আইন লঙ্ঘনের দায়ে ৬ বিমা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগে ব্যর্থতা, এজেন্টের সঠিক তথ্য না দেওয়া, ভুল বিমা দাবির তথ্য দেওয়া ও ট্যারিফ রেট লঙ্ঘনের অভিযোগে ছয় বিমা প্রতিষ্ঠানকে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
আইডিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিমা খাতে স্বচ্ছতা আনতেই এই জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (পাঁচ লাখ টাকা), ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স (পাঁচ লাখ টাকা), আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স (সাত লাখ টাকা), প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স (১০ লাখ টাকা), রূপালী ইনস্যুরেন্স (৫ লাখ) ও কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স (৫ লাখ)।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় চার বছর মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দিয়ে বীমা আইন-২০১০ লঙ্ঘনের দায়ে গার্ডিয়ান লাইফকে জরিমানা করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ন্যাশনাল লাইফের ২০২৪ সালের ৩ জুন পর্যন্ত ইনস্যুরেনস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (আইআইএমএস) এক লাখ ৩৭ হাজার ২৬৫ এজেন্টের মধ্যে ৯৩ হাজার ৬৯৬ জনের তথ্য দিয়েছে। আইআইএমএস-তে ৪৩ হাজার ১৬১ এজেন্টের বিবরণ জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছে।
এ ছাড়াও, ন্যাশনাল লাইফের ২০২১ ও ২০২২ সালের বিমা দাবি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে প্রতিষ্ঠানটিতে বাতিল হওয়া বিমা দাবির সংখ্যা অনেক বেশি।
যেহেতু বাতিল হওয়া বিমা দাবির সংখ্যা বেশি হলে তা বিমা শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক, তাই ভবিষ্যতে বাতিল হওয়া বিমা দাবির সংখ্যা কমাতে প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনকালে আইডিআরের পরিদর্শক দল দেখতে পায়, তথ্য জমা দেওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পরও ন্যাশনাল লাইফ গ্রাহকের সব বিমা দাবি নিষ্পত্তি করেনি।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ২০২২ সাল থেকে নিষ্পত্তি হওয়া বিমা দাবির সংখ্যা ও ২০২৪ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমাকারীর কাছে পাঠানো অমীমাংসিত অভিযোগের সংখ্যা উল্লেখ করে তালিকা দিতে বলা হয়েছে।
২০২২ সালে আলফা লাইফের ৫৬ লাখ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ৪৬ মৃত্যু সংক্রান্ত দাবি নিষ্পত্তি করে।
তবে বিমাকারীর ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে মৃত্যু সংক্রান্ত দাবির জন্য পরিশোধিত টাকার পরিমাণ ২৭ লাখ টাকা বলা হয়েছে। ডেথ ক্লেইম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ টাকার সঙ্গে বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত টাকার মধ্যে ২৮ লাখ টাকার অসামঞ্জস্যতা দেখা গেছে।
আইডিআরের বার্ষিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় বিমাকারীকে জরিমানা করা হয়েছে।
মেয়াদ পূরণের আগে বিমা দাবি জমা দেওয়ার তালিকা বিশদ পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে জারি করা ১০৬ বিমা দাবি ও ২০২২ সালে জারি করা ৬৭ বিমা দাবির জন্য তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা দিয়েছে। যদিও এই বিমা দাবিগুলোর মেয়াদ এখনো দুই বছর হয়নি।
বীমা আইন-২০১০ অনুসারে বিমা দাবির সারেন্ডার ভ্যালু পেতে অন্তত দুই বছর প্রয়োজন।
ট্যারিফ রেট লঙ্ঘন ও আইআইএমএসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ায় প্রভাতীকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া রূপালী ইনস্যুরেন্সকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
অপরদিকে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য
গার্ডিয়ান লাইফ বিবৃতিতে বলেছে, 'ইদ্রা থেকে এখনো চিঠি পাইনি। প্রয়োজন রিভিউ আবেদন করব।'
বিধিমালা অনুসারে সিইও নিয়োগের জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গার্ডিয়ানের মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি ও উৎকর্ষ সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে এমন যোগ্য মুখ্য নির্বাহী নিয়োগে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
আলফা লাইফের মুখ্য নির্বাহী নূরে আলম সিদ্দিকী অভি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন কোনো প্রভাবশালী তাদের বিমা দাবি মেয়াদপূর্তির আগেই তা জমা দিতে চান, তখন অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আইনের বাইরে গিয়েও এর অনুমোদন দিতে হয়।'
'এমন পরিস্থিতিতে ইদ্রার জরিমানার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আবেদন করব।'
মৃত্যু সংক্রান্ত বিমা দাবির টাকার পরিমাণে বেমিলকে 'গাণিতিক ত্রুটি' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানানো হয়েছে।'
ন্যাশনাল লাইফ এক বিবৃতিতে বলেছে, এজেন্ট সংখ্যার তথ্য নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেটি নিষ্পত্তির জন্য যথাযথ প্রমাণসহ আইডিআরের নিয়ম অনুযায়ী ন্যাশনাল লাইফের পক্ষ থেকে গতকাল ৩ ফেব্রুয়ারি আপিল করা হয়েছে।
আপিল শুনানিকালে জরিমানা মওকুফসহ বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে তারা আশা করছেন।
প্রভাতী ও রূপালীর মুখ্য নিবার্হীকে ফোন দেওয়া হলে তারা ফোন ধরেননি।
আইডিআরের চেয়ারম্যান এম আসলাম আলমকে ফোন দেওয়া হলে তিনিও ফোন ধরেননি।
Comments