আইসক্রিমের এক স্কুপের দামই ৮ লাখ টাকা, কোথায় পাওয়া যায়?

আইসক্রিম, দামি আইসক্রিম,
ছবি: এলএস

আচ্ছা, কোনো ডেজার্টের দাম কি এতই বেশি হতে পারে যে এর চেয়ে কম খরচে আপনি হয়তো ইউরোপে একবার ঘুরে আসতে পারবেন? জাপানি ব্র্যান্ড সেলাটো এমন একটি রেকর্ড মানের আইসক্রিম ফ্লেভার বাজারে নিয়ে এসেছে, যার মূল্য ঠিক এমনই আকাশছোঁয়া।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও 'ব্যাকুয়া' নামের এই নতুন ফ্লেভারটিকে বিশ্বের সবচাইতে দামি আইসক্রিমের খেতাব দেওয়া হয়েছে। এর দাম শুনলে অবাক হবে যেকেউই। আট লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ জাপানি ইয়েন (প্রায় ছয় হাজার ৬৯৬ মার্কিন ডলার বা আট লাখ সাত হাজার ৫৮ টাকা সমমূল্য) গুনলে পাওয়া যাবে এক সার্ভিং ব্যাকুয়া। শুধু জিভে আনন্দ দেবে না এই আইসক্রিমটি, বরং বিশ্বের সবচাইতে অভিজাত খাবার টেবিলগুলোতে দেখা যাবে ব্যাকুয়াকে।

বিরল, পরিশুদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য উপাদান

ব্যাকুয়ার একদম মাঝখানে রয়েছে ইতালির আলবা থেকে আসা হোয়াইট ট্রাফল, যাকে কিনা গুরমে খাবার-দাবারের খাজানা হিসেবে অনেকসময় 'ডায়মন্ড অব দ্য কিচেন'ও বলা হয়। খুব কম পরিমাণে পাওয়া যাওয়া এই উপাদানটির দাম কেজিপ্রতি ১৫ হাজার ১৯২ মার্কিন ডলার। এর সুরভিত সুগন্ধের সঙ্গে মিশে থাকা মাটির ঘ্রাণ আর ঝাঁঝালো স্বাদ যেন জেলাটোতে মিশিয়ে দেয় অন্য মাত্রার এক স্বাদ।

কিন্তু সেলাটো এখানেই থেমে যায়নি। এই ডেজার্টে রয়েছে ইতালিয় পনিরের রাজা পার্মিজিয়ানো রেজিয়ানো। এর ফলে মিষ্টতার সঙ্গে একটুখানি টকের মিশেল ঘটে। জাপানিদের তৈরি 'সেক' জাতীয় উপাদান থেকে আসা সেক লিস নামের এক ধরনের ক্রিমের ব্যবহার এতে এনে দেয় মখমলি গঠন আর একটু সূক্ষ্ম, টক টক ইউমামি স্বাদ।

বিলাসবহুল এই স্বাদ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পরিবেশনের আগে এতে মিশিয়ে দেওয়া হয় কয়েক ফোঁটা হোয়াইট ট্রাফল অয়েল। এতে করে মিশ্র স্বাদের এই খাবারটি যেন আরও বেশি সুস্বাদু লাগে। কোনো কোনো স্থানে জাঁকজমক ভাবখানা বাড়িয়ে তুলতে আবার এই আইসক্রিমটিকে খুব নাজুক ধরনের ভোজ্য স্বর্ণপত্রিকায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়।

অপেক্ষাও মধুর লাগে এই আইসক্রিমের জন্য

ব্যাকুয়ার জন্ম কিন্তু রাতারাতি ঘটেনি। এর পেছনে সেলাটো খরচ করেছে তাদের দেড় দেড়টি বছর। এতগুলো সময়ের ব্যবধানেই আইসক্রিমটি এর চূড়ান্ত রূপে পৌঁছুতে পেরেছে—তা হোক স্বাদে বা পরিবেশনের নির্যাসে। ব্র্যান্ডটির সঙ্গে এক্ষেত্রে কাজ করেছেন ওসাকায় অবস্থিত ফাইন ডাইনিং ফিউশন রেস্তোরাঁর রিভির শেফ তাদায়োশি ইয়ামাডা। জাপানি আর পাশ্চাত্য কুইজিনের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে নিত্যনতুন স্বাদের জন্ম দেওয়ার ব্যাপারে ইয়ামাডা আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়। তাইতো পূর্ব-পশ্চিমের এই সাহসী ও মিষ্টি যোগাযোগে তাকেই রাখা হয়েছে প্রধান চরিত্রের ভূমিকায়।

