হাঁটু ব্যথা কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা

মানবদেহে যতগুলো জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি রয়েছে তার মধ্যে হাঁটু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জয়েন্ট। হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন অনেকেই।
এ সম্পর্কে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর কেটিপিএইচের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান এবং এনাম মেডিকেল কলেজের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমাদ।
হাঁটু ব্যথা কেন হয়
ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, হাঁটু শরীরের ওজন বহন করে, হাঁটুতে যদি ব্যথা হয় সেটি যে কারণেই হোক না কেন তা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। নানাবিধ কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। বয়সভেদে, লিঙ্গভেদে একেক সময় একেক ধরনের কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে। যেমন-
১. বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত বাত। বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটুর জয়েন্ট ক্ষয় হতে থাকে এবং ব্যথা হয়।
২. বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
৩. হাঁটুর ব্যথার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আঘাতজনিত কারণ। অনেক সময় অ্যাথলেট বা খেলোয়ারদের লিগামেন্ট ইনজুরি হয়, আঘাতের কারণে হাঁটুর হাড়ের ফ্র্যাকচারের কারণে ব্যথা হতে পারে।
৪. সংক্রমণজনিত কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে, যেটিকে সেপটিস আর্থ্রাইটিস বলে। কোনো ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে হাঁটুর ব্যথা হয়।
৫. যক্ষ্মা বা টিবি একটি সংক্রামক রোগ, হাঁটুতে টিবি রোগের সংক্রমণজনিত কারণে ব্যথা হতে পারে।
৬. বিভিন্ন ধরনের রক্তরোগ যেমন- হিমোফিলিয়া, লিউকোমিয়া, লিম্ফোমার কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
৭. শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিশেষ ধরণের হাঁটু ব্যথা হয়, হাঁটুর চারপাশে ব্যথা হয়, হাঁটুতে চাবানো বা কামড়ানোর মতো ব্যথার অনুভূতি হয়, ম্যাসাজ করে দিলে আরামবোধ হয়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতির কারণে হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
৮. হাড়ের টিউমার, শরীরের অন্যান্য স্থানে হওয়া টিউমার যদি হাঁটুতে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে হাঁটু ব্যথা হতে পারে।
হাঁটু ব্যথার কারণ অনেক। সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বয়সজনিত বাতে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে হাঁটুর ব্যথা সবচেয়ে বেশি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটুর গঠনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, শরীরের ওজন বেড়ে যায়, হাঁটুর ওপর চাপ পড়ে সেসব কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বেশি দেখা যায়। অন্যান্য বয়সেও এটি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি হয় বয়স্কদের।
লক্ষণ
হাঁটুতে ব্যথার পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন- হাঁটুতে ব্যথার পাশাপাশি ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, হাঁটুর তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়া অর্থাৎ হাঁটু গরম অনুভূত হওয়া, হাঁটু ভাঁজ করতে অসুবিধা হওয়া, হাঁটাহাঁটি করা, হাঁটু ভাঁজ করে বসা, টয়লেট ব্যবহার করা এবং স্বাভাবিক চলাফেরায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া হাঁটু ব্যথাজনিত সমস্যায় দীর্ঘমেয়াদে হাঁটু ডিফরমিটি বা হাঁটুর স্বাভাবিক আকৃতি পরিবর্তন হতে পারে।
চিকিৎসা
ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, হাঁটু ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার কারণ, স্থায়ীত্ব, লক্ষণ ও বয়সের ওপর। হাঁটুর ব্যথার ইতিহাস ভালোভাবে জানতে হবে রোগীর কাছ থেকে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে হাঁটু ব্যথাজনিত কারণ শনাক্ত করা হয়। কী কারণে ব্যথা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
বয়স্ক রোগীদের হাঁটু ব্যথা হলে হাঁটাচলার ক্ষেত্রে একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন দিয়ে দেওয়া হয় রোগীকে। কীভাবে হাঁটবেন, কতক্ষণ হাঁটবেন, কীভাবে বসবেন, হাঁটার জন্য সহায়ক হিসেবে লাঠি, ওয়াকার লাগবে কি না, সঠিক জুতা পরা, থেরাপি নিতে হবে কি না, ওজন কমাতে হবে কি না এই বিষয়গুলো সম্পর্কিত গাইডলাইন দেওয়া হয় রোগীকে।
এর পাশাপাশি হাঁটু ব্যথার চিকিৎসায় কিছু ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়, বাতের কারণে ব্যথা হলে বাত নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ, সংক্রমণজনিত কারণে ব্যথা হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
রক্তরোগের কারণে ব্যথা হলে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের এবং লিগামেন্ট ইনজুরি, আঘাতজনিত কারণে ব্যথা হলে অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
দীর্ঘদিন হাঁটু ব্যথার ঝুঁকি
হাঁটু শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জয়েন্ট। হাঁটুতে ব্যথা হলে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকাংশে ব্যাহত হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়। হাঁটু ব্যথা দীর্ঘমেয়াদে হাঁটু অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে যায়। এক্ষেত্রে ভেরাস ডিফরমিটি, ভালগাস ডিফরমিটি বা বিকৃতি আসতে পারে। শুরুতে বাতের চিকিৎসা করা হলে, লিগামেন্ট ইনজুরি, আঘাতজনিত এবং সংক্রমণজনিত হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসা করলে এই ধরনের স্থায়ী বিকৃতিগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া শিশুদের হাঁটু ব্যথার সঠিক চিকিৎসা না করলে শিশুর গ্রোথ বা স্বাভাবিকভাবে লম্বা হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটিও অনেকাংশে ব্যাহত হবে।
Comments