রোহিঙ্গাদের খাবারে বরাদ্দ অর্ধেকের বেশি কমাল জাতিসংঘ

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী। ফাইল ছবি: রয়টার্স
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এমন উদ্যোগে কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'তারা (রোহিঙ্গা) এখন যা পাচ্ছে, সেটাই যথেষ্ট নয়। নতুন করে বরাদ্দ কমে যাওয়ার পরিণাম কী হবে তা অকল্পনীয়।'

রেশন কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল চিঠি দিয়েছে ডব্লিউএফপি। আগের দিন মৌখিকভাবে তা মিজানুর রহমানকে জানানো হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত ডব্লিউএফপির মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্তব্য চাওয়া হলেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।

এমন একটি সময়ে ডব্লিউএফপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিল করেছে।

জানুয়ারিতে এ বিষয়ক প্রাথমিক ঘোষণায় জরুরি খাদ্য ত্রাণকে আওতার বাইরে রাখার কথা বলা হয়েছিল।

রয়টার্সকে মিজানুর রহমান জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে বরাদ্দ কমেছে কী না, সেটা ডব্লিউএফপি সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি।

তবে তিনি জানান, রেশন কমে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ এটাই যে শরণার্থীদের সহায়তায় শীর্ষ দাতা দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসও তাৎক্ষণিকভাবে রয়র্টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

মিজানুর রহমানকে পাঠানো চিঠিতে ডব্লিউএফপি উল্লেখ করেছে, তারা রেশনের পরিমাণ সাড়ে ১২ ডলার অব্যাহত রাখার জন্য তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে দাতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ডব্লিউএফপি বলেছে, 'আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, শরণার্থীরা মানবিক ত্রাণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যার ফলে, শরণার্থী পরিবারগুলো তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাবে এবং শিবিরে অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে।

কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করেন।

জাতিসংঘের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালেও মাসিক রেশন কমিয়ে আট ডলার করা হয়েছিল। সে সময় সেখানে ক্ষুধা ও অপুষ্টির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

কয়েক মাসের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারীরা সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য 'যথেষ্ঠ পরিমাণ খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খান' এবং ১৫ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। পরবর্তীতে রেশনের পরিমাণ আবারও আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

কক্সবাজারের একটি মানবিক প্রকল্পে কাজ করেন এনজিওকর্মী জসিম উদ্দীন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রায় ৫০ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।'

'এই তহবিল কমানোর অর্থ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বিপর্যয় নেমে আসা', যোগ করেন তিনি।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এতে কক্সবাজারের বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীও প্রভাবিত হবে।

রোহিঙ্গারা যেসব খাবার পেয়ে থাকেন, তার মধ্যে আছে চাল, ডাল, পাঙ্গাস মাছ ও হাস-মুরগি। চাহিদার বিপরীতে এর পরিমাণ একেবারে ন্যুনতম।

জসিম উদ্দীন জানান, চাকরির সুযোগ না থাকায় অনেক রোহিঙ্গা তরুণ শিবির থেকে কাজের খোঁজে বের হন। কেউ কেউ মাদক ও মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েন।

'আমার আশঙ্কা, খাদ্য সহায়তা সীমিত হয়ে পড়ায় রোহিঙ্গারা শিবির থেকে বের হয়ে এসে স্থানীয়দের জীবিকার উৎসগুলো দখল করার চেষ্টা করবে', বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে সরকারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, বাংলাদেশের উচিত শিগগির আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

6h ago