গত ১৬ বছর যারা নির্যাতিত হয়েছি, তাদের কাছে এটাই স্বাধীনতা: নাহিদ ইসলাম

নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা নিয়ে একটা বিতর্ক শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি যারা গত ১৬ বছর নির্যাতিত হয়েছি, আমাদের কাছে এটাই স্বাধীনতা।'

তিনি বলেন, 'যারা গত ১৫-১৬ বছর নির্যাতিত হয়েছি, নিপীড়িত হয়েছি, গত ৫ আগস্ট আমরা নতুন করে স্বাধীন হয়েছি।'

'আর যাদের ব্যাংক-ব্যালেন্স অক্ষুণ্ণ ছিল, যারা আপস করে বিরোধী রাজনীতি করেছে তাদের কাছে হয়তো এটা স্বাধীনতা মনে হয় না। কারণ তারা সবসময় হয়তো স্বাধীন ছিল, আগের আমলেও ছিল, এখনো আছে। তাদের কাছে প্রথম স্বাধীনতাও গুরুত্বপূর্ণ না, দ্বিতীয় স্বাধীনতাও গুরুত্বপূর্ণ না। তাদের কাছে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ লুটপাটের স্বাধীনতা,' বলেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, 'বিগত আওয়ামী সরকার সবসময় ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। তিনবার ভোট ডাকাতি করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন-নিপীড়ন করে শেখ হাসিনা যে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সেটার ন্যায্যতা উৎপাদন করেছে এর মূল কারিগর ছিল ভারত। ভারতের সহায়তা নিয়ে শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিজমকে এতদিন দীর্ঘায়িত করতে পেরেছিল।'

'ভারতকে খুশি করা একটা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। এটাই শেখ হাসিনা সরকারের মূলনীতি ছিল এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতিগত মর্যাদা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, সাম্য-ন্যায়বিচারের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে,' বলেন তিনি।

নাহিদ বলেন, 'গত ১৬ বছরের নির্যাতিত পরিবারগুলোর সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। কারণ এই ঐক্য-শক্তির মাধ্যমে আমরা আওয়ামী ফ্যাসিজমকে প্রতিহত করেছিলাম। আমরা মনে করি যে জুলাই গণভুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম পররাষ্ট্রনীতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেখানে দেশের জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থই প্রধান হিসেবে বিবেচিত হবে।'

তিনি বলেন, 'ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা এর আগেও স্পষ্ট করেছি যে, সমতা-ন্যায্যতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে আমরা যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, আমরা সেটাকে কন্টিনিউ করতে চাই। কিন্তু অবশ্যই সেটা সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে।'

'আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটাও বলতে চাই যে, ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে এবং এখনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা আমরা শুনতে পাই। সেখানে মুসলিম, দলিত থেকে শুরু করে আরও অনেকে বিজেপি সরকার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। আমরা সেই নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই,' যোগ করেন তিনি।

নাহিদ আরও বলেন, 'শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনো ভারতে অবস্থান করছে। ভারত গণহত্যাকারীদের নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে কোনো ভালো উদাহরণ তৈরি করছে না। বাংলাদেশে বিচার কার্যক্রম আগাচ্ছে এবং বিচার কার্যক্রম 
আগালে কূটনৈতিকভাবে যারা অপরাধী, শেখ হাসিনাসহ তাদের ফেরত চাওয়া হবে। ভারত সরকার তখন কো-অপারেট করবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এবং এর মাধ্যমে বোঝা যাবে ভারত বাংলাদেশের প্রতি কতটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।'

'গত ১৬ বছরে যে বড় বড় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, মোদিবিরোধী হত্যাকাণ্ড ও জুলাই গণভুত্থানের গণহত্যার জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগই দায়ী। এসব ঘটনার বিচার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে,' বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন—এই তিন এজেন্ডা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি রমজানের পরে সারাদেশে কার্যক্রম চালাবে। আমরা মনে করি এই তিন এজেন্ডার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন সম্ভব। আমরা তাই সব রাজনৈতিক দল ও সরকারকে আহ্বান জানাই, বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করে আমরা একটা সমঝোতায় আসতে পারি।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

12h ago