি হোক। তার যতদূর শাস্তি দেওয়া সম্ভব দেওয়া হোক। কিন্তু ওখানে দুজন নির্দোষ বা আটজন নির্দোষ থাকলে তাদের নামগুলো ফাঁস করে দেওয়াও অপমানজনক। এই প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। তাই আমরা সভাপতিকে অনুরোধ করেছি আসতে। উনি এসেছেন, সঙ্গে আরও দুজন পরিচালক ছিলেন। আমরা লম্বা-চওড়া আলোচনা করেছি।'
Comments