আদালতের রায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

বেশ কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কোরিয়ায় অযাচিতভাবে সামরিক আইন জারির দায়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসন ও বরখাস্ত করা হয়। অবশেষে দেশটির সাংবিধানিক আদালতের রায়ে এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছে।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত বছর তড়িঘড়ি করে সামরিক আইন জারি করে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দেন ইউন।
ইউনের পদচ্যুতি আনুষ্ঠানিকতা পাওয়ার ফলে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে।
নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও নির্বাচিত প্রার্থীর অভিষেক না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
ইউনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলছে
বিক্ষোভ উসকে দেওয়ার পৃথক অভিযোগে ৬৪ বছর বয়সী ইউনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম চলছে।
১৫ জানুয়ারি দেশটির প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেপ্তার হন ইউন। তবে পরবর্তীতে মার্চে এক আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করলে তিনি মুক্তি পান।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়ে সংকটের সূত্রপাত ঘটনা ইউন। তিনি দাবি করেন, দেশ থেকে 'রাষ্ট্রবিরোধী' মহলগুলোকে ছেঁটে ফেলার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তারা এই সুবিধার অপব্যবহার করছেন, যা দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করছে।
তবে ছয় ঘণ্টার পর সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন ইউন। পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা ভোট দিয়ে তার এই সিদ্ধান্ত নাকচ করেন। পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পার্লামেন্ট ভবনকে ঘিরে ফেলার উদ্যোগও বানচাল করেন তারা।
পরবর্তীতে ইউন তার অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসে বলেন, তিনি কখনোই সামরিক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পক্ষে ছিলেন না। তিনি পুরো বিষয়টিকে হালকা ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেন। জানান, এই ঘটনার কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই।
ওই ঘটনার পর থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ায় মাসের পর মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে।
আদালতের এই রায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে কী না, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
আদালতের রায়ের বিস্তারিত
আজ শুক্রবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার কথা জানিয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুন হিউং-বে বলেন, 'সকল বিচারপতির সর্বসম্মতিতে আমরা প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে বরখাস্তের সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছি।'
আদালত আরও জানায়, ইউনের সামরিক আইন জারির উদ্যোগ দেশটির সংবিধানের 'লঙ্ঘন'।
রায় ঘোষণার সময় আদালত জানিয়েছে, '(ইউন) শুধু সামরিক আইনের ঘোষণাই দেননি, সঙ্গে এমন কিছু কাজ করেছেন যা সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে জাতীয় সংসদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে বাধা দেওয়ার জন্য সামরিক ও পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা অন্যতম।'
Comments