কুয়েট শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর উপেক্ষা সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। ছবি: হাবিবুর রহমান/ স্টার

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে পাঁচ দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তারা এসব দাবি জানায়।

বার্তায় বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের বর্বরোচিত সশস্ত্র হামলা সংঘটিত হয়। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে এমন সশস্ত্র হামলা এবং হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের বিস্মিত করেছে। হামলার ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে অবস্থান নেওয়া এক যুবদল নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। গণ-অভ্যুত্থানের সহযোগী একটি রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে এমন দায়সারা ভূমিকাও আমাদের হতাশ করেছে।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তড়িঘড়ি করে চিহ্নিত হামলাকারীদের নাম বাদ দিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ ও পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগে বাধ্য করে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভকে আমলে নিয়ে অভিভাবকসুলভ আচরণের বদলে প্রশাসন তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হামলার ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে অস্বীকার করেন এবং শিক্ষার্থীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন এমন দাবি করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছ থেকে সংহতি সংগ্রহ করেন। আবার সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ হয়ে শিক্ষকদের মানববন্ধন স্বৈরাচারী আমলের নতজানু চর্চাকেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। অথচ হামলার দুই মাস অতিবাহিত হলেও চিহ্নিত হামলাকারীদের কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয়নি; বরং হামলার শিকার ৪২ জন ছাত্রকে স্থানীয়দের করা প্রহসনমূলক ও মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। উপরন্তু, হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিতের বদলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ ৩৭ জনকে বহিষ্কার করেছে, যা অপরাধীদের ছাড় দিয়ে অপরাধের শিকার ব্যক্তিদেরই শাস্তি দেওয়ার শামিল।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারী আমলের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চর্চার অবসান ঘটবে—এমন আকাঙ্ক্ষা ছিল শিক্ষার্থীসহ আপামর জনসাধারণের। অথচ কুয়েটে যা ঘটেছে, তা গণঅভ্যুত্থানের সেই আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভকে আমলে নেওয়ার পরিবর্তে হামলা, মামলা, বহিষ্কার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দমন-পীড়নের পুরোনো সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূচনা ঘটলেও দলীয় সন্ত্রাস ও মাস্তানি বন্ধের বদলে খোদ রাজনীতিই নিষিদ্ধ করে বিরাজনীতিকরণের চর্চাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা আপাত দৃষ্টিতে কল্যাণকর মনে হলেও আদতে শিক্ষার্থীদেরই স্বার্থ পরিপন্থী।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুই দফায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে তাদের দাবি ও অবস্থান ব্যক্ত করলেও সরকার বরাবরই তাদের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করেছে, যা শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলেই প্রতীয়মান হয়।

বর্তমানে শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ প্রশাসনিক প্রধান উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং প্রশাসনের অন্যায় সিদ্ধান্ত ও আচরণে ক্ষুব্ধ। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও চলমান অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা নিম্নলিখিত দাবি পেশ করছি—

১। অবিলম্বে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে নিতে হবে।

২। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ ৩৭ জন শিক্ষার্থীর গণবহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

৩। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৪। আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা যারা ছাত্রদের ওপর হামলা করে গুরুতরভাবে আহত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

5h ago