কিডনি রোগীর রোজা, জানুন চিকিৎসকের পরামর্শ

কিডনি রোগীর রোজা
ছবি: সংগৃহীত

কিডনি রোগীদের মধ্যে সবার সবসময় রোজা রাখা সম্ভব হয় না, সেটি নির্ভর করে কিডনিজনিত জটিলতার মাত্রার ওপর। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কারা রোজা রাখতে পারবেন সেই সর্ম্পকে জেনে নিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমানের কাছ থেকে।

কোন কিডনি রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিডনির বিভিন্ন ধরনের রোগী আছে। যেমন- একিউট রেনাল ফেইলিউর, ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর, কিডনির সংক্রমণ, কিডনির পাথর। সুতরাং কিডনিতে কী রোগ আছে তার ওপর নির্ভর করে ওই ব্যক্তি রোজা রাখতে পারবেন কি পারবেন না।

কিডনিতে পাথর আছে এমন রোগীদের রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ কিডনি পাথরের রোগী যেকোনো সময় তার অস্ত্রোপচার করে নিয়ে তারপর যথারীতি রোজা রাখতে পারবেন।

যাদের কিডনিতে ইনফেকশন আছে বা কোনো কারণে সংক্রমণ হয়েছে এসব রোগীর যদি অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ, ৮ ঘণ্টা অন্তর কোনো ওষুধের ডোজ না থাকে এবং ১২ ঘণ্টা অন্তর অথবা সিঙ্গেল ডোজ ওষুধ থাকে তাহলে তিনি রোজা রাখতে পারবেন।

একিউট রেনাল ফেইলিউর যখন কমে যায়, তারপরে রোগী যখন ভালো হয়ে যায় তখন রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই।

ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলায় জোর দেওয়া হয়। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডির ৫টি পর্যায় রয়েছে।

সাধারণত ক্রনিক কিডনি ডিজিজ চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের রোগীদের কিডনির অবস্থা বেশি ভালো থাকে না, যার কারণে যদি রোজা থাকে সেক্ষেত্রে শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্য হয়ে গেলে কিডনি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের রোগীদের রোজা রাখায় নিষেধ করা হয়।

এছাড়া প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে কোনো কোনো রোগী রোজা রাখতে পারেন আবার কেউ কেউ পারেন না। সেক্ষেত্রে রোজা রাখার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

সতর্কতা

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কিডনিতে পাথর, কিডনি ইনফেকশন, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে রোজা রাখতে পারবেন। তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন-

১. কিডনি রোগে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করা হয়। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।

২. বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে।

৩. পটাশিয়াম কম থাকায় আপেল ও পেয়ারা খাওয়া কিডনি রোগীর জন্য ভালো। এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ফল, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

৪. কিডনি রোগীদের যে পরিমাণ পানি পান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সেই পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

৫. যাদের কিডনিজনিত সমস্যায় ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয় তারা ডায়ালাইসিসের সময় ছাড়া অন্য সময় রোজা রাখতে পারবেন, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

৬. যাদের কিডনি ফেইলিউর তাদের ডায়ালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা কিডনি প্রতিস্থাপন এই দুই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের রোগীকে সাধারণত এক বছর নিয়ম মেনে কিছু ওষুধ খেতে হয় সেজন্য এক বছর রোজা রাখায় নিষেধ করা হয়। তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় সে রোজা রাখতে পারবে।

৭. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কোনো কাজ করা যাবে না। ঘাম হয়, পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৮. একজন কিডনি রোগীকে রোজা রাখার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৯. নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় এমন কিডনি রোগীরা সেহেরির সময় কোন ওষুধ খাবেন, ইফতারির পর কোন ওষুধ খাবেন এবং খাবার কেমন হওয়া উচিত তা চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী মেনে চলতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus begins meeting political leaders to discuss pressing issues

Yunus is scheduled to hold another meeting with leaders of different Islamist parties after this

8m ago