অস্ট্রেলিয়ায় সফল উদ্যোক্তা শামীম এবার দেশে বিনিয়োগ করতে চান  

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শামীম। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উদ্যোক্তা মোহাম্মদ শামীম। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় আঠারো বছর আগে নারায়ণগঞ্জের এক যুবক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর কয়েক শ ডলার নিয়ে মেলবোর্নে গিয়েছিলেন। আজ, তিনি অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ১০৮টি 'সাবওয়ে' আউটলেটের মালিক। তিনি মোহাম্মদ শামীম।

এখন তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজ প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক পরিচালকদের তালিকায়।

অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম ফাস্টফুড চেইনগুলোর একটি সাবওয়ে। দেশটিতে এক হাজার ২০০-রও বেশি স্টোর আছে। এটি মেইড-টু-অর্ডার স্যান্ডউইচ, সালাদ ও মোড়কের জন্য পরিচিত।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে যোগ দিতে সম্প্রতি মোহাম্মদ শামীম বাংলাদেশে আসেন। সফরকালে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। প্রথম কাজ করেছিলাম ফাস্টফুডের দোকানে। থালাবাসন ও টেবিল পরিষ্কার করতাম। যতটা সম্ভব টাকা বাঁচিয়েছি।'

শুরুতে তিনি মেলবোর্নের এক শান্ত শহরতলিতে তার প্রথম সাবওয়ে আউটলেট খোলেন। এরপর শুরু হয় দ্রুত উত্থান। তার ব্যবসায় এখন দুই হাজারেরও বেশি কর্মী আছেন। বার্ষিক লেনদেন ১২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

ব্যবসায় সাফল্যের পরও তার কর্মস্থলে বাংলাদেশির সংখ্যা কম বলে তিনি কষ্ট পান।

বলেন, 'মোট কর্মীর মাত্র তিন শতাংশ বাংলাদেশি। অর্থাৎ, ৬০ জন। আমি দেশ থেকে কর্মী নিতে চাই। কিন্তু ভিসা সমস্যা আছে। আবার প্রশিক্ষণের অভাব অনেককে পিছিয়ে দিয়েছে।'

এখন তিনি তার সরবরাহ ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে যুক্ত করার উপায় খুঁজছেন।

প্রতি বছর তিনি মশলা ও মোড়কের জন্য প্রায় ৩০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ করেন। বেশিরভাগই আসে চীন থেকে।

'যদি এই সরবরাহ ব্যবস্থার একটি ছোট অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়, তবে কাজের সুযোগ হতে পারে। রপ্তানি বাড়াতে পারে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরিতেও সহায়তা করতে পারে। বিশ্বব্যাপী ১২ হাজারের বেশি সাবওয়ে আউটলেট আছে। একই রকমের আরও কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান আছে।'

তিনি মনে করেন—খাবারের মান বজায় রাখার মতো মোড়ক, সস, ইউনিফর্ম ও রেস্তোরাঁর অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশ থেকে আনা যেতে পারে।

বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে আমরা পাঁচ থেকে ছয় মার্কিন ডলারে টি-শার্ট তৈরি করি। অস্ট্রেলিয়ায় তা বিক্রি হয় ৩০ মার্কিন ডলারে। এটি কেবল বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার বিষয় নয়, এটি আমাদের উত্পাদন ক্ষমতাকে কতটা অবমূল্যায়ন করা হয় তা উপলব্ধি করার বিষয়ও।'

তবে শুধু কম খরচ দেখেই বিদেশিরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসেন না।

'আমাদের যা নেই তা হলো—দ্রুত, স্বচ্ছ ও দক্ষ ব্যবস্থা। বিশেষ করে, ব্যাংকিং ও লজিস্টিক খাতে এসবের অনেক অভাব।' শামীমের মতে, টাকা পাঠানোর ঝামেলা বড় সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, 'আমি যদি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে ১০ হাজার ডলার পাঠাই, গাড়ি থেকে নামার আগেই তা আমার অ্যাকাউন্টে চলে আসে। কিন্তু যদি বাংলাদেশের ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাই, তাহলে দুই দিন লেগে যায় শুধু ট্রান্সফার ঠিক মতো হয়েছে কিনা তা বুঝতে।'

এটা অনেকের কাছে ছোট বিষয় মনে হতে পারে, কিন্তু উদ্যোক্তাদের কাছে এটা চুক্তি ভাঙার সামিল।

'একজন ব্যবসায়ীর কাছে সময়ই সবকিছু। এক ঘণ্টা দেরি মানে চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার মতো। বাংলাদেশকে আমাদের মতো প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জীবনযাত্রা সহজ করতে হবে।'

শামীমের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের তুলনায় বেশি কিছু। এটি ব্যক্তিগত মিশন। তিনি বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সময় বাবা-মাকে ফেলে এসেছিলাম। ভাই-বোনেরা এখনো দেশে। আমার হৃদয় এখনো সেখানেই আছে।'

তিনি প্রায়ই বাংলাদেশে তার স্বপ্ন কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করতে চান। যেমন—প্যাকেজিং সুবিধা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা বা কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়া।

'কিন্তু যখনই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিই, তখনই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দেখি। অনিশ্চয়তার কারণে আমি আটকে যাই। ভর্তুকি চাই না, চাই সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। সুস্পষ্ট নীতি, দক্ষ ব্যাংকিং, উন্নত লজিস্টিক। এটুকুই।'

দেশে প্যাকেজিং উপকরণ সরবরাহের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কয়েকজন সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হওয়ায় শামীম আশাবাদী। তিনি স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে যৌথ উদ্যোগও খুঁজছেন।

'যদি সঠিক পরিবেশ পাই তবে দেশে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এতে শুধু আমিই লাভবান হবো না, আরও অনেকের জন্য সুযোগ হবে।'

তার বিশ্বাস, এ ধরনের উদ্যোগ শত শত মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে। খাবারের ব্যবসায় বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত বৈশ্বিক সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করতে পারে।

'বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। আমি এখন যাই হই না কেন, শিকড় সেখানেই। এখন সময় এসেছে দেশকে কিছু দেওয়ার। শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে দিতে চাই।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

2h ago