সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত: নতুন টাস্কফোর্স, এখনো জমা পড়েনি প্রতিবেদন

সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ফাইল ছবি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স এখনো হাইকোর্টে কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি, যদিও আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সময়সীমা দুই সপ্তাহেরও বেশি আগে শেষ হয়ে গেছে।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র‍্যাবের কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।

র‍্যাব ২০১২ সালে মামলাটির দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে এই নির্দেশ এল।

নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান গত ২ এপ্রিল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তার দপ্তর টাস্কফোর্সের কাছ থেকে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পায়নি। তিনি বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই আমরা এটি হাইকোর্টে জমা দেব।

এদিকে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার একটি আদালত ১১৮তম বারের মতো তদন্তের সময়সীমা বাড়িয়েছে।

মামলার অভিযোগকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন যে তিনি হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে বিষয়টি আনবেন।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম-এর বেঞ্চ ৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন, কিন্তু আদালতের বার্ষিক ছুটির কারণে তা পিছিয়ে যায়।

টাস্কফোর্সের প্রধান মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে কিন্তু হত্যাকারীদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট পুনরায় খোলার পর আমরা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দেব।'

গত ২ এপ্রিল টাস্কফোর্সের অধীনে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বলেন, 'আমি টাস্কফোর্সের তত্ত্বাবধানে তদন্ত পরিচালনা করছি। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, 'সেই সিদ্ধান্ত টাস্কফোর্স প্রধান নেবেন।'

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থবির থাকার পর তদন্তকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ফরেনসিক আলামত পরীক্ষা করেছেন। আমরা যতদূর জানি, উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছেন।

তবে তিনি মামলাটিতে দীর্ঘদিন ধরে বিচার বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, গত ১৩ বছর ধরে তদন্তে দক্ষ জনবল এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব দেখা গেছে। এই সময়ের মধ্যে প্রমাণ ও নথিপত্র হারিয়ে গেছে। তবুও, আমরা আশা করি যে বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা হাইকোর্টে একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন জমা দেবেন।

শিশির মনির আরও অভিযোগ করেন, আগের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তে বাধার সৃষ্টি করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, ১৩ বছরে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে না পারা রাষ্ট্রের একটি গুরুতর ব্যর্থতা।

মেহেরুন রুনির ভাই এবং মামলার বাদী নওশের আলম রোমানও এই অভিযোগের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সরাসরি পূর্ববর্তী সরকারকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন।

সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, 'এবার আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আশা করি ভালো কিছু হবে।'

গত বছরের জুলাইয়ের শুরুতে, হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ তাদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে মন্তব্য করে যে, তদন্ত শেষ এবং বিচার শুরু করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে 'ক্রমাগত উপহাস' করেছে এবং এটিকে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মাছরাঙা টিভির তৎকালীন বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে খুন হন। ঘটনার সময় তাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে মেঘ বাসায়ই ছিল।

রুনির ভাই পরদিন শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, তবে শুরুতে কোনো সন্দেহভাজনের নাম উল্লেখ ছিল না। মামলাটি একাধিক সংস্থার হাতে যাওয়ার পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাবকে।

Comments