সাভারে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া, আর কোথায় কী হলো
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/vandalized.jpg)
ঢাকার সাভার উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় প্রতিরোধ করেছে এলাকাবাসী।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও যুগ্ম সম্পাদক ফখরুল আলম সমরের পৈতিক বাড়ি 'রাজ মঞ্জিল' ভাঙচুর করতে আসে বিক্ষুব্ধ জনতা।
রাজীব ও সমর এই বাড়িতে বাস করলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে তারা পলাতক।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/20250206_181448.jpg)
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা বিকেলে সাভারের পাকিজা মোড়ে জড়ো হন এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজ মঞ্জিলের সামনে আসেন।
তারা হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দেন, 'দেশ থেকে সব স্বৈরাচারকে বের করে দেওয়া হবে', 'স্বৈরাচারের আস্তানা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হবে', 'শহীদদের অবদান বৃথা হতে দেওয়া হবে না'।
এরপর তারা রাজ মঞ্জিলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জানলার কাঁচ ভাঙচুর করেন। ভবনের বাইরের একটি অংশে আগুন দিতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা তাদের বাধা দেন।
বিক্ষুব্ধ জনতা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে শতাধিক এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দেন এবং কয়েকজনকে ধরে পিটুনি দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'তারা (রাজীব-সমর) তো বাড়িতে নেই, তাহলে ভাংচুর কেন করতে হবে! এখানে আগুন দিলে আশেপাশের বাড়ি-ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়বে।'
'প্রথমে আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কথা না শোনায় আমরা ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছি। আবারও কেউ এমন কাজ করতে এলে প্রতিহত করবে,' যোগ করেন তিনি।
আনোয়ার আরও বলেন, 'রাজীব-সমরের নামে মামলা আছে, দেশের আইনে তাদের বিচার হবে।'
আরেক বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, 'ওরা (ভাঙচুরকারী) আজকে এই বাড়িতে আগুন দিতে আসছে। এখানে আগুন দিলে এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়বে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না।'
বিক্ষুব্ধ জনতার ভিড়ে ছিলেন মাহিদ হাসান রাফসান। তিনি বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজীবের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। এর মধ্যে রাজীবের আত্মীয়-স্বজন ও পেটোয়া বাহিনীর একটি অংশ নিজেরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের দুই-তিনজন আহত হয়েছেন।'
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/braahmnnbaarriyyaayy_shekh_mujibur_rhmaaner_myuraal_bhaancur1.jpg)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কলেজের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকায় স্থাপিত ম্যুরালটি হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ম্যুরালটি ভাঙচুর করা হয়েছিল।
শিক্ষার্থী বাইজিদুর রহমান সিয়াম বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুজিববাদী কোনো স্থাপনার ঠাঁই হবে না। যত জায়গায় এসব ম্যুরাল রয়েছে বা মুজিববাদের চিহ্ন রয়েছে, সবগুলো একে একে উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের এই উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো।'
কিশোরগঞ্জে জাতীয় চার নেতা ও সাত বীরশ্রেষ্ঠর ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হলো
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় বিন্নাটি মোড় এলাকায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান এবং সাত বীরশ্রেষ্ঠদের ম্যুরাল এস্কাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু হয় ভাঙচুর।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/screenshot_20250206_191237_1.jpg)
প্রত্যক্ষদর্শী কামাল উদ্দিন বলেন, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া সড়কের চাররাস্তা মোড়ের ব্যস্ততম জায়গায় ভাঙচুরের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে বুধবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা শহরের স্টেশন রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেয় এবং পাবলিক টয়লেট ঘোষণা করে।
এছাড়া শহরের খরমপট্টি এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুনেছি। তবে বিন্নাটি মোড়ে ম্যুরাল ভাঙচুরের কথা শুনিনি।'
এদিকে বাজিতপুর উপজেলায় সাবেক চার রাষ্ট্রপতির ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ জনতা ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুর রহমান ও মো. আবদুল হামিদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। বাজিতপুর বাজারে সিনেমা হল মোড়ে ওই তিন নেতার পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/screenshot_20250206_124334_1.jpg)
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েক শ মানুষ ম্যুরালের সামনে অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর করতে শুরু করেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে ভাঙচুর।
