তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন

ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই এক নারী শিক্ষার্থীকে মারতে উদ্যত ছাত্রলীগ কর্মী | ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ১২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম।

সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

কমিটি উল্লেখ করেছে যে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর চিহ্নিত হামলাকারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে।

কাজী মাহফুজুল বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না। তবে, কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।'

প্রতিবেদনে অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও হামলা জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এছাড়া, কমিটি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করেছে। কমিটির আহ্বায়ক জানান, ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তথ্য অনুসন্ধানে সহিংসতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় আহতদের ওপর হামলা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ক্যাম্পাস পোর্টাল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধান করেছে কমিটি।

কাজী মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, 'নিরপরাধ কারও বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ না আসে তা নিশ্চিত করতে আমরা ভিডিও প্রমাণ যাচাই করার সময় বেশ কয়েকটি ডিজিটাল ফ্যাক্ট চেকিং টুল ব্যবহার করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'সংগৃহীত প্রমাণগুলো এই ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছিল না, বরং পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল।'

তদন্ত কমিটির দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, '২০২৪ সালের ১৫ জুলাই হামলার সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথে আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। এছাড়া জরুরি বিভাগের ভেতরে আহতদের ওপর হামলা করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছে।'

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিটির সদস্যরা জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে কোনো ফুটেজ পাননি। কারণ কোনো হার্ডড্রাইভ পাওয়া যায়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির আহ্বায়ক বলেন, 'হামলার সময় বাসের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে, যৌন নিপীড়নের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবুও, প্রতিবেদনে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে।'

প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই নয়, পুরো দেশের ইতিহাসের জঘন্য ঘটনা।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago