রেকর্ড পুঁজিতে রেকর্ড জয় বাংলাদেশের

অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির রেকর্ড সেঞ্চুরি ও শারমিন আক্তার সুপ্তার দায়িত্বশীল ইনিংসে রেকর্ড পুঁজিই পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতেই কাজটা অনেক এগিয়ে যায় টাইগ্রেসদের জন্য। এরপর ঘূর্ণির মায়াজাল বেছান দুই স্পিনার জান্নাতুল ফেরদৌস ও ফাহিমা খাতুন। তাতে একশও করতে পারেনি থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ গড়ে জয়ের নতুন রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে আইসিসি নারী বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৭১ রান করে তারা। জবাবে ২৮.৩ ওভারে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় থাইল্যান্ড।
ওয়ানডে সংস্করণে রানের ব্যবধানে এটাই বাংলাদেশের মেয়েদের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়েছিল জ্যোতিরা- যা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় জয়।
জ্যোতি এদিন নিজের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক (ওয়ানডে) শতক পূর্ণ করেন মাত্র ৭৮ বলে। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ গড়ে এবং বড় ব্যবধানে জয় পায়। নিগারকে ভালো সহায়তা করেন শারমিন আক্তার, যিনি ছিলেন দুটি শতরানের জুটিতে এবং অপরাজিত থাকেন ৯৪ রানে।
এরপর স্পিন যুগল ফাহিমা ও জান্নাতুল বোলিংয়ে বাকি কাজ সেরে ফেলেন। লেগস্পিনার ফাহিমা ও অফস্পিনার জান্নাতুল মিলে থাইল্যান্ডের সব দশটি উইকেট ভাগ করে নেন। দুজনেই পাঁচ উইকেট করে শিকার করেন। জান্নাতুল নিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে খেলতে নেমে প্রথমবার বোলিং করেন, ৭ রানের খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে চমকে দেন, যার মধ্যে প্রথম ওভার ছিল ডাবল উইকেট মেইডেন। অভিজ্ঞ ফাহিমা নিজের ৪৫তম ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট নেন ২১ রান দিয়ে।
ম্যাচের ফলই বলে দেয় বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ এক দিন। যদিও শুরুটা হয় একটি দ্রুত উইকেটের মাধ্যমে। চতুর্থ ওভারে ইশমা তানজিম একটি বাইরের বল খেলতে গিয়ে পেছনে কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ফারজানা হক ও শারমিন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১৪১ বলে ১০৪ রানের জুটি গড়েন। ৭৫ বলে ফিফটি করে পরে এক্সিলারেট করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ফারজানা।
এরপর জ্যোতি নেমে শুরু থেকেই গতি বাড়িয়ে দেন। প্রথম ফিফটি আসে ৪৫ বলে এবং পরবর্তী ৩৩ বলে তিনি শতক পূর্ণ করেন। বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তোলে ৭৭ রান তোলে এবং আগের সর্বোচ্চ ২৫২ রানকে ছাড়িয়ে ২৭১-তে পৌঁছায়। শারমিন ও নিগারের মধ্যে গড়া ১৫২ রানের জুটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় উইকেট তো বটেই সবমিলিয়েই সর্বোচ্চ।
যদিও শেষ ওভারে শারমিন ৯২ রানে ব্যাট করছিলেন এবং স্ট্রাইকে ছিলেন, তিনি সেঞ্চুরির সুযোগ পাননি—মাত্র কিছু সিঙ্গেল নিতে পেরেছেন। থাইল্যান্ডের সাত বোলারের মধ্যে চারজনই প্রতি ওভারে ছয় বা ততোধিক রান দিয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনই ছিলেন স্পিনার।
বাংলাদেশ শুরু করে স্পিন দিয়ে, নাহিদা আক্তার ছিলেন এক প্রান্তে। থাইল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভালোভাবেই শুরু করেছিল, ৮ ওভারে তোলে ৩৮ রান। তবে এরপর আক্রমণে আসেন ফাহিমা এবং প্রথম বলেই সাফল্য পান। তিনি চ্যানিদা সুত্তিরুয়াংকে বোল্ড করেন। এরপর দ্রুত উইকেট হারায় থাইল্যান্ড—কনচরোএঙ্কাই ও বুচাথামকেও ফিরিয়ে দেন ফাহিমা।
এরপর শুরু হয় জান্নাতুলের ঝড়। দ্বিতীয় বলেই মিডল স্টাম্প উপড়ে দেন নাত্তাকান চানথামকে। পরের বলেই ফিরিয়ে দেন ফান্নিতা মায়াকে। রান দেওয়ার আগেই তৃতীয় উইকেট নেন জান্নাতুল, চাইওয়াই স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত তুলে নেন ফাইফার। ফাহিমাও ততোক্ষণে চার উইকেট পেয়েছেন। নিজের অষ্টম ওভারের শেষ বলে কামচমপুকে এলবিডব্লিউ করে পঞ্চম উইকেট তুলে নেন।
Comments