শ্বেতী রোগ কেন হয়, চিকিৎসা কী

শ্বেতীর চিকিৎসা
ছবি: সংগৃহীত

শ্বেতী রোগ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক নয়, যার প্রভাব আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। এই রোগ সম্পর্কে জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

শ্বেতী রোগ কী ও কেন হয়

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, শ্বেতী রোগ বা ভিটিলিগো ত্বকের একটি রোগ। ত্বকে মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে তৈরি হয় মেলানিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য ঠিক রাখে। শরীরে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকের রং কালো হয়। আবার মেলানিন অস্বাভাবিক পরিমাণে কমতে থাকলে ত্বকের রং সাদা হয়ে যেতে থাকে।

ত্বকে মেলানিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে শ্বেতী রোগ দেখা দেয়। এর ফলে পুরো শরীর সাদা হয়ে যেতে পারে, আবার সাদা রঙের দাগ হয় ত্বকের বিভিন্ন স্থানে, যেখানে মেলানোসাইট থাকে না। শ্বেতী অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেলানোসাইট কোষ ধ্বংস করে ফেলে এবং মেলানিন তৈরি হয় না। এর ফলে আক্রান্ত স্থান ধবধবে সাদা হয়ে যায়। বংশগত কারণে শ্বেতী হতে পারে। ৩০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটি বংশগতভাবে হয়। তবে শ্বেতী রোগ মাল্টিফ্যাক্টরাল জেনেটিক ডিজঅর্ডার। এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে, সাধারণত ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ধরন ও লক্ষণ

শ্বেতী রোগে ত্বকে সাদা রঙের পিগমেন্টেশন হয়, স্বাভাবিক ত্বকের যে বর্ডার সেটা স্বাভাবিক থাকে কিন্তু হঠাৎ করে মাঝখান থেকে সাদা সাদা প্যাচ বা দাগ হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সাদা দাগের মাঝখানে স্বাভাবিক ত্বকও দেখা যায়। রোগের তীব্রতা, ধরণ ও স্থায়ীত্ব অনুযায়ী ভিটিলিগোর কয়েকটি প্যার্টান আছে। যেমন-

১. লোকাল ভিটিলিগো: শরীরের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে।

২. সেগমেন্টাল ভিটিলিগো: শরীরে কিছু কিছু সেগমন্টে বা শরীরের শুধু এক পাশে হয়।

৩. জেনারালাইজড বা সাধারণ ভিটিলিগো: সারা শরীরে হয়, ত্বকের একাধিক অংশে সাদা ছোপ ছোপ দেখা দেয়।

৪. ইউনিভার্সাল ভিটিলিগো: সম্পূর্ণ শরীর সাদা হয়ে যায়।

৫.  অ্যাক্রোফেসিয়াল ভিটিলিগো: এটি অনেক বেশি দেখা যায়। মুখমণ্ডল এবং হাতের ওপরের অংশে হয়।

৬.  মিউকোসাল ভিটিলিগো- মুখের ভেতরে, ঠোঁট, যৌনাঙ্গের চারপাশে হয়।

শ্বেতী রোগ যেহেতু একটি অটোইমিউন রোগ, এর সঙ্গে আরো কিছু অটোইমিউন রোগ সংশ্লিষ্ট থাকে। যেমন- থাইরয়েডের সমস্যা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, অ্যালোপেশিয়া এরিয়েটা, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া। সাধারণত একটি অটোইমিউন রোগ হলে শরীরে অন্যান্য অটোইমিউন রোগের সমস্যা ও লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই শ্বেতী রোগ হলে আর অন্য কোনো অটোইমিউন রোগ আছে কি না তা শনাক্ত করে সেদিকেও নজর দিতে হবে।

চিকিৎসা

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, শ্বেতী রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। এটি সর্ম্পূণ নিরাময়যোগ্য না হলেও সঠিক চিকিৎসায় অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। তাহলে ফলাফল ভালো পাওয়া যাবে। রোগীর বয়স, রোগের তীব্রতা ও ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয় রোগীকে। দাগের বিস্তার কমানো বা বন্ধ করা এবং রিপিগমেন্টেশন বা ত্বকের রং ফিরিয়ে আনা এই দুইটি বিষয় মাথায় রেখে চিকিৎসা করা হয়।

কিছু ওষুধ ও মলম আছে যেগুলো শ্বেতী আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য দেওয়া হয়। এছাড়া ফটোথেরাপি, লেজার এবং অস্ত্রোপচার করা হয় প্রয়োজন অনুযায়ী।

ত্বকের রং ফিরিয়ে আনা, ছোট দাগ ও প্রাথমিক পর্যায়ের শ্বেতী রোগে স্টেরয়েড জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ মুখে খাওয়ার জন্য এবং আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য দেওয়া হয় রোগীকে।

ফটোথেরাপি চিকিৎসায় ন্যারোব্যান্ড ইউভিএ এবং ন্যারোব্যান্ড ইউভিবি থেরাপি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইউভিবি থেরাপি বেশি কার্যকর। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার থেরাপি দীর্ঘসময় চালিয়ে যেতে হয়। ফটোথেরাপি সারা শরীরেই দেওয়া যায়, মাঝারি থেকে বড় দাগের চিকিৎসায়।

শ্বেতী রোগের চিকিৎসায় এক্সাইমার লেজারও বেশ কার্যকরী, ফটোথেরাপির চেয়ে ভালো কাজ করে। এটি সারা শরীরে দেওয়া যায় না। শরীরের নির্দিষ্ট অংশে, ছোট ও সীমিত আকারের দাগের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়।

এছাড়া অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেও শ্বেতী রোগের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। যেমন- স্কিন গ্রাফটিং।

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, অনেক সময় রোগীকে ত্বকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রসাধনী ব্যবহার করতে দেওয়া হয় শ্বেতী দাগ ঢেকে রাখার জন্য। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ, কৃত্রিম রং ক্রিম বা স্প্রে হিসেবে পাওয়া যায় যেগুলো রোগী ব্যবহার করতে পারেন। এটি সাময়িক সমাধান হলেও রোগীকে মানসিকভাবে সহায়তা করে।

শ্বেতী ছোঁয়াচে কোনো রোগ নয়। তবে সমাজে এ রোগে আক্রান্তদের হেয় করে দেখা হয়। শরীরে রঙের বিকৃতি এবং সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শ্বেতী আক্রান্ত রোগীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্তও থাকেন। তাই এসব রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল থেরাপিও দিতে হবে, কাউন্সিলিং করতে হবে। একইসঙ্গে সমাজে শ্বেতী রোগীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago