চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ভাঙচুর, আটক ৭

একদল দুষ্কৃতকারী চট্টগ্রাম শহরের ডিসি হিল এলাকায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সজ্জিত ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইড স্টেজের কিছু অংশ ভাঙচুর করে এবং ছিঁড়ে ফেলে।
রোববার রাতে ঘটনার সময় পুলিশ হামলাকারীদের ধাওয়া দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু মানুষ 'ফ্যাসিস্টদের দোসর হুঁশিয়ার!', 'আওয়ামী লীগের দালালরা সাবধান!'—স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই মঞ্চে হামলা চালায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজক 'সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ' বাংলা নববর্ষ উদযাপন সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল মূল মঞ্চে হামলার চেষ্টা করে। তবে তারা ব্যর্থ হয়।'
'মঞ্চের আশেপাশের কিছু ব্যানার ও ফেস্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টারত সাতজনকে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সাতজনকে আটক করে', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, 'আমরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করছি।'
পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও সমমনা সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের ব্যানারে ডিসি হিলের নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
যার ফলে, গত দুই দিন ধরে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এই বিষয়ে রোববার বিকেলে ডিসি অফিসে জাসাসের সঙ্গে একটি বৈঠক হলেও দুই পক্ষ কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ খোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩০-৪০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে "ফ্যাসিস্ট দোসররা হুঁশিয়ার, আওয়ামী লীগের দালালরা সাবধান"—স্লোগান দিতে দিতে, পুলিশের সামনেই এসে মঞ্চ ভাঙচুর করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা এবারের পহেলা বৈশাখের সব কর্মসূচি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে গত দুই দিনে আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা ও নাটকীয়তার সম্মুখীন হয়েছি।'
সুচরিত দাশ খোকন আরও জানান, রোববার বিকেলেই ডিসি অফিস তাদেরকে ২৩টি সংগঠনের তালিকা দেয়, যার মধ্যে আছে বোধন, উদীচী ও প্রমাসহ আরও কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন। এই সংগঠনগুলো যাতে মঞ্চে পরিবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।
'এর কিছুক্ষণ পরেই এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা', যোগ করেন তিনি।
তবে কে বা কারা ভাঙচুর চালিয়েছে তা তিনি স্পষ্টভাবে জানাননি।
এর আগে রোববার সকালে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন মঞ্চ নামের একটি সংগঠন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ও স্মারকলিপি জমা দেয়।
এই কর্মসূচির আয়োজনে নেতৃত্ব দেয় বিএনপি-সমর্থিত সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো।
স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয় যে, 'ফ্যাসিস্ট হাসিনার' ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা সংগঠনগুলোকে বর্ষবরণের এই আয়োজনে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাসাস অভিযোগ করেছে যে, অনুষ্ঠান আয়োজনকারী অধিকাংশ সংগঠন পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা দুই পক্ষকে নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি, কিন্তু কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারিনি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমাদের পক্ষ থেকে মূল অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে।'
ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা ছিল।
প্রায় ৫৫টি সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে নাম নিবন্ধন করেছিল।

আয়োজকরা জানান, ডিসি হিল এলাকায় জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন থাকায় শুরু থেকেই অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতি নিতে জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাসাসের চট্টগ্রাম শাখার সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ শিপনের সংগে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
Comments