বাজিতপুর-নিকলী উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে টানা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন মো. আফজাল হোসেন। তিনি বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ম্যুরালের পাশেই তার মালিকানাধীন একটি মার্কেট রয়েছে। এর আগে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এই মার্কেটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
গতকাল ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেন, আবারও এই মার্কেটে হামলা হতে পারে।
ব্যবসায়ী টিটু মিয়া বলেন, 'এই মার্কেটে আফজাল হোসেনের রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল। হামলা হতে পারে ভেবে আমরা দোকান থেকে পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি।'
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ হোসেন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পঞ্চগড়ে ম্যুরাল ভাঙচুর, ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাঙচুর
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় এক্সাভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের দুটি ম্যুরাল।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/videocapture_20250206-202434_1.jpg)
এছাড়া আটোয়ারী উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ডাংগীরহাট সরকারি কলেজের নামফলক থেকে 'বঙ্গবন্ধু' লেখা অংশটুকু ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এর আগে গত রাতে ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়ায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটোর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
তবে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ ডাক বাংলো চত্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙতে গেলে সেনা সদস্যরা ক্ষুব্ধ যুবকদের বাধা দেয়।
বিএনপির মিছিলের পর এক্সকেভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হলো বায়তুল আমান
আওয়ামী লীগের স্মৃতি বিজড়িত নারায়ণগঞ্জ শহরের 'বায়তুল আমান' ভবনটি এক্সাভেটর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলীর মালিকানাধীন এ ভবনটিতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়৷
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/1738853006641.jpg)
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে শহরের মিশনপাড়া এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির একটি মিছিল বের হয়৷
মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু৷
মিছিলটি শহরের চাষাঢ়ায় বায়তুল আমানের সামনে এসে পৌঁছালে শুরুতে একটি হাতুড়ি দিয়ে ভবনটির দেয়াল ভাঙা শুরু হয়৷ পরে একটি এক্সাভেটর দিয়ে ভবনটি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ভবনটির ভেতরের একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু সাংবাদিকদের বলেন, 'খুনি হাসিনা ও তার ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে৷ শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অসংখ্য গুম-খুন করেছে৷ এই ভবন ভাঙার মধ্য দিয়ে ওসমান বাহিনীর প্রতি মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে৷'
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কয়েকটি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা৷
সূত্র জানিয়েছে, সেখানেও নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির এই দুই নেতা।
মানিকগঞ্জে বঙ্গবন্ধু চত্বর ভাঙচুর
মানিকগঞ্জে বঙ্গবন্ধু চত্বর ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র- জনতা। এসময় বিক্ষুব্ধরা হাতুরি দিয়ে ম্যুরাল ভেঙে ফেলে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/06/img-20250206-wa0075.jpg)
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানিকগঞ্জের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এদেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার স্মৃতি ও তার বাবার প্রতিচ্ছবি এদেশে রয়ে গেছে। আমরা এ দেশে তাদের কোনো স্মৃতি রাখব না। তারই ধারাবাহিকতায় এই চত্বর ভেঙে ফেলা হচ্ছে।'
এ সময় মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল খালেক শুভ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রমজান মাহমুদ, সাইয়েদুর জামান নুর আলভি, আশিকুর রহমানসহ শত শত ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন।
পাবনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
পাবনা সদর উপজেলার শালগাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদের বাড়িতে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ভাঁড়ারা ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে দুই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার রয়েছে। এছাড়া তার নেতৃত্বে হামলায় অনেকে আহত হন।
এই ঘটনায় সাঈদকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা দায়ের হয়। এরপর সাঈদ আত্মগোপনে চলে যান।
এর আগে সাঈদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
Comments