অর্থনীতি চাঙা হওয়ার লক্ষণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছে। যদিও অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা—ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থা অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিতে পারে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে—গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের জিডিপি প্রায় সাড়ে চার শতাংশ বেড়ে আট লাখ ৮৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হয়েছে।

এর আগের প্রান্তিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় দুই শতাংশ। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লক্ষণ দেখা দেয়। শিল্পখাতে জিডিপি আগের প্রান্তিকে দুই দশমিক চার শতাংশ ছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে সাত দশমিক এক শতাংশ।

সেই প্রান্তিকে কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল এক দশমিক তিন শতাংশ। আগের প্রান্তিকে ছিল শূন্য দশমিক আট শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক আট শতাংশ। আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৩৭ বেসিস পয়েন্ট বেশি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চলতি অর্থবছরের জন্য প্রায় চার শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আগে তা ছিল প্রায় তিন দশমিক আট শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি পরিষ্কার যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।'

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আগস্টে বন্যায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

'এই দুই ঘটনায় কৃষি, কলকারখানার উৎপাদন ও পরিষেবা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অক্টোবরের পর থেকে অর্থনৈতিক সংকট কমতে থাকে। কৃষি ও পণ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। এই প্রান্তিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স দুটোই বেড়েছে।'

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে—চলতি প্রান্তিকে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১২ দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য—চলতি প্রান্তিকে রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক আট শতাংশ বেড়ে সাত দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

উৎপাদন প্রবৃদ্ধি সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে রেমিট্যান্সের প্রভাব অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর।

'কৃষি ও পণ্য উৎপাদন ভালো হলে সেবাখাতও উন্নত হয়। আর এতেই সবাই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। অর্থনীতি স্বাভাবিক হয়নি। তবে এটি প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ভালো করেছে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিশটিংগুইশড ফেলো ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্র প্রস্তুতকারী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য আগের দুই প্রান্তিকের তুলনায় ভালো।'

তিনি আরও বলেন, 'রপ্তানি ও রেমিট্যান্স চাঙা হওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি ও মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল। এখন তেমন আতঙ্ক নেই।'

তবে একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় এই গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তার মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণা বড় ঝুঁকির কারণ। যাই হোক না কেন, এতে রপ্তানি প্রভাবিত হবে। উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে নতুন ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

শুল্ক ব্যবস্থার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বদলাতে কার্যকর হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ওই চিঠি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সহায়তা করবে। এখন অনেক কিছু করা দরকার।'

ট্রাম্পের আনা শুল্কযুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী মন্দার ঝুঁকিও আছে।

'সেক্ষেত্রে রপ্তানিতে আরও বেশি প্রভাব পড়বে।'

তবে মোস্তাফিজুর রহমান ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, 'আমদানিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু জিডিপির প্রেক্ষাপটে তা খুব বেশি না। কারণ কয়েক বছর ধরে জিডিপিতে রপ্তানির অংশ কমছে।'

পণ্য উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি প্রভাবিত হবে কারণ এটি মূলত রপ্তানিমুখী।

'তবে রেমিট্যান্স শক্তিশালী হওয়ায় তা ভোক্তা চাহিদার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানির মন্দা কাটিয়ে উঠা যেতে পারে। সামগ্রিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Bulbul elected as new BCB president

Former Bangladesh captain Aminul Islam Bulbul has been elected as the new president of the Bangladesh Cricket Board (BCB) in an emergency board of directors meeting at the BCB headquarters today.

1h ago