দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের অবৈধ তহবিল জব্দ করবে বাংলাদেশ, কাজ করছে দুদক

টিউলিপ
টিউলিপ সিদ্দিক। ফাইল ছবি

মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত যুক্তরাজ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের অবৈধ তহবিল জব্দ করবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

গতকাল রোববার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।

দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিষয়ে তদন্তের জন্য তারা 'অনেক দেশের' সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করার প্রায় এক মাস পরও বাংলাদেশে তার খালার স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে যোগসূত্র ও সম্পদ বিষয়ক প্রশ্নের মুখে পড়ছেন টিউলিপ।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লাউরি ম্যাগনাসের তদন্তে জানা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পাওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অসাবধানতাবশত জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। তদন্তের জেরে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ অল্প সময়ের জন্য সিটি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। শেখ  হাসিনার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির লন্ডনের সম্পত্তি ব্যবহার করা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশ্নের পর টিউলিপ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৭৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখন ভারতে আছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সেসময় ১৫০০ মানুষকে হত্যা করা হয়।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ও গোপন কারাগারে বন্দী রাখার অভিযোগ আছে। সেইসঙ্গে তার সরকারের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আছে।

দুদক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি তদন্ত শুরু করেছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি হচ্ছে শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ।

জানা গেছে যে, অর্থপাচারের তদন্ত ১২টি দেশে বিস্তৃত করা হয়েছে।

টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসিনা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের তদন্তকারীরা ১০ থেকে ১২টি দেশের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিলেন।

তবে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য কোন কোন দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

একজন মুখপাত্র জানান, আমাদের দলগুলো বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে। আমরা যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশ থেকে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি।

জানুয়ারির শেষ দিকে, ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কর্মকর্তারা দুদকের তদন্তকারীদের তাদের তদন্তে সহায়তা করার জন্য বেশ কয়েকদিন ঢাকায় কাটিয়েছেন।

গতকাল আখতার হোসেন বলেন, দুদক এখনো টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে।

'আমরা এখনো যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশসহ বিদেশি উৎস থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছি। প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে পাচারকৃত অর্থ কেবল যুক্তরাজ্যেই নয়, বরং বিভিন্ন গন্তব্যে স্থানান্তরিত হয়েছে,' তিনি বলেন।

'আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে পারস্পরিক আইনি সহায়তার অনুরোধ পাঠানোর চেষ্টা করছি। তাই, বিদেশি এবং অন্যান্য উৎস থেকে সহায়তা পাওয়ার পর, আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।'

বাংলাদেশের তদন্তকারীদের সহায়তা করেছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি এবং অক্টোবরে ঢাকায় আসেন তারা।

আখতার হোসেন ইঙ্গিত দেন যে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য তারা আইনি পদক্ষেপ নেবে অথবা কর্তৃপক্ষের সাহায্য চাইবে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

'এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে এবং তদন্ত দল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তহবিল দেশে ফেরত পাঠাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।'

টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। এই বিষয়ে কেউ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এবং তিনি এসব দাবি নাকচ করেছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

8h ago