ঠিকঠাক স্বাদটা আনতে কিন্তু বহুবার টেস্টিং আর ফাইন টিউনিংয়ের ধাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছে এই ডেজার্টটি। নিচের দিকটায় ক্রিমের গড়ন আর সেইসঙ্গে তীব্র স্বাদের বিভিন্ন উপাদান মেশানো একবারে সম্ভব হয়নি। এটি তৈরি করার গল্প ও স্বাদ—দুটোই ভীষণ সৃষ্টিশীল। তাইতো এক স্কুপ ব্যাকুয়া আইসক্রিম মুখে দিলেই শুধু বোঝা যাবে হরহামেশা খাওয়া আইসক্রিমের সঙ্গে এর মূল ফারাকটা কত বেশি।

ডেজার্টের চেয়েও বেশিকিছু

ব্যাকুয়াকে এত বেশি বিশেষ করে তোলে মূলত এর পরিবেশন। প্রতিটি সার্ভিংয়ের সঙ্গেই দেওয়া হয় কিয়োটোর ফুশিমি জেলার হাতে তৈরি ধাতব চামচ। এই জেলার লোকেরা তাদের শতাব্দী-পুরনো হস্তশিল্পের ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। এই চামচটাই একটি দারুণ সংগ্রাহক দ্রব্য। কেননা এটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে জাপানের বহু মন্দির ও প্রার্থনালয়ের ভবনে ব্যবহৃত শিল্প।

ব্যাকুয়ার স্বাদ ভালোভাবে নিতে চাইলে সেলাটো থেকে একটি রীতি বলে দেওয়া হয়েছে—আইসক্রিমটিকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে নরম করতে হবে, আর নয়তো মাইক্রোওয়েভে ১০-২০ সেকেন্ড হালকা গরম করে নিতে হবে। তার ওপর হোয়াইট ট্রাফল অয়েলটা ফোঁটায় ফোঁটায় ঢেলে দিন। এরপর আস্তে আস্তে সেটি মিশিয়ে নিয়ে সুগন্ধি হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে প্রথম চামচটি মুখে নিন। তবেই পেয়ে যাবেন এর অভূতপূর্ব স্বাদ।

সেলাটোর পরবর্তী আইটেম কী?

ব্যাকুয়া যদিও সেলাটো ব্র্যান্ডের মুকুটে কোহিনূর হয়ে ভাসছে, তবে সেলাটো এখানেই থামছে না। ব্র্যান্ডটি এখন 'স্টারি নাইট' নামে আরেকটি উদ্ভাবন নিয়ে আসছে। এতে রয়েছে ব্ল্যাক ট্রাফল, ডার্ক চকলেট আর ইউজু সাইট্রাসের মিশ্রণের একটি ফ্লেভার। দামটা অবশ্য ব্যাকুয়ার তুলনায় অনেক কম। ১০,০০০ জাপানি ইয়েন (৭২ মার্কিন ডলার) গুনলেই পাওয়া যাবে এক সার্ভিং 'স্টারি নাইটে'র স্বাদ।

ব্যাকুয়া সৃষ্টির মাধ্যমে সেলাটো শুধু আইসক্রিমই তৈরি করেনি, বরং ভোজনরসিকদের জন্য অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্যের সঙ্গে বিলাসবহুল উপাদান আর শৈল্পিক কারিগরির মেলবন্ধন ঘটার কারণে আইসক্রিমটি পেয়েছে বিশেষ এক স্থান। যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, খাবারের শেষ পাতের মিষ্টি কিছু মানেই বিশেষ কিছু—তাদের জন্যই যেন এই আইসক্রিমটি।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

7h ago