গণপরিবহনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে চালু হলো ‘হেল্প’ অ্যাপ

ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে HELP অ্যাপের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ছবি: স্টার

গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে 'HELP' (হ্যারাসমেন্ট এলিমিনেশন লিটারেসি প্রোগ্রাম) নামে একটি অ্যাপ চালু হয়েছে। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই অ্যাপ তৈরি করেছে।

আজ শনিবার ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে অ্যাপটি উদ্বোধন হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড ও আর্টিকেল নাইনটিনের সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

চলন্ত বাস বা গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে HELP অ্যাপে রিপোর্ট করা যাবে। প্রাথমিকভাবে এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকার বসিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে বাস্তবায়ন করা হবে।

অ্যাপে রিপোর্ট করলে তা ভলান্টিয়ারদের কাছে তথ্য পৌঁছে যাবে। ভুক্তভোগী নিকটস্থ থানার ডিউটি অফিসারের কাছে সরাসরি কল করতে পারবেন। ৯৯৯ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে অ্যাপটি। অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্টগুলো সংরক্ষণ করা হবে, যা পরে আইনি সহায়তার জন্য কাজে লাগবে। নিজের পরিচয় গোপন রেখেও এই অ্যাপে রিপোর্ট করার সুযোগ থাকবে।

অ্যাপটিতে 'এলার্ট' অপশন থাকবে, যা চাপ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ভলান্টিয়ারদের কাছে ভুক্তভোগীর 'রিয়েল টাইম লোকেশন' পৌঁছে যাবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, 'মাগুরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নারীরা যে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তবে এসব ঘটনা যতটুকু মিডিয়ায় আসে, বাস্তবে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ঘটে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা সামাজিক ও পারিবারিক কারণে বিষয়গুলো সামনে আনতে চান না।'

তিনি বলেন, 'গৃহকর্মীদের ওপরও নানা ধরনের নির্যাতন চলে, কিন্তু ৯৫ শতাংশ ঘটনাই রিপোর্ট হয় না।'

অ্যাপের বিষয় তিনি বলেন, 'এই অ্যাপ যদি থানায় রিপোর্ট পাঠাতে পারে, তবে তা ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (এফআইআর) হিসেবে গণ্য হতে পারে। পুলিশ চাইলে বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে এবং তদন্ত শুরু করতে পারবে।'

এই অ্যাপকে কার্যকর করতে প্রয়োজনে ডিএমপি সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

সাজ্জাত আলী বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে মিডিয়াকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। তিনি বলেন, 'যেসব খবর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে, সেগুলো বারবার প্রচার না করাই ভালো।'

বিশেষ অতিথি মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, 'লিঙ্গবৈষম্য ও নারীর প্রতি হয়রানির ঘটনাগুলো তুলে ধরা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। অধিকার কর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও এই কাজটি করছেন, যা প্রশংসনীয়।'

তিনি বলেন, 'ধর্ষণ, সহিংসতা বন্ধ করতে হলে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহিলা পরিষদও এর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'একজন নারী ধর্ষণ হলে পুরো সমাজই ধর্ষিত হয়।'

সলিউশন স্পিনের পরিচালক আবদুল্লাহ আল সালেহ বলেন, 'HELP অ্যাপ ঢাকা শহরের গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি শুধু স্মার্টফোন ব্যবহারকারী নারীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা যৌন হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা চাইতে পারবেন।'

সুইচ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মাইনুল আহসান ফয়সাল বলেন, 'কমিউনিটির মানুষকে সচেতন করতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করা হচ্ছে। এটি এখন পাইলট প্রকল্প হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়ানো হবে।'

HELP প্রকল্পের আওতায় মোহাম্মদপুর থেকে সায়েদাবাদ রুটে চলাচলকারী বাসে QR কোড বসানো হবে, যাতে নারীরা দ্রুত সহায়তা নিতে পারেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হবে, যারা ইমার্জেন্সি সেবার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন।

একে কার্যকর করতে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানানো হয়।

বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন বলেন, সারা দেশে নারীরা যেভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা উদ্বেগজনক। আমরা শুধু কথা কিংবা প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি সমাধানের চেষ্টা করেছি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক এবং সঞ্চালনা করেন বিজেসির নির্বাহী শাহনাজ শারমীন।

Comments

The Daily Star  | English

Consensus commission: Talks snag on women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

2h ago