সিনেমায় নায়ক আমিন খানের ৩০ বছর

আমিন খান। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

আমিন খান ঢাকাই সিনেমায় পথচলা শুরু করেন ৩০ বছর আগে। অভিষেক সিনেমা 'অবুঝ দুটি মন' দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ পর্যন্ত ১৭৫টি সিনেমা করেছেন।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই নায়ক।

দ্য ডেইলি স্টার: চলচ্চিত্রে ৩০ বছর পার করছেন, অর্জন কতটুকু?

আমিন খান: পুরোটাই অর্জন। ভালোবাসা, সম্মান, পরিচিতি—সবই সিনেমা করে। এখনো মানুষ চেনে, ভালোবাসে, যেখানেই যাই সম্মান করে ও ভালোবাসা দেয়—এই তো, আর কী চাই। বেশ কয়েক বছর অভিনয় করি না। তারপরও মানুষ ভালোবাসে। তারপরও নতুন প্রজন্মও চেনে। দেশ-বিদেশ যেখানেই যাই মানুষের কাছ থেকে অনেক সম্মান পাই।

ডেইলি স্টার: ৩০ বছর আগে সিনেমার শুরুটা কতটা সংগ্রামের কিংবা সহজ ছিল?

আমিন খান: মোটেও সহজ ছিল না। ৩০ বছর আগে যখন সিনেমা শুরু করি, তারও দুই বছর আগে আমি 'নতুন মুখের সন্ধানে' প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। হাজার হাজার ছেলে অংশ নিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমিই প্রথম হই। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম আমার এক চাচার আগ্রহে। কেননা, আমি খুলনা থাকতাম। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় আসার পর চাচা এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে অংশ নিতে বলেন। যাই হোক, প্রথম হলেও সিনেমা পাওয়াটা সহজ ছিল না।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

ডেইলি স্টার: তারপর কী করলেন?

আমিন খান: একজন পরিচালক আমাকে নিয়ে সিনেমা করতে চাইলেন। সবকিছু চূড়ান্ত হলো। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়, বছরও যায়—সিনেমার শুটিং হয় না। আমি ভেঙে পড়ি। হতাশ হই। তারপরও কাজ শুরু হয় না। ইতোমধ্যে নতুন সিনেমার অফার আসে, কিন্তু চুক্তিবদ্ধ সিনেমার জন্য অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে দুই বছর কেটে যায়। একদিন সাংবাদিক মিজান ভাই বলেন, আর কত অপেক্ষা করবে? চলো, একজন পরিচালকের কাছে নিয়ে যাই। তিনি আমাকে পরিচালক মোহাম্মদ হোসেনের কাছে নিয়ে যান। ফের চুক্তি করলাম নতুন সিনেমার। এরপর নতুন গল্প শুরু হলো আমার জীবনে।

ডেইলি স্টার: কোন সিনেমা দিয়ে ভাগ্য বদলে গেল?

আমিন খান: ওই যে বললাম সাংবাদিক মিজান ভাই আমাকে পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলেন। চুক্তি করলাম নতুন সিনেমা 'অবুঝ দুটি মন'। এই সিনেমা দিয়ে নতুন মুখ ও নতুন জুটি উপহার দিলেন তিনি। 'অবুঝ দুটি মন' সিনেমা মুক্তি পেল। ঢাকাসহ সারাদেশে হইচই পড়ে গেল। শত শত হলে চলল। মানুষ ভিড় করল হলে। অসম্ভব ব্যবসা করল। আমার নাম জেনে গেলেন সবাই। এরপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সিনেমা মুক্তির আগেই নতুন আরেকটি সিনেমার শুটিং শুরু করি।

ডেইলি স্টার: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সিনেমার মানুষ ছাড়া আর কারা আপনার ক্যারিয়ারে ভূমিকা রেখেছে?

আমিন খান: সিনেমার মানুষ ছাড়া আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সাংবাদিকরা। আজকে আমি আমিন খান। আমিন খান নামটিও সাংবাদিকদের দেওয়া। সাংবাদিক মিজান ভাই, আওলাদ ভাই, কিবরিয়া ভাই, জাকির ভাইসহ অনেক সাংবাদিক আমাকে সহযোগিতা করেছেন। ভালোবাসা দিয়েছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে মিজান ভাই আমাকে খুব গাইড করতেন।

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

ডেইলি স্টার: সিনেমার ক্যারিয়ারে উথান আছে, পতনও আছে। আপনি কী দেখেছেন?

আমিন খান: আমি দুটোই দেখেছি। দুর্দান্ত সময় পার করেছি। ফ্লপ সময়ও পার করেছি। সিনেমা হিট হলে যেমন লোকের অভাব হয় না, তাও দেখেছি। আবার সিনেমা ফ্লপ করলে কেউ পাশে থাকে না, তাও দেখেছি। আমার ক্যারিয়ারে দুইবার ফ্লপ ডাউন হয়েছে। তখন মানুষ চিনেছি, দেখেছি। তবে, শত হতাশার মধ্যেও সিনেমা ছাড়িনি। কারও সঙ্গেই মন্দ আচরণ করিনি। আমি জানতাম ভালো ব্যবহার, বিনয়, ভালোবাসা, ইচ্ছে শক্তি দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াব। তাই হয়েছে।

ডেইলি স্টার: সিনেমা থেকে বাদ পড়েছেন কখনো?

আমিন খান: পড়েছি। 'প্রিয়জন' নামে একটি সিনেমায় কিছু দিন শুটিং করেছিলাম। তারপর আমাকে বাদ দিয়ে আরেকজন নায়ককে দিয়ে শুটিং করানো হয়। আমার শুটিংটুকু বাদ দিয়েছিলেন। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তারপর 'প্রিয়জন' মুক্তি পেল এবং ফ্লপ করল। তখন ভেবেছিলাম সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কারণ, ওই সিনেমা আমার জন্য ফ্লপ করলে ক্যারিয়ারে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

Comments

The Daily Star  | English

Opening aid corridors, leasing out ports not this govt’s job

Making decisions on a “humanitarian corridor” to Rakhine and leasing out container terminal of Chittagong Port to foreign companies are not the interim government’s job, said BNP acting chairman Tarique Rahman last night.

2h ago